স্বাস্থ্য

করোনা রোগীদের আস্থা কোভিড-১৯ টেলিহেলথ সেন্টার

মিরপুরের বাসিন্দা মালিহা। তার মা-বাবাসহ পরিবারের ৫ সদস‌্য করোনায় আক্রান্ত। বয়স বেশি হওয়ায় মা-বাবার অবস্থা খারাপ। তাদের নিয়ে দুশ্চিন্তাটা একটু বেশি। এমন কঠিন সময়ে কোভিড-১৯ টেলিহেলথ সেন্টার থেকে ডাক্তারের ফোন আসে মালিহার কাছে। ডাক্তারের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে পেরে তার পরিবারের সবাই কিছুটা আশ্বস্তবোধ করেন। এরপর এ সেন্টারের ডাক্তারদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরামর্শ ও ফলোআপ চিকিৎসা নিয়ে আক্রান্তরা এখন বেশ সুস্থ। ঘরে বসে এধরনের সেবা পেয়ে এই টেলিহেলথ সেন্টারের ওপর মালিহার আস্থা তৈরি হয়। করোনা পরিস্থিতিতেও সঠিক তথ্য ও ডাক্তারি পরামর্শ তাদেরকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হতে সহায়তা করেছে।

অন্যদিকে, কয়েকদিন ধরেই বিদ্যানন্দ দে এর শরীরটা খারাপ যাচ্ছে। কাশি, গলাব্যাথার সঙ্গে জ্বরও আছে। পরে কোভিড-১৯ এর পরীক্ষায় ফলাফল পজিটিভ আসে। তিনি ঘরে বসেই চিকিৎসা সেবা নিতে চান। ফোন করলেন কোভিড-১৯ টেলিহেলথ  সেন্টারের হটলাইন নম্বরে। এ সেন্টারে কর্তব্যরত ডাক্তার তাঁর সমস্যাগুলোর কথা শুনলেন। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ দিলেন। কোভিড-১৯ টেলিহেলথ সেন্টার থেকে স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে এবং প্রতিনিয়ত ফলোআপ চিকিৎসায় কোভিড থেকে সেরে উঠেছেন তিনি। এমন অনেক করোনা আক্রান্ত রোগীর পাশে দাঁড়িয়েছে কোভিড-১৯ টেলিহেলথ সেন্টার। 

প্রতিদিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) থেকে প্রাপ্ত ডাটার ভিত্তিতে ফোন করে দেশে করোনায় আক্রান্তদের স্বাস্থ্য পরামর্শ ও নিয়মিত ফলোআপ সেবা দিয়ে যাচ্ছে কোভিড-১৯ টেলিহেলথ সেন্টার। শুধু তাই নয় ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে দেশের যেকোনো নাগরিক কোভিড-১৯ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য তথ্য সেবা ও ডাক্তারি পরামর্শ নিতে পারছেন এ সেন্টার থেকে।   এই টেলিহেলথ সেন্টার থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় চার হাজার রোগীকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। পর্যন্ত ১১ লাখের বেশি রোগীকে সেবা দেওয়া হয়েছে। www.corona.gov.bd পোর্টালে নিবন্ধনের মাধ্যমেও সাক্ষাতের (অ্যাপয়েন্টম্যান্ট) ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছ থেকে টেলিমেডিসিন সেবা ও পরার্মশ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া, এ সেন্টার থেকে জরুরি সহযোগীতামূলক চিকিৎসা সেবা অ্যাম্বুলেন্স, নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের খোঁজ, জরুরি ওষুধ সরবরাহ, হাসপাতালে ভর্তিতে সহযোগিতা দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে এটুআই-এর চিফ ই-গভর্নেন্স স্ট্র্যাটেজিস্ট এবং কোভিড-১৯ টেলিহেলথ সেন্টার ও মা টেলিহেলথ সেন্টারের চিফ কো-অর্ডিনেটর ফরহাদ জাহিদ শেখ বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস থেকে প্রতিদিন কোভিড শনাক্ত হওয়া রোগীদের তথ্য এ সেন্টারে আসার পর সিআরএম সিস্টেমে জমা হয়। সেই তথ্য অনুযায়ী সেন্টারে অবস্থানরত হেলথ ইনফরমেশন অফিসার রোগীদের পরিপূর্ণ স্বাস্থ্য তথ্য সংগ্রহ করেন। এরপর রোগীকে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ প্রদানের জন্য ডাক্তারের সঙ্গে যুক্ত করে দেন। এরপর তার নিয়মিত ফলোআপ চলতে থাকে।’  

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (পরিচালক, এমআইএস) অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে সারাদেশে অনুমোদিত ল্যাবের মাধ্যমে প্রতিদিন কোভিডের নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং কোভিড পজিটিভ রোগীর তথ্য এমআইএস'র ডাটাবেইজ-এ সংক্ষরিত হয়। এমআইএস থেকে ইন্ট্রিগ্রেশনের মাধ্যমে প্রতিদিন কোভিড-১৯ টেলিহেলথ সেন্টারে পাঠানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাস্তবায়নাধীন এটু্আই প্রোগ্রামের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত কোভিড-১৯ টেলিহেলথ সেন্টার থেকে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের পর্যায়ক্রমে টেলিহলেথ স্বাস্থ্য সেবা এবং পরামর্শ দেওয়া হয়। ’

উল্লেখ‌্য, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি সমঝোতা স্মারকের ভিত্তিতে এটুআই, স্বাস্থ্য বাতায়ন (সিনেসিস আইটি) এর কারিগরি সহায়তায় ২০২০ সালের ১৩ জুন কোভিড ১৯ টেলিহেলথ সেন্টারের যাত্রা শুরু হয়।