স্বাস্থ্য

রোহিঙ্গা শিশুদের ডিপথেরিয়ার টিকাদান শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক : রোহিঙ্গা শিশুদেরকে ডিপথেরিয়ার হাত থেকে বাঁচাতে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে বাংলাদেশ। ইউনিসেফ বাংলাদেশের কক্সবাজার শাখা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জিএভিআইর (দি ভ্যাক্সিন এলায়েন্স) সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার আজ মঙ্গলবার ৬ সপ্তাহ থেকে ৬ বছর বয়স পর্যন্ত সকল রোহিঙ্গা শিশুর মাঝে ডিপথেরিয়া ও অন্যান্য প্রতিরোধযোগ্য রোগের বিস্তার ঠেকাতে মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন ১২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে টিকা অভিযান শুরু করেছে। বর্ধিত এই টিকা কার্যক্রমের আওতায় কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার মোট ২ লাখ ৫৫ হাজার শিশুকে টিকা দেওয়া হবে। অন্যদিকে সরকার ও স্বাস্থ্য খাতের অন্যান্য অংশীদাররা ডিপথেরিয়ার চিকিৎসা ও প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সহায়তা অব্যাহত রাখবে।   ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি এডুয়ার্ড বেগবেদার বলেন, ডিপথেরিয়া রোহিঙ্গাদের মতো সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে থাকা জনগোষ্ঠীর মাঝেই বেশি দেখা দেয়। বিশেষ করে যাদের নিয়মিত টিকা দেওয়া থাকে না। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শিশুরা যে চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, এই রোগের বিস্তার সেটারই ইঙ্গিত করছে। এই পরিস্থিতিতে প্রাণঘাতী এই রোগের হাত থেকে তাদের রক্ষা করতে অবিলম্বে উদ্যোগ নিতে হবে এবং টিকাদান কর্মসূচি এক্ষেত্রে একটি কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা। জাতিসংঘের আর্লি ওয়ার্নিং অ্যান্ড রেসপন্স (ইডব্লিউএআরএস) ও মেডিসিনস স্যা ফ্রন্টিয়ার্সের (এমএসএফ ) সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে ক্যাম্প ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সম্ভাব্য ৭২২ জন ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে এবং তাদের মধ্যে নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ রোগের বিস্তার রোধে যা কিছু করা প্রয়োজন, বাংলাদেশ সরকার তার সবই করবে। এর বিস্তার প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এবং নিয়মিতভাবে বিপন্ন জনগোষ্ঠীর কাছে অত্যাবশ্যকীয়ও স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সরকারকে সহায়তা করার জন্য আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ ও স্বাস্থ্য খাতের অন্যান্য সহযোগীদের কাছে কৃতজ্ঞ। টিকা কর্মসূচিতে শিশুদেরকে পেন্টাভ্যালেন্ট টিকা দেওয়া হবে। যা তাদের ডিপথেরিয়া, পারটুসিস, টিটেনাস, হেমোফিলিস ইনফ্লুয়েঞ্জা ও হেপাটাইটিস-বি থেকে রক্ষা করবে। এছাড়া তাদের নিউমোকোকাল কনজুগেট ভ্যাকসিন (পিসিভি) এবং মুখে খাওয়ানো পোলিও টিকাও দেওয়া হবে। এই কার্যক্রমে সহায়তা করার জন্য দি সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া ৩ লাখ পেন্টাভ্যালেন্ট টিকা বিনামূল্যে সরবরাহ করেছে।    আগামী সপ্তাহে ৭ থেকে ১৫ বছর বয়সী সব রোহিঙ্গা শিশুকে ও ১০ হাজার স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন কর্মীদের তিন দফায় টিডি (টিটেনাস ডিপথেরিয়া) দেওয়া হবে। এই লক্ষে ৯ লাখ ডোজ টিডি টিকা আজ দেশে এসে পৌঁছাবে।     বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি নবরত্নসামি প্যারানিয়েথারান বলেন, ডিপথেরিয়ার বিস্তার ঠেকাতে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি, যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে না পারে। এই টিকা অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে থাকা প্রতিটি রোহিঙ্গা শিশুকে রোগ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করবে। টিকা কার্যক্রমের বাইরেও আমরা ডিপথেরিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে ও প্রয়োজনীয় ক্লিনিকাল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে, তাদের যোগাযোগের ঠিকানা খুঁজে বের করতে এবং পর্যাপ্ত ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যকর্মীদের সাহায্য করছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডিপথেরিয়া আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ২ হাজার ডোজ ডিপথেরিয়া অ্যান্টি-টক্সিন আনছে। এর মধ্যে প্রায় ৩৪৫ ডোজ দিল্লি থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হাতে বহন করে নিয়ে এসেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ স্থানীয় কমিউনিটির সঙ্গেও কাজ করে যাচ্ছে, যাতে স্থানীয় জনগণ ডিপথেরিয়ার বিপদ সংকেতগুলো শনাক্ত করতে পারে ও দ্রুততম সময়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে পারে।      প্রসঙ্গত, ডিপথেরিয়া এক ধরনের ছোঁয়াচে রোগ। এটি প্রধানত কাশি ও হাঁচির মধ্যে দিয়ে ছড়ায়। জনবহুল এলাকায়, পর্যাপ্ত হাইজিনের অভাবে ও টিকাপ্রাপ্তির অভাবেই মূলত এ রোগ ছড়ায়। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ ডিসেম্বর ২০১৭/হাসান/রফিক