স্বাস্থ্য

বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস আজ

শাহ মতিন টিপু: `ম্যালেরিয়া’ বিশ্বের ১০০টি দেশে এখনো বড় ধরনের স্বাস্থ্যসমস্যা। যার শিকার প্রায় পৃথিবীর ১৬০ কোটি মানুষ। বাংলাদেশও এ ঝুঁকির বাইরে নয়। তবে এদের বেশির ভাগই শিশু। বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস আজ। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য- ‘আমিই করবো ম্যালেরিয়া নির্মূল’। দিবসটি প্রথম পালন করা হয় আফ্রিকা ম্যালেরিয়া দিবস হিসাবে, ২০০১ সালে। এর পর ২০০৭ সালে ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলির ৬০তম অধিবেশনে এই দিবসটির প্রস্তাবনা করা হয়। এর পর থেকে প্রতি বছর ২৫ এপ্রিল বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে। নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচী। এ উপলক্ষে আজ বেলা ১১টায় রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন। দিবসটি উপলক্ষে দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিশেষ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। উইকিপিডিয়ায় প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী: ম্যালেরিয়া শব্দের অর্থ দূষিত বাতাস। ম্যালেরিয়া (Malaria) হল মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীদের একটি মশা-বাহিত সংক্রামক রোগ যার মূলে রয়েছে প্লাজমোডিয়াম গোত্রের প্রোটিস্টা (এক ধরনের অণুজীব) । ম‍্যালেরিয়া শব্দটি সর্বপ্রথম ব‍্যবহার করেন Torti (১৭৫৩) । ইতালিয় শব্দ Mal (অর্থ-দূষিত) ও aria (অর্থ-বায়ু) হতে Malaria শব্দটি এসেছে। তখন মানুষ মনে করতো দূষিত বায়ু সেবনে এ রোগ হয়। ১৮৮০ সাল নাগাদ চার্লস ল্যাভেরন লোহিত রক্ত কণিকা থেকে ম্যালেরিয়ার কারণ হিসেবে একটিমাত্র কোষবিশিষ্ট পরজীবী প্রোটোজোয়াকে চিহ্নিত করেন। ফলে শত বছর ধরে চলা দূষিত বায়ু সেবনের ফলে রোগ সৃষ্টির ভুল ধারণার অবসান ঘটে। ১৮৯৭ সালে ভারতে কর্মরত ব্রিটিশ ডাক্তার স‍্যার রোনাল্ড রস প্রমান করেন যে Anopheles (অ্যানোফিলিস) মশা এই রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে। এ যুগান্তকারী আবিষ্কারের কারণে তাকে ১৯০২ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। এটি একটি সংক্রমিত স্ত্রী মশার (আনোফেলিস মশা) কামড়ের সাথে শুরু হয়, যা তার লালার মাধ্যমে প্রোটিস্টর সংবহন তন্ত্রের মধ্যে প্রবেশ করে এবং শেষে যকৃতে পৌছায়, যেখানে তারা পরিপক্ক হয় এবং বংশবৃদ্ধি করে। ম্যালেরিয়ার সাধারণ রোগের লক্ষণসমূহ হল জ্বর এবং মাথা ব্যাথা, যা খুব গুরুতর ক্ষেত্রে কোমা বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে দক্ষিণ এবং উত্তর-পূর্ব সীমান্তবর্তী ১৩টি জেলার ৭১টি উপজেলায় ম্যালেরিয়া রোগের মারাত্মক প্রদুর্ভাব রয়েছে। এর মধ্যে পার্বত্য রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি ম্যালেরিয়াপ্রবণ এবং কক্সবাজার মধ্য ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। তবে আগের তুলনায় ম্যালেরিয়ার প্রভাব অনেক কমেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির তথ্য মতে, দেশের মোট ম্যালেরিয়া আক্রান্তের ৯৩ শতাংশই তিন পার্বত্য জেলায়। ২০১৭ সালের ম্যালেরিয়া রোগীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৮৫ শতাংশ রোগীই ফ্যালসিপেরাম জীবাণুঘটিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ এক কথিকায় লেখেন- ‘নির্দিষ্ট সময় পরপর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা এই রোগের প্রধান লক্ষণ। জ্বর সাধারণত ১০৫-১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। তবে নিয়মিত ও নির্দিষ্ট বিরতিতে জ্বর আসা-যাওয়া করে যেমন- একদিন পর পর জ্বর, তা তিন চার ঘণ্টা দীর্ঘ হওয়া এবং এরপর ঘাম দিয়ে জ্বর কমে যায়। জ্বর ছেড়ে গেলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়েও কমে যেতে পারে। এ ছাড়াও মাঝারি থেকে তীব্র কাঁপুনি বা শীত শীত অনুভব, গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা, মাথাব্যথা, অনিদ্রা, খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া বা ক্ষুধামন্দা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বমিবমি ভাব অথবা বমি, হজমে গোলযোগ, অত্যধিক ঘাম হওয়া, খিঁচুনি, পিপাসা লাগা, ক্লান্তি বা অবসাদ অনুভব করা, মাংসপেশি, তলপেটে ব্যথা অনুভব, প্লীহা ও যকৃত বড় হয়ে যাওয়াসহ লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস হওয়ার কারণে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। ম্যালেরিয়া রোগের জটিলতম ধরন হলো ‘ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া’। সাধারণ ম্যালেরিয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের জটিলতা যেমন রক্তশূন্যতা, কিডনি বৈকল্য, শ্বাসকষ্ট হওয়া, জন্ডিস, খিঁচুনি, রক্তে গ্লুকোজ কমে যাওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায়। জরুরি চিকিত্সা না পেলে এসব রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে, এমন কি মৃত্যুও হতে পারে।’ ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের জন্য এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো টিকা আবিষ্কৃত হয়নি। তবে এ রোগ সম্পূর্ণ প্রতিকার ও প্রতিরোধযোগ্য। মশাবাহিত রোগ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হলে সচেতনতা অবলম্বন প্রয়োজন। মশার কামড় থেকে দূরে থাকাই এ রোগ প্রতিরোধের উপায়। এজন্য কিছু করণীয় রয়েছে। যেমন- দিনে বা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি বা কয়েল ব্যবহার করা। দরজা-জানালায় মশক নিরোধক জাল, প্রতিরোধক ক্রিম, স্প্রে ব্যবহার করা। ঘরের আশপাশে কোথাও যেন পানি জমে মশা বংশবিস্তার না করতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখা বা স্থির জলাধার, জলাবদ্ধ এলাকা নিয়মিত পরিষ্কার করা।  জমা পানিতে মশা ডিম পাড়ে বেশি। এসব স্থানে কীটনাশক বা কেরোসিন ছিটিয়ে দেওয়া। ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকায় বেড়াতে গেলে, আগে থেকেই চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়া বা ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ওষুধ সঙ্গে রাখা জরুরী। রাইজিংবিডি/ ঢাকা/২৫ এপ্রিল ২০১৯/টিপু