স্বাস্থ্য

অর্ধেক ডায়ালাইসিস মেশিন বিকল

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা : খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের কিডনি রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিস মেশিনের পঞ্চাশ শতাংশই বিকল হয়ে পড়ে আছে। ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্ছিত হচ্ছেন রোগীরা। হাসপাতালের ৩২টি ডায়ালাইসিস মেশিনের মধ্যে বর্তমানে ১৬টিই অকেজো রয়েছে। বেড সংখ্যা, জনবল ও চিকিৎসক সংকট তো রয়েছে। হাসপাতালের সূত্র জানান, কিডনি (নেফ্রোলজী) বিভাগে ২০১৬ সাল থেকে চলতি বছরের ৭ মার্চ পর্যন্ত অন্তঃবিভাগে রোগীর সংখ্যা ৮৬৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫০৫ এবং নারী ৩৬৩ জন। এ সময়ের মধ্যে মারা গেছে ৪৬ জন। এ বিভাগে বর্তমানে ছয়টি কেবিন, ১০টি সাধারণ বেড ও নয়টি পেইন বেড রয়েছে। ২০১০ সাল থেকে প্রাথমিকভাবে ৪-৬টি মেশিন দিয়ে কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৬৬০ জন কিডনি রোগীর সিরিয়ালের মধ্যে ৫৫৩ জনকে ডায়ালাইসিস করা হচ্ছে। বাকি ১০৭ জনকে এখনো কল করা হয়নি। ডায়ালাইসিস মেশিন ও বেড সংখ্যা কম থাকায় বাকিরা  সেবা থেকে বঞ্ছিত হচ্ছেন। একজন রোগী ২০ হাজার টাকায় ৬ মাস ডায়ালাইসিস করাতে পারেন। একজন রোগীকে প্রতি সপ্তাহ দুইবার ডায়ালাইসিস করানো হয়। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতালে কিডনি রোগীদের সকাল, দুপুর ও রাতে তিন শিফটে ডায়ালাইসিস করা হয়। একটি ডায়ালাইসিসে ৪-৬ ঘণ্টা সময় লাগে। হাসপাতালে ডায়ালাইসিস মেশিন আছে ৩২টি। এর মধ্যে ১৬টি দীর্ঘ দিন ধরে অকেজো। এখানে হেমোডায়ালাইসিস নামে একটি ইউনিট রয়েছে। ওই ইউনিটে শুধু ‘সি ভাইরাসে’ আক্রান্ত ব্যক্তিদের ডায়ালাইসিস করানো হয়। এ ইউনিটে বেড সংখ্যা মাত্র চারটি। নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. এনামুল কবির বলেন, রোগীর তুলনায় হাসপাতালে ডায়ালাইসিস মেশিন ও বেড সংখ্যা কম। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঢাকার সিএমএইচ থেকে দুটি নতুন ডায়ালাইসিস মেশিন দেওয়া হয়েছে। অন্য জায়গা থেকে আরো পাঁচটি ডায়ালাইসিস মেশিন দেওয়া হয়েছে। এই পাঁচটি মেশিন পুরাতন হওয়ায় সেট করার পর দেখা গেছে সেগুলো অকেজো। তিনি বলেন, অবহেলা, অসচেতনতা, রোগ লুকিয়ে রাখার প্রবণতাসহ নানা কারণে চিকিৎসার বাইরে থেকে যাচ্ছে কিডনি রোগে আক্রান্ত অধিকাংশ নারী। সচেতন হলে এই রোগ থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তিনি এই হাসপাতালে ডায়ালাইসিস মেশিন ও বেড সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি জানান। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, কিডনি সম্পূর্ণ অকেজো হওয়ার পর শরীরের ভেতরে জমে থাকা বর্জ্য (ইউরিয়া, ক্রিয়েটিমিন, পটাশিয়াম) পরিশোধিত করার নাম ডায়ালাইসিস। ডায়ালাইসিস সাধারণত দুই প্রকারের হয়। পেটের বা পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস এবং হেমোডায়ালাইসিস বা মেশিনের সাহায্যে রক্তকে পরিশোধিত করা। আবু নাসের হাসপাতালে কিডনি রোগীদের হেমোডায়ালাইসিস করানো হয়। কিডনি রোগের এই চিকিৎসা ব্যয়বহুল। যে কারণে সবার পক্ষে এই রোগের পুরোপুরি চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয় না। রোগীদের বড় অংশ কিছু দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর খরচের কারণে আর চিকিৎসা নিতে পারেন না। স্বজনদের সামনে বিনাচিকিৎসায় মৃত্যুমুখে পতিত হন। ইয়াসিন আলীর দুটি কিডনিই নষ্ট। ঝিনাইদহের কোট চাঁদপুর এলাকার বাসিন্দা। ২০০৪ সালে তার কিডনির সমস্যা দেখা দেয়। কিডনি সচল রাখতে ২০১০ সাল থেকে তিনি ডায়ালাইসিস শুরু করেন। হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালীন তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ২০ হাজার টাকা জমা দিয়ে ৬ মাসে প্রতি সপ্তাহে দুই দিন ডায়ালাইসিস করার সুযোগ পাচ্ছেন। তিনি রোববার ও বুধবার এসে ডায়ালাইসিস করান। হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বিধান চন্দ্র গোস্বামী বলেন, প্রতিদিন ৬০ জন রোগীকে ডায়ালাইসিস করা হচ্ছে। রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেই তুলনায় হাসপাতালে বেড ও ডায়ালাইসিস মেশিনের সংখ্যা কম। বেড সংখ্যা ও ডায়ালাইসিস মেশিন বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এই রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় সরকারি এই হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে। রাইজিংবিডি/খুলনা/১৫ মার্চ ২০১৮/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/বকুল