স্বাস্থ্য

৯০ শতাংশ রোগীই চিকিৎসার বাইরে

আরিফ সাওন : বিশ্বে বর্তমানে প্রায় ২৫৭ মিলিয়ন লোক হেপাটাইটিস বি ও প্রায় ৭১ মিলিয়ন লোক হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত। বাংলাদেশে শতকরা ছয়জন হেপাটাইটিস বি এবং ১ শতাংশ সি ভাইরাসে আক্রান্ত। হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসে আক্রান্ত ৯০ শতাংশ রোগীই থাকছে চিকিৎসার বাইরে। এমনটাই জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ২৮ জুলাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বাংলাদেশ গ্যাস্টোএন্টারোলজি সোসাইটি প্রথম থেকেই দিবসটি পালন করে আসছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে ELIMINATE HEPATITIS বা ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে ভাইরাসজনিত লিভার রোগ নির্মূল। বিশেষজ্ঞরা জানান, বর্তমানে গ্লোবাল টার্গেট হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আক্রান্ত ৯০ শতাংশ ও হেপাটাইটিস সি ভাইরাস আক্রান্ত ৮০ শতাংশ রোগীর সঠিক রোগ নির্ণয় করা ও চিকিৎসার আওতার আনা। দিবসটির আগের দিন বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বৈজ্ঞানিক সেমিনার ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্টোএন্টারোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ গ্যাস্টোএন্টারোলজি সোসাইটির সায়েন্টিফিক সেক্রেটারি ডা. চঞ্চল কুমার ঘোষ বলেন, হেপাটাইটিস বলতে লিভারের প্রদাহ বা ইনফ্লাসেশনকে বোঝায়। আমাদের দেশে ভাইরাসজনিত কারণে সাধারণ হেপাটাইটিস হয়। হেপাটাইটিস এ এবং ই সাধারণ খাদ্য ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়। হেপাটাইটিস বি এবং সি সাধারণত রক্তের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বরাত দিয়ে তিনি জানান, বিশ্বে বর্তমানে প্রায় ২৫৭ মিলিয়ন লোক হেপাটাইটিস বি ও প্রায় ৭১ মিলিয়ন লোক হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত। ২০১৫ সালের শেষ নাগাদ হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত লোকদের মধ্যে মাত্র ৯ শতাংশ ও হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত লোকদের মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ লোকের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় হয়েছে। এছাড়া রোগ নির্ণিত রোগীদের মধ্যে মাত্র ৮ শতাংশ হেপাটাইটিস বি এবং মাত্র ৭ শতাংশ হেপাটাইটিস সি রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। অর্থাৎ হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসে আক্রান্ত ৯০ শতাংশ রোগীরই চিকিৎসার বাইরে থাকছে। তিনি বলেন, বর্তমানে গ্লোবাল টার্গেট হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আক্রান্ত ৯০ শতাংশ ও হেপাটাইটিস সি ভাইরাস আক্রান্ত ৮০ শতাংশ রোগীর সঠিক রোগ নির্ণয় করা ও চিকিৎসার আওতার আনা। এই বিশেষজ্ঞ বলেন, বাংলাদেশে হেপাটাইটিস এ, বি, সি এবং ই-ভাইরাসজনিত লিভার রোগের প্রকোপ অত্যন্ত বেশি। হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের জন্য দায়ী। বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ছয়জন হেপাটাইসিস বি ভাইরাস ও শতকরা ০.৯ ভাগ মানুষ বা প্রায় ১ শতাংশ মানুষ হেপাটাইটিস সি ভাইরাস আক্রান্ত। বাংলাদেশ গ্যাস্টোএন্টারোলজি সোসাইটির সেক্রেটারি জেনারেল ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ গ্যাস্টোএন্টারোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ বলেন, ঢাকাসহ সমস্ত বাংলাদেশে বিভিন্ন লিভারজনিত রোগের চিকিৎসা গ্যাস্টোএন্টারোলজিস্ট ও হেপাটোলজিস্টরা দিয়ে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত ২০০ জনের মতো গ্যাস্টোএন্টারোলজি বিশেষজ্ঞ সমস্ত বাংলাদেশে হেপাটাইটিস ও হেপাটাইটিসজনিত বিভিন্ন জটিলতার চিকিৎসা নিরলসভাবে দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য সচেতনতা, বিশুদ্ধ খাবার পানীয়, ডিজপোজেবল সিরিঞ্জ ব্যবহার, নিরাপদ রক্ত ব্যবহার ও হেপাটাইটিস এ এবং বি ভাইরাসের ভ্যাকসিন ব্যবহারের মাধ্যমে এ রোগ অধিকার ক্ষেত্রে প্রতিরোধ করা যায়। দিনটি উপলক্ষে বাংলাদেশ গ্যাস্টোএন্টারোলজি সোসাইটি বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ঢাকাসহ বাংলাদেশের সব মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে দিনের তাৎপর্য তুলে ধরে পোস্টার প্রদর্শন। ২৮ জুলাই ইলেকট্রনিক মিডিয়া তথা টিভি চ্যানেলে দিনটি উপলক্ষে আলোচনা ও টকশো, জাতীয় দৈনিকে দিনটি উপলক্ষে বিশেষ সংবাদ প্রচার। এছাড়া ২৯ জুলাই সকাল ৯টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বর্ণাঢ্য র‌্যালির আয়োজন করা হয়েছে। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ জুলাই ২০১৭/সাওন/মুশফিক