স্বাস্থ্য

শুধু এক ফোটা রক্ত

শ্যামল কান্তি নাগ : একটা এক্সিডেন্ট, চোখের সামনে জীবনের আলো নিভে যাচ্ছে রুনার। ঢাকা মেডিক্যালের জরুরি বিভাগে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে এগার বছরের উচ্ছ্বল এই কিশোরী। অস্ত্রপচারে এখনি লাগবে চার ব্যাগ রক্ত।

 

ইট-পাথরের এই পাষাণ নগরীতে আপন বলতে রুনার যে কেউ নেই। কে দেবে রক্ত। বিমর্ষ অপারেশন থিয়েটারের দিকে তাকিয়ে আছেন বাবা সরোয়ার হোসেন। বাড্ডার ফুটপাতে সবজি বিক্রেতা এই গরিব বাবা কীভাবে রক্ত সংগ্রহ করবেন সেই চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠেছেন। মনটা কেঁদে উঠেছে হু হু করে। দীর্ঘশ্বাসে বেজে ওঠে,  শুধু এক ব্যাগ রক্ত দরকার।

 

উদ্বিগ্ন সরোয়ার হোসেনের পাশে দাঁড়ালো সন্ধানী। দ্রুত ব্লাড ব্যাংক থেকে এবি নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত দান করলো রুনাকে। অনেকটাই দুষ্প্রাপ্য এই গ্রুপের রক্ত পেয়ে জীবনটা ফিরে পেল রুনা।এই ঢাকা মেডিক্যালেই আর্থিক অনটনে জর্জরিত এক সহপাঠী বন্ধুকে সকালের নাস্তা কিনে দিয়ে আর্তমানবতার সেবা শুরু করেছিল ছয় জন ছাত্র। ১৯৭৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সেই সেবা কার্যক্রম থেকেই জন্ম নিয়েছিল আজকের সন্ধানী। ১৯৭৮ সালের ২ নভেম্বর সন্ধানী শুরু করে স্বেচ্ছায় রক্তদান আন্দোলনের। ৫ নভেম্বর পালন করে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষু দান দিবস।

 

আজ ৫ নভেম্বর ওই দিবসটি নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করেছেন সন্ধানীর কর্মীরা। আড়াইশো ছাত্র দিবসটি উপলক্ষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের চত্বরে মানব রক্ত ফোটা তৈরি করেছিলেন। ‘শুধু এক ফোটা রক্তই বাঁচাতে পারে একটি জীবন’, ‘রক্ত দিন জীবন বাঁচান’ এই স্লোগান দিয়ে বর্ণাঢ্য র‌্যালিও বের করেন সন্ধানীর স্বেচ্ছাসেবকরা। দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে আলোচনা সভা হয়েছে বুধবার বিকেলে। ছিল স্বেচ্ছায় রক্ত দান কর্মসূচি।

 

সন্ধানীর সাধারণ সম্পাদক ইফতেখারুল আলম রাইজিংবিডিকে বলেন, এবারের দিবসের থিম ছিল ‘মানবতা দৃঢ় হোক রক্তের বাধনে, ঘুচুক আধার নয়নে নয়নে’।

 

মুমূর্ষু মানুষকে রক্ত দিয়ে বাঁচানোর মতো মানবতার কাজে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে সন্ধানী।

 

ইফতেখারুল আলম বলেন, ‘প্রয়োজনের সময় দুর্লভ গ্রুপের রক্ত পাওয়া কঠিন। তা ছাড়া সব সময় আত্মীয়-স্বজনের রক্ত পাওয়া যায় না। ওই বিপদের সময়টাতেই পাশে থাকে সন্ধানী। এ জন্য সক্ষম সুস্থ সবাইকে রক্ত দানে ক্যাম্পেইন করে চলেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি।’

 

ইফতেখারুল আলম জানান, বছরে ৪০ হাজার ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে সন্ধানী। বছরে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার ব্যাগ রক্ত দরকার হয়। যার বাকি রক্ত দান করে আত্মীয়-স্বজন এবং অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

 

দেশের বিভিন্ন মডিক্যাল কলেজ এবং ডেন্টাল কলেজে ২২টি ইউনিট আছে সন্ধানীর। এ ছাড়া বিশেষ অনুষ্ঠান থেকেও রক্ত সংগ্রহ করা হয়। মরণোক্তর চক্ষু দানেও উদ্বুদ্ধ করছে এই সংগঠনটি। নশ্বর দেহ মৃত্যুর পরেও যাতে মানবতার সেবায় কাজে লাগে সেই প্রচেষ্টা রয়েছে তাদের।

 

রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার মরণোত্তর কর্ণিয়া দান করেছেন।

 

তাদের এই দান দেশের আপামর মানুষকে মানবতার সেবাই এগিয়ে আসার অনুপ্রেরণা যোগাবে এমনটাই মনে করে সন্ধানীর এই কর্মকর্তা।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ নভেম্বর ২০১৪/নাগ/সাইফুল