প্রদর্শনীর নাম অরণ্যরেখা। ১২ জন শিল্পীর ৬৫টি শিল্পকর্মে উপস্থাপিত হলো দেখা না দেখা সুন্দরবন। প্রদর্শনীটি শুরু হয় ১৬ আগস্ট। এই আয়োজন চিত্রকর্ম প্রদর্শনী, আড্ডা, গান আর সুরে সুরে শেষ হয় ২২ আগস্টে। এই প্রদর্শনীতে শিল্পীদের ভাবনায় সুন্দরবনকে নানাভাবে খুঁজে পাওয়া গেলো। থেকে শেষ দিন পর্যন্ত দর্শকদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। এই দলীয় চিত্র প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া শিল্পীরা হলেন— মামুন হোসাইন, মো. রবিউল ইসলাম, মো. জাহিদ হোসাইন, মনজুর রশীদ, মোরসেনা রহমান রুপা, নার্গিস আক্তার পুনম, শক্তি নোমান, উপমা দাস তৃণা ও জেমরিনা হক, ফারজানা রহমান ববি, ইসরাত জাহান ওকনক আদিত্য।
শিল্পী মামুন হোসাইন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘আমি নাম দিয়েছি ‘প্রাণপ্রকৃতি’। প্রাণ প্রকৃতি—এক থেকে বারো পর্যন্ত আছে। বারোটা চিত্রকর্ম আছে। আমার কাছে এটা একটা নতুন জার্নি। এবার প্রথম এই স্টাইলে কাজ করলাম। এমনিতে বিচ্ছিন্নভাবে ওয়াটার কালারে আলাদাভাবে করা হয়েছে। বলপেন কলমে আমার একটা আলাদা জার্নি আছে। এবার এই দুইটার মিশ্রণে ওয়াটার কালার ওয়াশ দিয়ে তারপরে রং দিয়ে, ভেতরে কিছু ফর্ম বের করে এক ধরণের মজা তৈরি করার চেষ্টা। এটা এইবারই প্রথম করলাম।’’
গ্যালারিতে ঘুরে দেখা গেলো প্রত্যেক শিল্পীই স্ব স্ব চিত্রকর্মে আলাদা বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন। এক একজন এক এক স্টাইলে কাজ করেছেন।
সিগনেচার ওয়ার্ক নিয়ে মামুন হোসাইন বলেন, ‘‘যখন আপনি সিগনেচার ওয়ার্ক-এর কথা বলতেছেন, তার অর্থ আপনি একটি ফর্মের মধ্যে আটকা পড়ছেন। আমি যখন এই ফর্ম ছেড়ে যখন আবার আরেকটা ফর্ম ধরবো তখন মানুষ বলবে—মামুনের এই কাজটিতো আগে দেখিনি। তার অর্থ সিগনেচার ওয়ার্কটা কিন্তু থাকছে না। আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সিগনেচার তৈরি করা এবং ভাঙা। যেমন পিকাসো। তার কত রকমের জার্নি ছিল! উনার ব্লু পিরিয়ড, পিঙ্ক পিরিয়ড—কত রকমের জার্নির মধ্যে দিয়ে গেছেন। একটার সঙ্গে আরেকটার মিল ওইভাবে পাবেন না।’’
অরণ্যরেখার আয়োজক সংগঠনের নাম আদ্যেপান্ত। এই সংগঠনের শিল্পীরা প্রায়ই প্রকৃতি দেখতে যান। মাঠ-ঘাট, বিভিন্ন এলাকা দেখেন। তারপর নিজের স্টাইলে ছবি আঁকেন।
মামুন হোসাইন বলেন, ‘‘এবার আর্ট ক্যাম্প করতে সুন্দরবনে গিয়েছিলাম। তিন দিন ছিলাম। সবাই সুন্দরবনটাকে বেইজ করে ছবি এঁকেছে, শিল্পকর্ম তৈরি করেছে। সুন্দরবন যেহেতু আমাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে জড়িত খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু নানা কারণে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, ধ্বংস করা হচ্ছে। আমাদের একটা মেসেজ হচ্ছে, সুন্দরবনকে বাঁচাও।’’
শিল্পী নার্গিস আক্তার পুনমের চিত্রকর্মে স্থান পেয়েছে সুন্দরবনের ক্যাকটাস আর বাঘ।
নার্গিস আক্তার পুনম-এর একটি চিত্রকর্ম
শিল্পী নার্গিস আক্তার পুনম বলেন, ‘‘ক্যাকটাসের যে কোমলতা এবং কঠোরতা এই দুইয়ের সমন্বয় ঘটানোর চেষ্টা করেছি। আবার বাঘের ভেতরে যে এতো মায়াময়তা, এতো প্রেম, আবার তার এতো হিংস্রতা এই দুইয়ের সঙ্গে আমার কাছে কেমন যেন এক অদ্ভূত কম্বিনেশন মনে হলো। এই দুইটা ভাবনাকে মিলিয়ে আমার মনোভাব প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি।’’
শিল্পীদের চিত্রকর্মে সুন্দরবনের কোমলতা, কঠোরতা উঠে এসেছে। দর্শকরা তাদের পছন্দের চিত্রকর্মটি কিনে নিয়েছেন। আয়োজন শেষ হওয়ার দিনেও বিক্রি হওয়া চিত্রকর্মগুলো গ্যালারিতে শোভা ছড়িয়েছে। নজর আটকে গেলো কয়েকটি চিত্রকর্মে যেগুলোতে জ্বলজ্বল করছিলো লাল টিপ। জানতে পারলাম এগুলো বিক্রি হয়ে গেছে। যখন আয়োজন শেষ হয়ে যাবে, গ্যালারির আলো নিভিয়ে দেওযার সময় হবে, গানের আড্ডায় মিলিয়ে যাবে গানের শেষ সুরের বিন্দু তখন বিক্রি হওয়া চিত্রকর্মগুলো শিল্পীর হাত থেকে চলে যাবে ক্রেতার হাতে।