স্বাস্থ্য

জননাঙ্গের পেশি দৃঢ় রাখতে কার্যকর যে ব্যায়াম

ডেস্ক রিপোর্ট : কেগেল ব্যায়াম (Kegel exercises) হলো প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য পেলভিক পেশি বা শ্রোণি মেঝের পেশির একটি কার্যকরী ব্যায়াম- যা নিম্নাঙ্গের অংশ বিশেষত পেলভিক পেশি, জননাঙ্গ ও পায়ুপথের পেশি প্রভৃতি শক্তিশালী ও কার্যকর করতে সাহায্য করে।

 

মহিলাদের জন্য কেগেল ব্যায়াম :

 

কেগেল ব্যায়াম শ্রোণি মেঝের পেশিকে দৃঢ এবং শক্তিশালী করে যা জরায়ু, মূত্রথলি এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাকে সাহায্য করে। আপনি প্রায় যে কোনো সময়ে শুয়ে বা বসে কেগেল ব্যায়াম করতে পারেন। এমনকি গর্ভবতী অবস্থায়ও করা যেতে পারে।

   

কেগেল ব্যায়াম কিছু অবশ্যম্ভাবী ঘটনাকে বিলম্বিত করে, শ্রোণি অঙ্গ স্থানচ্যুতি এবং সম্পর্কিত উপসর্গ প্রতিরোধ করে আপনার তারুণ্য অনেকদিন ধরে রাখতে পারে। এছাড়া যাদের চরমপূলক লাভে সমস্যা হয় তাদের জন্যও এটা উপকার হতে পারে।

   

যেভাবে কেগেল ব্যায়াম করতে হয় :

 

কীভাবে কেগেল ব্যায়াম করতে হয়, সেটা জানার আগে আপনার শ্রোণি মেঝের পেশি চিহ্নিত করে নিতে হবে এবং কীভাবে পেশি সংকুচন এবং প্রসারণ করতে হয় সেটাও জানতে হবে।

 

প্রথমে পেশি খুঁজে নিতে হবে। যোনির ভিতর আঙ্গুল ঢুকিয়ে পার্শ্ববর্তী পেশিগুলো সংকুচন করার চেষ্টা করুন। আপনার যোনি আঁটা এবং আপনার শ্রোণি মেঝের পেশিগুলো ঊর্ধ্বাভিমুখী মনে হবে। তারপর পেশি শিথিল করে দিন। দেখবেন শ্রোণিপেশিগুলি আবার আগের অবস্থানে ফিরে গেছে।

   

এবার পূর্ণ পদ্ধতি। শ্রোণি এলাকা (পেলভিস) অর্থাৎ তলপেটের নিম্নভাগের মাংশপেশির অবস্থান নির্ণয় করা হয়ে গেলে বা বুঝতে পারার পর মূত্রথলি সম্পূর্ণ খালি করবেন। তারপর চেয়ারে বসে বা মেঝে/বিছানায় শুয়ে পড়বেন। পেলভিস মাসল সংকুচন করুন। ৫ সেকেণ্ড ধরে রাখুন। ৫ সেকেণ্ড পরে শিথিল করে দিন। এভাবে একটানা ৪/৫ বার করুন। এভাবে ধীরে ধীরে ৫ সেকেণ্ডের জায়গায় ১০ সেকেণ্ড করে করার চেষ্টা করুন।

 

শুধু শারীরিক ভাবে নয়, মানসিক ভাবেও পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে। ভালো ফলাফলের জন্য শুধু পেলভিস মাসলের উপরই মনোযোগ দেবেন। খেয়াল রাখবেন- পেটের পেশি, উরু, নিতম্বের পেশিতে যেন টান না পড়ে বা সেগুলো সংকুচিত না হয়। শ্বাস-প্রশ্বাস ধরে বা বন্ধ রাখবেন না। স্বাভাবিক অবস্থায় যেমন শ্বাস-প্রশ্বাস নেন, এই ব্যায়ামের সময়ও সেভাবে নেবেন।

 

ব্যায়ামটি ১০ বার পুনরাবৃত্তি করে ৩টি সেট করবেন এবং দিনে ৩ বার করার চেষ্টা করবেন। এজন্য আলাদা সময়ের দরকার নাই। অন্যান্য কাজের ফাঁকেই এটা করতে পারেন। যেমন কম্পিউটারের কাজ করার সময় বা সোফায় বসে টিভি দেখার সময়, বিছানায় গড়াগড়ি দেওয়ার সময়।

ব্যায়ামটি চেষ্টা করেও করতে না পারলে লজ্জিত হবার কিছু নাই। এখানে প্রশ্ন করতে পারেন বা আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।

 

যদি একাগ্রতার সাথে সঠিকভাবে কেগেল ব্যায়াম করতে পারেন তাহলে ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যেই ফলাফল দেখতে পাবেন। আর ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হবে না। সেক্সের সময় যোনি মধ্যে ব্যথা কমে যাবে, বেশিক্ষণ মিলিত হতে পারবেন। মিলনে আগের চেয়ে বেশি সুখানুভূতি হবে। আরও অনেক সুবিধা পাবার জন্য এটা করা অব্যাহত রাখা উচিত।পেলভিস পেশির ব্যায়ামের জন্য ৩টি আসন :

 

কেগেল ব্যায়াম কেন এবং কীভাবে করতে হয়ে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে আমরা জেনেছি যে বসে, শুয়ে, যেকোনো অবস্থাতেই এই ব্যায়াম করা যায়। তবে এই ব্যায়াম থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে দরকার পূর্ণ মনোযোগ। এবং সেটা ঠিক রাখতে ভালো কিছু ব্যায়ামের আসন আছে। তেমনই তিনটি আসন সম্পর্কে ধারণা লাভের জন্য এই পোস্ট।

 

আসন ১ (ম্যাডোনা) নিয়মাবলী :

 

১. হাটু গেড়ে বসে হাত পিছনে নিয়ে হাত এবং পায়ের উপর শরীরের ভর ছেড়ে দিন।২. পেট এবং মেরুদণ্ড স্বাভাবিক রেখে কোমর উঁচু করুন। থুতনি বুকের দিকে তাক করে বা মাথাটা পিছনের দিকে ঝুঁকে নিতে পারেন।৩. এবার কোমর উঁচু অবস্থায় কেগেল ব্যায়াম করা শুরু করুন অর্থাৎ শ্রোণি/পেলভিস এলাকার মাংশপেশি সংকুচন করে ৫ থেকে ১০ সেকেণ্ড ধরে রাখুন।৪. ধীরে ধীরে পেলভিস পেশি শিথিল করে আনুন।৫. কোমর আগের অবস্থায় অর্থাৎ নিচে নামিয়ে আনুন। এভাবে ১০ বার পুনরাবৃত্তি করুন। এভাবে ১ সেট হবে।৬. একটু বিশ্রাম নিন।৭. পুরো ব্যায়ামটা মোট ৩ সেট করুন।

 

আসন ২ (শ্রোণি উত্তোলন) নিয়মাবলী :

 

১. পা টান করে কোমরের উপর ভর দিয়ে বসুন। পা দুইটি কোমরের প্রসস্ততার চেয়ে একটু বেশি ফাঁক করে রাখুন। হাত পিছনে নিয়ে হাতের উপর কিছুটা ভর ছেড়ে দিন। খেয়াল রাখুন হাতের আঙুলগুলো যেন বাইরের দিকে প্রসারিত থাকে।২. পেট এবং মেরুদণ্ড স্বাভাবিক রেখে কোমর উঁচু করুন। থুতনি বুকের দিকে তাক করে বা মাথাটা পিছনের দিকে ঝুকে নিতে পারেন।৩. এবার কোমর উঁচু অবস্থায় কেগেল ব্যায়াম করা শুরু করুন।৪. ১ পর্যন্ত গণনা করতে যে সময় লাগে, সেই সময়টুকুতে পেলভিস পেশি সংকুচন, আবার একই পরিমাণ সময়ে প্রসারণ করার চেষ্টা করুন।৫. কোমর আগের অবস্থায় অর্থাৎ নিচে নামিয়ে আনুন। এভাবে ১০ বার পুনরাবৃত্তি করুন। এতে ১ সেট সম্পূর্ণ হবে।৬. একটু বিশ্রাম নিন।৭. পুরো ব্যায়ামটা মোট ৩ সেট করুন।

 

আসন ৩ (শিবা) নিয়মাবলী :

 

১. টান হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাত দুদিকে ছড়িয়ে দিন। হাতের উপর কোনো ভর রাখবেন না। হাঁটু ভাঁজ করে পায়ের পাতা মেঝের উপর রাখুন। খেয়াল রাখুন যাতে হাঁটু এবং পায়ের আঙুল যেন এক লাইনে থাকে।২. পায়ের পাতা এবং পিঠের উপর ভর রেখে কোমর উঁচু করুন।৩. এবার কোমর উঁচু অবস্থায় কেগেল ব্যায়াম করা শুরু করুন।৪. এই আসনে পেশি সংকুচন/প্রসারণ দ্রুত করতে হয়, তাই অনেক মনোযোগ এবং অনুশীলনের দরকার। একবার ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস নেওয়া কালীন ৩ থেকে ৪ বার পেশি সংকুচন/প্রসারণ করতে হয়। তারপর গভীরভাবে নিঃশ্বাস নিয়ে শিথিল করে দিন। পুনরাবৃত্তি করুন।৫. কোমর নিচু করে ফেলুন। পুরো প্রক্রিয়াটা আরো ১০ বার পুনরাবৃত্তি করুন। এতে এক সেট সম্পূর্ণ হবে।৬. সেটের মাঝে একটু বিশ্রাম নিয়ে মোট ৩ সেট করুন।

   

পুরুষের জন্য কেগেল ব্যায়াম :

 

আপনি হয়তো ভাবছেন কেগেল ব্যায়াম/ কেগেল ব্যায়াম (Kegel exercises) শুধু মহিলাদের জন্য হয়। আসলে তা নয়। মহিলারা এই ব্যায়াম থেকে যতটা সুবিধা লাভ করতে পারেন, পুরুষরাও ঠিক ততটা সুবিধা নিতে পারবেন।

 

কেগেল ব্যায়াম শ্রোণি মেঝের পেশি সুসংগঠিক করে মূত্রসংবহনতন্ত্র, বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথের কার্যপ্রণালী জোরদার করে এবং যৌনক্রিয়া ক্ষমতাকে উন্নিত করতে পারে। মহিলাদের মত পুরুষেরাও যখন তখন এই ব্যায়াম করতে পারেন। কিন্তু সবারই উচিত ব্যায়ামটি করার আগে সঠিক মাংশপেশি সনাক্তকরণ এবং সঠিক পন্থা জেনে নেয়া।পুরুষদের জন্য কেগেল ব্যায়ামের উপকারিতা

   

পুরুষরা কীভাবে কেগেল ব্যায়াম করবেন :

 

পেলভিস ফ্লোর মাসল অর্থাৎ শ্রোণি মেঝের পেশি খুঁজে বার করা এবং সেটা কিভাবে সংকুচন/প্রসারণ করবেন- সেটা কিছুটা কষ্টসাধ্য হলেও অসম্ভব কিছু নয়। যদিও আগেই এ ব্যাপারে ধারণা দেওয়া হয়েছে, তবুও আরেকবার বলা হলো।

১. সঠিক পেশি খুঁজে নিন

পেটে বায়ু জমলে সেটা বের হয়ে যাওয়া রোধ করতে গেলে বা প্রস্রাব করার সময় হঠাৎ প্রস্রাব বন্ধ করে দিলে পেটের নিম্নভাগে পিছনের দিকে যে পেশিগুলো আঁটসাঁট হয়ে যায় সেগুলোই পেলভিস ফ্লোর মাসল অর্থাৎ শ্রোণি মেঝের পেশি। আয়নায় দেখলে দেখবেন লিঙ্গ কিছুটা তলপেটের কাছাকাছি চলে আসে এবং অণ্ডথলি উপরের দিকে উঠে আসে।

২. পন্থা/পদ্ধতি/টেকনিক সঠিককরণ

ব্যায়ামের আগে ঠিকমতো প্রস্রাব করে নেবেন। প্রথম দিকে উচিত হবে মেঝেতে শুয়ে এই ব্যায়াম করা। মেঝেতে শুয়ে পেলভিস ফ্লোর মাসল ৩ সেকেণ্ড সংকুচন করে রাখুন, তারপর ৩ সেকেণ্ড প্রসারণ করে রাখুন। এভাবে টানা কয়েকবার করবেন। তবে খুব বেশি না। মাসল ধীরে ধীরে শক্তিশালী হতে শুরু করলে বসে, দাঁড়িয়ে বা চলন্ত অবস্থায়ও করতে পারবেন।

 

৩. মনোযোগ বজায় রাখুন

ভালো ফলাফলের জন্য যখন সংকুচন করবেন তখন গভীরভাবে মনোযোগ দিয়ে করবেন। অনেকেই ভুল করে পেটের বা তলপেটের, উরু, এবং নিতম্বের পেশি সংকুচন করে ফেলেন। এটা ঠিক নয়। দম বন্ধ বা ধরে রাখবেন না। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখুন।

 

৪. কতবার করবেন

প্রত্যহ ৩ টা সময় (যেমন সকালে দুপুরে বিকেলে) চেষ্টা করবেন। প্রতিবার ১০ রেপ করে ৩ সেট করে করবেন।(৩ সেকেণ্ড সংকুচন + ৩ সেকেণ্ড প্রসারণ = ১ রেপ। ১০ রেপ = ১ সেট)।মাঝে মাঝে অন্য কাজের সময় (যেমন দাঁত মাজা) এটা প্রাকটিস করে নিতে পারেন। তলপেটে চাপ পড়ে এমন কিছু কাজকর্মের সময়ও (যেমন হাঁচি, কাশি, হাসা, ভারী বস্তু উত্তোলন) আপনার পেলভিস ফ্লোর মাসল সংকুচন হতে পারে। এ ছাড়া যৌনমিলনের সময় পেলভিস ফ্লোর মাসল সংকুচন করে লিঙ্গ আরো অধিকক্ষণ উত্থিত রাখতে পারেন বা অকাল বীর্যপাত রোধ করতে পারেন।

৫. সমস্যা হলে

ব্যায়াম করতে গিয়ে সমস্যায় পড়লে সাহায্য চাইতে কার্পণ্য বা লজ্জা করবেন না। নিকটস্থ স্বাস্থ্যসেবা বা ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন যাতে তারা আপনাকে সঠিক পেশি সনাক্তকরণ এবং ব্যায়ামের পদ্ধতি শিখিয়ে দিতে পারেন।

কিছু ক্ষেত্রে biofeedback প্রশিক্ষণ সাহায্য করতে পারে। এই ধরণের সেশনে, ডাক্তার বা অন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা মলদ্বার দিয়ে একটি Monitoring Probe প্রবেশ করিয়ে পুরো ব্যাপারটা মনিটরে পর্যবেক্ষণ করেন। পেলভিস ফ্লোর মাসল সংকুচন করার পর একটা মনিটরে দেখা যাবে যে আপনি সঠিক পেশি সংকুচন করতে পারছেন কিনা, এবং পারলে কতক্ষণ পারছেন।

 

৬. কখন ফলাফল পাবেন

নিয়মিত কেগেল ব্যায়াম করলে ৩ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত প্রস্রাবের সমস্যা দূর হয়ে যেতে পারে। লিঙ্গ উত্থানের সমস্যা সমাধান হতে ৩ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। অব্যাহত সুবিধার জন্য এই ব্যায়াম প্রত্যহ করে যাওয়া উচিত।

   

সূত্র : ইন্টারনেট।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ আগস্ট ২০১৪/সনি