স্বাস্থ্য

হাসপাতালে ভর্তি শুরু ডেঙ্গু রোগী, বাড়ছে শঙ্কা

মহামারি করোনার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ডেঙ্গুর শঙ্কাও। ২০১৯ সালে ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়া এই ডেঙ্গু শীত মৌসুমে কিছুটা কমলেও গরম ও বৃষ্টির মৌসুম আসার সঙ্গে সঙ্গে এর প্রকোপ বাড়তে শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শুরু করেছেন ডেঙ্গু আক্রান্তর। শুধু এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই ডেঙ্গু আক্রান্ত ৯ জন রোগী শনাক্ত হওয়ায় বিষয়টিকে আশঙ্কাজনক বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুধবার (৮ এপ্রিল) দেওয়া হিসাব বলছে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে । এই নিয়ে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই ৯ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর বছরের শুরু থেকে এই পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ২৮০ জন। এরমধ্যে জানুয়ারি মাসে সর্বোচ্চ ১৯৯ জন। ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে যথাক্রমে ৪৫ ও ২৭ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, ‘এ বছরে এখন পর্যন্ত রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) থেকে ডেঙ্গু সন্দেহে কোনো মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়নি।’

নগরবাসীরা বলছে, দুই সিটি করপোরেশনের মশানিধন কার্যক্রম তেমন চোখে পড়ছে না। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে মশার উৎপাত বেড়ে যায়। ভোররাত পর্যন্ত উৎপাত থাকে।

মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকার বাসিন্দা মোস্তফা হাসান বলেন, ‘বৃষ্টির পরপরই ভয়ানক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। মশার জ্বালায় রাতে ঘুমানো যায় না। কয়েল জ্বালালেও মশা যায় না।’

শান্তিনগর এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‘হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির খবর শোনার পর আতঙ্কে আছি। কারণ গত কিছু দিনে মশার উৎপাত ব্যাপক হারে বেড়েছে। কয়েল, ইলেক্ট্রিক কয়েলেও কাজ হয় না।’

উত্তরা এলাকার বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘যেভাবে মশার উৎপাত দেখছি গতবছরের মতো যেন অবস্থা না হয়। এরমধ্যে এবছর আবার করোনা। খুব আতঙ্কে আছি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে চলমান কার্যক্রমের পাশাপাশি সমানভাবে এডিস মশা নির্মূলেও কাজ করতে হবে। না হলে সামনে ডেঙ্গু ভয়ঙ্কর রূপ নেবে। আর তখন সামাল দেওয়া কঠিন হবে।

এই বিষয়ে প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষ লেলিন চৌধুরী বলেন,  ‘এখন বৃষ্টি শুরু হলো। নানা জায়গায় পানি জমে থাকবে। বিশেষ করে কার্নিশ, ঘরের কোণে, গাড়ির টায়ারে পানি জমবে। এতে মশা বাড়বে। আর ডেঙ্গুর ভাইরাস বহনকারী এডিস মশা কিন্তু দেশজুড়ে আছে। ফলে এখনই পদক্ষেপ না নিলে করোনার মধ্যে ডেঙ্গু ভয়ঙ্কর রূপ নেবে। তখন সামাল দেওয়া কঠিন হবে।’

করোনার প্রতিরোধের পাশাপাশি মশানিধন কার্যক্রমও জোরদার করার আহ্বান জানিয়ে  লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘সিটি করপোরেশন যে ওষুধ ব্যবহার করে, সেটিও কার্যকর হতে হবে। করোনার কারণে এখন যারা বাসায় অবস্থান করছেন, তারা বাসা-বাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখছেন। এই কার্যক্রম ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখতে হবে।’

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, বছরের শুরু থেকে ডেঙ্গু মশানিধনে সব ধরনের কার্যক্রম চালানো হয়েছে। তবে, করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মশানিধন কার্যক্রমের গতি কিছুটা কমে যায়। এরপরও প্রতিদিন বিকেলে ঢাকার বিভিন্ন অলিগলিতে মশানিধন কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিহ্নিত হটস্পটগুলোতে এডিস মশা নির্মূলে ধারাবাহিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান বলেন, ‘আমরা জানুয়ারি থেকে সচেতনতা ও মশানিধন কার্যক্রম চালিয়ে আসছি। তবে করোনা ভাইসারের কারণে  কাজ কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। এরপরও প্রতিদিন বিকেলে বিভিন্ন এলাকায় আমাদের কাজ চলছে।’

স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এডিস মশার প্রজননের উপযুক্ত জায়গা হলো জমে থাকা পানি।  ঢাকা মেট্রোরেলসহ বেশ কিছু মেগা প্রজেক্ট চলছে। করোনার কারণে এসব জায়গায় কাজ বন্ধ। ফলে নির্মাণাধীন জায়গাগুলোয় পানি জমে থাকলে ডেঙ্গু মশার বিস্তার বাড়তে পারে। এসব জায়গা নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পানিমুক্ত রাখতে সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে ছুটি পেয়ে বাড়ি চলে গেছেন। দেখা যায়, যারা হাই কোমড ব্যবহার করেন, তাদের অনেকে ডাকনা খোলা রেখে চলে যান। এটিও এডিস মশা প্রজননের উপযুক্ত জায়গা। এসবও ডেকে রাখতে হবে।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. শরীফ আহমেদ বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে জীবাণুনাশক ছিটানোর পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সমানভাবে মশার ওষুধও ছিটাচ্ছেন। এতে তাদের ওপর চাপ বেড়েছে। ফলে মশানিধন কার্যক্রম যে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তা অস্বীকার করা যাবে না।’ তবে মশানিধন কার্যক্রম অব্যাহত আছে বলেও তিনি জানান। ঢাকা/নূর/এনই