স্বাস্থ্য

বিশুদ্ধ পানি

পানি বেঁচে থাকার অন্যতম উপাদান। মানবশরীর টিকে থাকার জন্য যেমন অক্সিজেনের (ও২) প্রয়োজন ঠিক তার পরই দরকার হয় পানির। আমাদের শরীরের প্রায় ৬০ থেকে ৭০% ভাগই হচ্ছে পানি, যা শরীরে একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। তাই পানি ছাড়া সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকা অসম্ভব। আর এ গরমে ঘামের সাথে শরীর থেকে প্রচুর পানি বের হয়ে যায় বলে আমাদের অতিরিক্ত পানির প্রয়োজন হয়। কার কত পানি চাইএকজন মানুষের সুস্থ থাকতে খাদ্যের ৬টি উপাদানের মধ্যে অন্যতম পানি। পানির নিজস্ব কোনো ক্যালরি ভ্যালু নেই। কিন্তু, সে নিজেই একটি খাদ্য উপাদান হিসাবে কাজ করে। শরীরে শক্তির যোগান দেয় ক্যালরি। আর প্রতিটি ক্যালরির বিপরীতে দরকার পানির। তাই দিনে ২-৩ লিটার পানি পান করতেই হবে। আর এ গরমে তো এর বিকল্প নেই। তবে নারী-পুরুষভেদে, রোগ,ঋত–ভেদে পানির চাহিদা ভিন্ন হয়ে থাকে। এছাড়া, যেসব নারীরা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান কিংবা কঠোর পরিশ্রম করেন, তাদের পানির চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী হয়ে থাক্ েতাই তাদের পানির পাশাপাশি তরল জাতীয় খাবারও খেতে হবে। আবহাওয়া ও কায়িক শ্রমের মাত্রা অনুযায়ী পানি পানের চাহিদা বাড়ে। আমরা দিনে যা তরল খাবার খাই, তা থেকেও গড়ে কিছু পানি পেয়ে যাই। বাকি চাহিদা মেটাতে হয় বিশুদ্ধ তরল পানি দিয়েই।  নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে সামান্য বেশি পান করলে কোনো খারাপ প্রভাব পড়বে না। তবে যারা বাজি ধরে গ্লাসের পর গ্লাস পানি গিলতে থাকেন তাদের শরীরে পানির তীব্র ও দীর্ঘ মেয়াদী সমস্যা দেখা দেবেই।   এ গরমে পানির ভূমিকা

শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দিয়ে সুস্থ রাখে কোষকে। গরমে অনেকেরই খাবার হজম সমস্যা দেখা দেয়। এ সমস্যা দূর করতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত। ফুসফুসের কর্মকান্ড স্বাভাবিক রাখতে পানির ভূমিকা রয়েছে। দেহের বর্জ্যপদার্থ দূর করে পানি। তীব্র গরমে আমরা ত্বক সমস্যাই ভুগে থাকি কমবেশি সবাই। ব্রণের চিকিৎসায় প্রায়ই বেশি করে পানি পানের পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। ত্বককে স্বাস্থ্যকর সজীব করে বয়স ধরে রাখে পানি। দেহের রোগ-প্রতিরোধক হিসেবে পানি কাজ করে। রক্তপ্রবাহ ঠিক রাখে। ঘাম তৈরি করে দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। পানি খেলে ওজনটাও নিয়ন্ত্রণে থাকে। মূত্রনালী বেঁচে যায় সংক্রমণের হাত থেকে। অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় থাকে। পানির অভাবে যা হতে পারে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেওয়ার মানেই হলো যাবতীয় শারীরিক কর্মকান্ড চূড়ান্ত—ভাবে বাধাগ্রস্ত। কোনো কোনো মানুষ খাবার ছাড়া কয়েক দিন বেঁচে থাকতে পারলেও, পানি ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব। শরীরে পানির সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে সবার আগে বিকল্প হিসেবে চাপ পড়ে রক্তের ওপর। এতে করে ছোট ছোট রক্তনালী গুলো বন্ধ হয়ে যায়। রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যায়। এরপর জমাট বাঁধতে থাকে রক্ত। এরপরই আঘাত আসে হৃৎপিন্ড ও কিডনিতে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কাজ করতে পারে না। এছাড়া, পানি যেসব রোগের হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখে, পানিশূন্যতায় সেগুলো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।

পানি ও অন্যান্য তরলের মধ্যে পার্থক্য :বিশুদ্ধ পানির সাথে অন্যান্য তরলের (পানীয়) মধ্যে যথেষ্ঠ পার্থক্য রয়েছে। যেমন: ফলের রস, কোমল পানীয়, কফি, চা ইত্যাদি।আমরা বিশুদ্ধ পানি ছাড়া অন্যান্য তরল পানীয় পান করে থাকি। তরল পানীয়তে যদিও পানির উপস্থিতি থাকে তারপরও এগুলো আরও অন্যান্য উপাদানও বহন করে থাকে ,যা কোন কোন ক্ষেত্রে শরীরের জন্য ক্ষতিকরও হয়ে থাকে। যেমন কফি। কফি তৈরি করা হয় পানি দিয়ে। কিন্তু কফিতে ক্যাফেইন নামক একটি উপাদান থাকে যা শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটায়। আবার যেমন ফলের রসে পানি ছাড়াও চিনির ব্যবহার থাকে যা আমাদের বাড়তি ক্যালরি দেয় এবং প্যানক্রিয়াসকে উত্তেজিত করা ছাড়াও আরো বিভিন্ন রকম ক্ষতি করে থাকে। তাই অন্যান্য যে কোন তরলের চেয়ে পানি পান করার মাধ্যমে দৈনিক তরলের চাহিদা পূরণ করা ভাল। জেনে রাখুন

 দিনে কমপক্ষে ২ লিটার পানি পান করা উচিত। ব্যায়ামবিদ কিংবা অতিরিক্ত ঘেমে যান যারা তাদের একটু বেশিই পান করা উচিত। বৃদ্ধ হলে পানির প্রতি আকর্ষণ কমে যায়। তাদেরকেও পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। চা-কফি ও কোমল পানীয় থেকে পানিই বেশি উপকারী। ঠান্ডা পানির চেয়ে স্বাভাবিক পানিই স্বাস্থ্যসস্মত। গ্লাসের চেয়ে বোতলে পানি খেলে পরিমাণের হিসাব রাখা সহজ হয়।  খাবার গ্রহণের আগে এক গ্লাস এবং খাবার শেষে অন্তত ২০/২৫ মিনিট পরে পানি পান করা উচিত। মোটকথা, শরীরের অনেক অথাযাচিত সমস্যা রাতারাতি কেটে যাবে পর্যাপ্ত পানি পানে। কমে যেতে পারে  বড় অংকের চিকিৎসা ব্যয়। তাই সুস্থ থাকতে হলে, প্রাকৃতিক এই  মহৈাষধের কদর করতেই হবে।

লেখক : প্রধান পুষ্টিবিদ অ্যাপোলো-হসপিটালস ঢাকাসংগ্রহ : ফেরদৌসী শম্পা