স্বাস্থ্য

শিশুর আঙুলের একাংশ কাটার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ২৩ দিন বয়সী শিশুর ক্যানোলা খুলতে গিয়ে হাতের আঙুলের একাংশ কেটে ফেলার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে।

এ বিষয়ে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. ওমর ফারুক মীর বলেন, শিশুর আঙুল কাটার ঘটনায় শনিবার (৪ মার্চ) দুপুরে হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) গৌতম কুমার কুন্ডুকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটিকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান সহকারী পরিচালক।

শিশুটির দাদা কার্তিক পাল জানান, ঠান্ডাজনিত কারণে তার ২৩ দিন বয়সী তার নাতনি মিষ্টি পালকে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। গত বৃহস্পতিবার (০২ মার্চ) সকালে শিশুটির শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে সেদিন দুপুরে তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে বলে জানান হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

ছাড়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া চলার মাঝে নার্সের বদলে শিশুটির হাতে লাগানো ক্যানোলা খুলতে যান আঞ্জুয়ারা খাতুন নামে হাসপাতালের একজন আয়া। হাতের ক্যানোলার সঙ্গে থাকা সার্জিক্যাল টেপ কেচি দিয়ে কাটতে গিয়ে শিশুটির ডান হাতের কনিষ্ঠা আঙুলের একাংশ (নখের অংশটুকু) কেটে ফেলেন আয়া।

শিশুটির চিৎকারে ছুটে আসে অন্যান্য রোগীর স্বজনরা। অবস্থা বেগতিক দেখে হাসপাতাল থেকে সটকে পড়েন অভিযুক্ত ওই আয়া। পরে তাকে শিশু ওয়ার্ড থেকে অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয় শিশুটিকে। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে শিশুটি।

শিশুটির মা শিল্পী পাল বলেন, ‘ডান হাতের কনিষ্ঠা আঙুলের মাথার অংশ কেটে পড়ে গেছে। ছোট শিশু হওয়ায় সেটি জোড়া দেওয়া সম্ভব হয়নি। চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিয়েছেন। আমার মেয়ে ভালো আছে। মেয়ে সুস্থ হলেই আমরা খুশি। আমাদের কোনো অভিযোগ বা চাওয়া-পাওয়া নেই।’ 

হাসপাতালের অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে কর্তব্যরত জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স নাজিরা খাতুন বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনার পর শিশুটিকে শিশু ওয়ার্ড থেকে অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে শিশুটির অবস্থা ভালো আছে। ভয়ের কারণ নেই। দু'-একদিনের মধ্যে ছাড়পত্র দেওয়া হতে পারে।

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. ওমর ফারুক মীর বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। কার অবহেলায়, কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই সময় কোন নার্স বা ইনচার্জ কর্মরত ছিলেন, ক্যানোলা খুলতে নার্স না গিয়ে কেন আয়াকে পাঠালেন, সব যাচাই বাছাই করা হবে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেখে দায়ীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

ঘটনায় অভিযুক্ত আয়া আঞ্জুয়ারা খাতুন বলেন, ‘আমি কেচি দিয়ে ক্যানোলা লাগানো টেপ কাটতে গিয়ে হাতের আঙুল সবগুলোই মনে হলো ধরেছিলাম। কিন্তু এর মাঝে যে কনুই আঙুল কেচির মধ্যে ছিল সেটা টের পাইনি। এতদিন ধরে কাজ করি কোনোদিন ভুল হয়নি। এটা আমার ভুলবশত হয়েছে।’ 

তিনি পাঁচ বছর ধরে আয়ার কাজ করেন বলে জানান।