স্বাস্থ্য

বাড়ছে ডেঙ্গু, বিপর্যয়ের আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। গত কয়েকদিন ধরে প্রতিদিনই রাজধানীতে শতাধিক করে ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এই মুহূর্তে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতালের চিন্তা করছে সরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

সোমবার (২৬ জুলাই) সকাল ৮টা পর্যন্ত তার আগের ২৪ঘণ্টা ডেঙ্গু নিয়ে ১২৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১২৪ জনই রাজধানী ঢাকায়। তিন জন ঢাকার বাইরে। এ বছরে এ পর্যন্ত ১৮০২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে এক হাজার ৩৩১ জন হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়ে বাসায় ফিরেছেন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৪৬৮ জন। এরমধ্যে ৮ জন ঢাকার বাইরে। এছাড়া ডেঙ্গু সন্দেহে তিন জনের মৃত্যুর তথ্য আইইডিসিআরে পর্যালোচনায় আছে।

চলতি বছরের জুনে এসে ডেঙ্গু বাড়তে শুরু করে। আর জুলাই মাসে প্রতিদিনই আগের দিনের তুলনায় বেশি হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। জুন মাসে ২৭২ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। 

জুলাই মাসের এই কয়েকদিনে ১৪৩০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এখনো পাঁচ দিন বাকি রয়েছে। এর আগে মে মাসে ৪৩ জন, এপ্রিলে ৩ জন, মার্চে ১৩ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৯ জন এবং জানুয়ারিতে ৩২ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এ বছর ডেঙ্গু বাড়তে পারে আগে থেকেই এমন ধারণা ছিল বিশেষজ্ঞদের। 

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘যে সময়ে করোনা বাড়ছে, সেই সময়ে আমরা দেখছি ডেঙ্গুও বাড়ছে। যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। শুধু যে আক্রান্ত হচ্ছে তা কিন্তু নয়, আমাদের কাছে মৃত্যুর খবরও আসছে। তাই করোনার মধ্যে আমাদের সামনে আরেকটি বিপদ ডেঙ্গু। এখন এ দুটিই আমাদের মোকাবেলা করতে হবে। এজন্য তিনি এডিস মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংসের তাগিদ দেন। মশা নির্মূলের কাযর্ক্রম আরও গতিশীল করতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমীন বলেন, ‘পরীক্ষার জন্য সব হাসপাতালে পর্যাপ্ত কিট পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসকদের আহ্বান জানানো হয়েছে, সন্দেহ হলে রোগীর ডেঙ্গু পরীক্ষা দেওয়া হবে।’

সবাইকে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘দিনে ও রাতে ঘুমানোর আগে মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে শরীর ঢেকে রাখে এমন পোশাক পরতে হবে। বাসা বাড়িতে ফুলের টবে বা অন্যত্র পানি জমে থাকলে তিন দিনে এক দিন জমা পানি ফেলে দিন।’ 

চিকিৎসকরা জানান, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে জ্বর কমে যাওয়ার পরেই ঝুঁকি বাড়ে। রোগীর প্লাটিলেট কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই জ্বর এলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং পূর্ণ বিশ্রামের পাশাপাশি বেশি করে তরল জাতীয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন।

এদিকে, গত রোববার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সমন্বয় সেল’ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। 

এসময় তিনি বলেন, ‘যে এলাকায় ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাবে, সেখানে এডিস নির্মূলে বিশেষ অভিযান চালানো হবে।’ 

এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ডেঙ্গু রোগীদের নির্ধারিত কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসার দেওয়ায় বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে।