১৯৭১ সালের ১লা আগস্ট নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ। বিখ্যাত ব্যান্ড দ্য বিটলস-এর প্রধান গিটারিস্ট জর্জ হ্যারিসন এবং পণ্ডিত রবিশঙ্করের নাম এই কনসার্টের সঙ্গে জড়িত। তারা বাংলাদেশের একজন অকৃত্রিম বন্ধু।
এক বন্ধুর দেওয়া রেকর্ডে প্রথমবারের মতো রবিশঙ্করের সেতার শোনেন হ্যারিসন। এর বছরখানেক পর তাদের লন্ডনে দেখা হয়। কিছুদিন পরই রবিশঙ্করের কাছে সেতার শেখা শুরু করেন জর্জ হ্যারিসন। তিন মাসের মাথায় ছুটে যান বম্বেতেও। রবিশঙ্কর হ্যারিসনকে সেতার বাজানো শেখান, বাজানোর ধরন শেখান। জর্জ হ্যারিসন সেতার বাজানো শেখেন তার চেয়েও বেশি শেখান আত্মিক এবং আধ্যাত্মিক শৃঙ্খলা।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পন্ডিত রবিশঙ্কর ছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ায়। তিনি তখন ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ আর্টসে ডিপার্টমেন্ট অব ইন্ডিয়ান মিউজিকের ফ্যাকাল্টি হিসেবে দায়িত্বরত।
নিজ উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কীত বিভিন্ন খবর ও দারিদ্র্যসংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদনের অংশবিশেষ জর্জ হ্যারিসনকে দিয়েছিলেন রবিশঙ্কর। তিনিও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত অবস্থা অনুধাবন করা শুরু করলেন এবং সিদ্ধান্ত নিলেন বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবেন।
জর্জ হ্যারিসন তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘‘ শুরু থেকেই বিটলদের দৃষ্টিভঙ্গিটা এমন ছিল যে যদি কিছু করতে হয় তবে তা বড় করেই করা উচিত এবং সেটা মিলিয়ন ডলারেরই হবে না কেন।’’
এই ভাবনা থেকে ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ অনেক বড় পরিসরে অনুষ্ঠিত হয়। জর্জ হ্যারিসন এই কনসার্টে তার বিখ্যাত গান ‘বাংলাদেশ’ পরিবেশন করেছিলেন। যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছিল।
বিটলস ষাটের দশকে আমেরিকাসহ বিশ্বের নতুন প্রজন্মকে এই দল অনেক কিছুকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার এবং নানা বিষয়ে নতুনভাবে ভাবার পথ দেখিয়েছিল। বিশেষত তরুণ প্রজন্মের চিন্তার জগতে প্রচণ্ড ঝড় তুলেছিলেন এই দলের সদস্যরা। ফলে কনসার্ট-এ শ্রোতাদের উল্লেখযোগ্য সাড়া মিলেছিলো।
জর্জ হ্যারিসন ‘দ্য কোয়ায়েট ওয়ান’ নামেও পরিচিত ছিলেন এবং ব্যান্ডের সঙ্গীত শৈলীতে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রভাব যুক্ত করার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।
বিটলসের হয়ে তার লেখা বিখ্যাত গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘সামথিং’, ‘হিয়ার কামস দ্য সান’ এবং ‘হোয়াইল মাই গিটার জেন্টলি উইপস’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই সঙ্গীতশিল্পী বিটলস ভেঙে যাওয়ার পর তিনি সফল একক কর্মজীবন শুরু করেন। তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘অল থিংস মাস্ট পাস’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং এতে ‘মাই সুইট লর্ড’ এর মতো হিট গান ছিল।
হ্যারিসন ২০০১ সালের ২৯শে নভেম্বর ৬ষ্ট ক্যালিফোর্নিয়ায় মারা যান।