সাতসতেরো

‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ উদযাপন শুরু করেছিলেন যে সম্রাট

থার্টি ফার্স্ট নাইট হলো গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের ৩১শে ডিসেম্বরের শেষ রাত। এই রাতে নতুন বছরের প্রথম প্রহরকে স্বাগত জানানো হয়। শুরুটা হয়েছিলো পাশ্চাত্য খ্রিস্টীয় সংস্কৃতিতে, পরবর্তীতে দেশে দেশে শুরু হয় থার্টি ফার্স্ট উদযাপন।  এই দিবস পালন প্রথম প্রবর্তন করেন জুলিয়াস সিজার। তিনি ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পরে নববর্ষ পালনের ক্ষণটি নির্দিষ্ট করেন। যদিও বর্তমানে এটি বিশ্বজুড়ে একটি বৈশ্বিক উৎসবের রূপ নিয়েছে, অনেকেই পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেন নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে। 

এক নজরে জুলিয়াস সিজারের জীবনী জুলিয়াস সিজার ছিলেন রোমান ইতিহাসের এমন এক চরিত্র- যার ব্যক্তিত্বে প্রতিফলিত হতো ভক্তি ও বিদ্বেষ, শ্রদ্ধা, আতঙ্ক—ও ভালোবাসা।  তিনি ছিলেন এমন একজন মানুষ যাকে উপেক্ষা করা সম্ভব ছিলো না।  পরাজিত শত্রুদের তিনি ক্ষমা করতেন, সুযোগ দিতেন, এমনকি বহু শত্রুকেই পরে নিজের প্রশাসনে জায়গা করে দিতেন। কিন্তু এই উদারতা তাকে নিরাপদ করেনি। বরং অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, ‘‘সিজারের ক্ষমাশীলতাই শেষ পর্যন্ত তার হত্যার পথ প্রশস্ত করেছিল—কারণ যাদের তিনি ক্ষমা করেছিলেন, তাদের মধ্য থেকেই অনেকেই ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল।’’

সিজারের সৈন্যরা তাকে গভীরভাবে ভালোবাসত ও শ্রদ্ধা করত। তিনি শুধু একজন সেনানায়কই ছিলেন না; তিনি ছিলেন সংগঠক, মনস্তত্ত্ববিদ এবং অনুপ্রেরণার উৎস। রাজনীতি ও সামরিক কৌশলে সিজারের প্রতিভা ছিল অসাধারণ। প্রশাসন পরিচালনা, যুদ্ধ পরিকল্পনা, জনসমর্থন আদায় এবং নিজের ভাবমূর্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অনন্য। আধুনিক অর্থে যাকে ‘প্রোপাগান্ডা’ বলা হয়, সিজার তা দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করতেন—নিজের লেখা ও ভাষণের মাধ্যমে তিনি নিজেকেই ইতিহাসের নায়ক হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন।

ইতিহাসবিদরা বলেন, ‘‘সিজারের মানবিকতাই তার রাজনৈতিক বাস্তবতাবোধকে কখনো কখনো দুর্বল করে তুলেছিল।’’

সাহিত্যিক হিসেবেও সিজার ব্যতিক্রমী। তার লেখা Commentaries on the Gallic War এবং Civil War শুধু ঐতিহাসিক দলিলই নয়, বরং ল্যাটিন সাহিত্যের উৎকৃষ্ট নিদর্শন। ভাষা ছিল সংযত, স্পষ্ট ও শক্তিশালী—অতিরঞ্জনহীন, অথচ গভীরভাবে প্রভাবশালী। যদিও এসব রচনার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল, তবুও সাহিত্যগুণে সেগুলো অনন্য।

সবচেয়ে বিস্ময়কর ছিল সিজারের অশেষ কর্মশক্তি। শারীরিক ও মানসিক—উভয় দিক থেকেই তিনি ছিলেন অদম্য। যুদ্ধের ময়দান, প্রশাসনিক সভা, দীর্ঘ সফর ও লেখালেখি—সবকিছু তিনি একসঙ্গে সামলাতে পারতেন। যুদ্ধ চলাকালীনও তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেন।

ব্যক্তিগত জীবনেও তার প্রাণশক্তির প্রকাশ ছিল স্পষ্ট। প্রেমের কারণে তিনি সমালোচিত হয়েছেন, বিশেষ করে মিসরের রানি ক্লিওপেট্রার সঙ্গে তার সম্পর্ক রোমের অভিজাতদের মধ্যে সন্দেহ ও ক্ষোভ তৈরি করেছিল। এই সম্পর্ক রাজনৈতিকভাবেও তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছিল।

সূত্র: ব্রিটানিকা