স্বাস্থ্য

‘শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে মায়ের দুধের বিকল্প নেই’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মায়ের দুধের কোনো বিকল্প নেই।

সোমবার (২ আগস্ট) সপ্তাহব্যাপী মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ।  যে জাতি শিশুদের কথা ভাবেনা সে জাতি খুব বেশি উন্নত হতে পারে না। আর দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উন্নত অবস্থানে দেখতে হলে আমাদের আজকের এবং অনাগত শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের জাতীয় পুষ্টি সেবার মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালন শুরু হয়েছে। এ বছর ২ আগস্ট থেকে ৭ আগস্ট সপ্তাহব্যাপী এই সপ্তাহ পালিত হবে।

বিভিন্ন জরিপের তথ্য উপাত্ত তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জন্মের ১ ঘণ্টার মধ্যে মায়ের দুধ পান করালে মৃত্যুর হার শতকরা ৩১ ভাগ কমে যায়।  আর ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ পান করালে (এক ফোটা পানিও নয়) শিশুর মৃত্যুর ঝুঁকি আরও ১৩% কমে যায়।  তাই শিশুর মৃত্যুহার রোধে এবং শারিরীক ও মানসিক বিকাশে জন্মের ১ ঘণ্টার মধ্যেই মায়ের দুধ পান, পূর্ণ ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের দুধ পান এবং পূর্ণ ৬ মাস বয়সের পর থেকে ২ বছর বয়স পর্যন্ত ঘরে তৈরি বাড়তি খাবারের পাশাপাশি মায়ের দুধ চালিয়ে যেতে হবে।

বিশ্বব্যাপী শিশুকে মায়ের দুধ পান করানোর হার এখনো অনেক কম। বিশ্বব্যাপী মাত্র ৪৩ শতাংশ নবজাতককে জন্মের ১ ঘণ্টার মধ্যে মায়ের দুধ পান করে থাকে এবং ৪১ শতাংশ শিশুকে পূর্ণ ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের দুধ পান করানো হয়। বাংলাদেশে এই হার বর্তমানে যথাক্রমে ৬৯ শতাংশ এবং ৬৫ শতাংশ। শিশুকে ২৪ মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করানোর হার এখন ৮৭%, যদিও ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী শিশুর পূর্ণ ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ পান করানোর হার ৫০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে এবং বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই তা অর্জন করেছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর ১-৭ আগস্ট বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে নিরাপদে মাতৃদুগ্ধ পান করাতে ঢাকা শহরে ২৫টি, বিভাগীয় শহরে ৫টি, জেলা শহরে ১৩ টিসহ মোট ৪৩টি ডে-কেয়ার সেন্টার চালু রয়েছে।

এছাড়াও গার্মেন্টসে কর্মরত নারীদের সন্তানদের জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের প্রতিটিতে ৩০ আসন বিশিষ্ট ১৫টি ডে-কেয়ার সেন্টার চালু রয়েছে। হত দরিদ্র গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকালী মায়েদের ভাতা ৫০০/-টাকার স্থলে ৮০০/-টাকা করা হয়েছে। মাতৃত্বকালীন ভাতার মেয়াদ ২ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩ বছর করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। 

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলী নূর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু-সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। 

সভাটি সঞ্চালনা করেন জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের জাতীয় পুষ্টি সেবার লাইন ডিরেক্টর ডা. এস এম মোস্তাফিজুর রহমান।