ইতিহাসের মহানায়ক

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু

এসকে রেজা পারভেজ : শুধু বাংলাদেশি নয়, বিশ্বের সব বাঙালির আবেগ ও ভালোবাসার আরেক নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।  যার এক ডাকে মুক্তিকামী বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তির যুদ্ধে, পেয়েছিলো কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।

সবার প্রিয় সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির মর্যাদা লাভ করেছেন। এই খ্যাতি তিনি পেয়েছেন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বাঙালিদের ভোটে, যার আয়োজন করেছিলো বিবিসি বাংলা।

এই জরিপে তার পেছনে রয়েছেন নোবেল পুরস্কার জয়ী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মতো ব্যক্তিত্ব। জরিপে যিনি দ্বিতীয় হয়েছেন অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তার চেয়ে দ্বিগুনেরও বেশি পয়েন্ট পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।

১৫ বছর আগে ২০০৪ সালে বিবিসি বাংলা আয়োজন করে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি খুঁজে বের করার এই জরিপ। ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি’ শিরোনামে ওই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত বিশ্বের হাজার হাজার শ্রোতা চিঠি, ই-মেইল এবং ফ্যাক্সের মাধ্যমে তাদের মনোনয়ন পাঠায়। বাংলাদেশ ভারতসহ সারা বিশ্বে অবস্থান করা বাঙালিরা অংশগ্রহণ করেন।  জরিপে মোট ১৪০ জনের নাম আসে।  

শ্রোতাদের মতামতের ভিত্তিতে বিবিসি তৈরি করে শীর্ষ ২০ বাঙালির তালিকা। ২৬ মার্চ ২০তম স্থান লাভকারী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নাম প্রথম প্রচারিত হয়। এরপর ১৯ নম্বরে জিয়াউর রহমান, ১৮তম  অতীশ দীপঙ্কর, ১৭তম স্বামী বিবেকানন্দ, ১৬তম ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ১৫তম  বায়ান্নর ভাষা শহীদগণ, ১৪তম  ড. অমর্ত্য সেন, ১৩তম  সত্যজিৎ রায়, ১২তম  লালন শাহ, ১১তম মীর নিসার আলী তীতুমীর, দশম  রাজা রামমোহন রায়, নবম মওলানা ভাসানী, অষ্টম ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, সপ্তম  জগদীশ চন্দ্র বসু, ষষ্ঠ বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত, পঞ্চম সুভাষ চন্দ্র বোস, চতুর্থ আবুল কাশেম ফজলুল হক, তৃতীয় কাজী নজরুল ইসলাম এবং দ্বিতীয় হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম পর্যায়ক্রমে ঘোষণা করা হয়।

১৩ এপ্রিল ২ নম্বরে থাকা রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের নাম প্রচারিত হওয়ার পরই আর বুঝতে বাকি থাকে না বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। বঙ্গবন্ধুর নাম প্রচারের আগে ৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক বজ্রকন্ঠের ভাষণ প্রচার করা হয়- ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেবো এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’

বঙ্গবন্ধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হওয়া বাংলাদেশের জন্য যেমন গর্বের তেমনি আমাদের জন্য বিজয়েরও।   

বিবিসির সেদিনের প্রভাতী অনুষ্ঠানে প্রখ্যাত সাংবাদিক আতাউস সামাদ বলেছিলেন, ‘১৯৭০-এর নির্বাচনে শেখ মুজিব তার নির্বাচনী প্রচারে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিষয়টিকে মূল বক্তব্য হিসেবে তুলে ধরেছিলেন।  উনি সব খানেই ছয় দফার কথা বলতেন এবং ছয় দফা না হলে একটা আঙুল তুলে বলতেন আমার দাবি ‘এই’ অর্থাৎ দেশ স্বাধীন করতে হবে।’

ফলাফল প্রচারের পর পর বঙ্গবন্ধুর দু’কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা জরিপে অংশগ্রহণকারী সব শ্রোতা এবং বিশ্বের সব বাঙালির প্রতি অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

শেখ হাসিনা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বীকৃতি দেয়ার সমগ্র গৌরব বাঙালি জাতির। বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে তার নিজস্ব ভাষা ছিল, কৃষ্টি ছিল, সংস্কৃতি ছিল, ঐতিহ্য ছিল। ছিল না শুধু একটি স্বাধীন রাষ্ট্র।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই বাঙালিকে দিয়েছিলেন জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। এখানেই বঙ্গবন্ধুর স্বার্থকতা। বঙ্গবন্ধু ধারণ করেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ এবং বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্বপ্নকে। বাস্তবায়িত করেছেন তিতুমীর, সূর্যসেন, নেতাজী সুভাষ বসু, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা ভাসানীসহ মুক্তিকামী বাঙালির আকাঙ্ক্ষাকে। তার নেতৃত্বেই পরাধীনতার শিকল ভাঙে বাঙালি জাতি।’

রাইজিংবিডি/ঢাকা/ ৬ জুলাই ২০১৯/রেজা/এনএ