আন্তর্জাতিক

নারী নির্যাতনে শীর্ষ দশ দেশ

মোস্তফা আরিফ : দেশে দেশে নারী নির্যাতন নতুন কিছু নয়। নারী চিরকাল পণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। নারীর প্রতি বিরূপ আচরণ করতে জাতি, সমাজ, রাষ্ট্র কুণ্ঠাবোধ করেনি। নারীকে সামাজিক ও আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত অপমান সহ্য করতে হয়।

বহু দেশে নারীরা আজ প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু এ কথাও সত্য, তাদের সংখ্যা শতকরা ১ ভাগেরও কম। এ পৃথিবীর এত উন্নতি, তাতে নারীর অবদান কোনো অংশেই কম নয়। শ্রমিক থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ে নারীর অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু এ কথাও সত্য, বিশ্বব্যাপী নারী নানা রকম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। খুব কম সময়ই এর প্রতিকার পায়। অধিকাংশ দেশে নির্যাতনের শিকার নারী মুখ বুজে সব সহ্য করে।

 

সমাজ যেহেতু সুবিচার করে না, তাই খুব কম সময় নির্যাতনের শিকার নারী আদালতের শরণাপন্ন হয়। বরং লোকসমাজে জানাজানি হয়ে যাবে- এই ভয়ে ও লজ্জায় আইন-আদালতের শরণাপন্ন হতে চায় না। ধর্ষণ এমন একটি জটিল অপরাধ, যা খুব কম সময়ে জানতে পারে মানুষ। ধর্ষণের শিকার নারী ও তার পরিবার বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চায়। পারিবারিক নিরাপত্তার কারণেই তারা তা করে।

 

একটা বিষয় ভেবে অবাক হতে হয়, উন্নত বিশ্ব, যারা নিজেদের সভ্য বলে দাবি করে, সেসব দেশেও নারীরা নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হয়। সারা বিশ্বে যে পরিমাণ নারী ধর্ষণের শিকার হয়, তার শতকরা ১ ভাগও স্থানীয় থানায় ও আদালতে মামলা হয় না। এর ফলে নারী নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র জানা সম্ভব হয় না।

 

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সুইডেন ও ইংল্যান্ডে নারী নির্যাতনের চিত্র বেশ ভয়াবহ। উন্নত বিশ্বের নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়, সম-অধিকারের কথা বলে তারা, কিন্তু নারীর প্রতি অত্যাচার, নির্যাতন, ধর্ষণ, শারীরিক অপমান এবং লাঞ্ছনার কোনো সুষ্ঠু বিচার নেই।

 

সারা বিশ্বের শতকরা ৩৬ ভাগ নারী নানা রকম নির্যাতনের শিকার হয়। এ কথা শুনে, যে কেউ অবাক হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রে ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সের শতকরা ৮৩ ভাগ নারী স্কুলে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়, অনেকে ধর্ষণের শিকার হয়। ইংল্যান্ডে প্রতি ৫ জনে ১ জন নারী (বয়স ১৬ থেকে ৫৯ বছর) যৌন হয়রানির শিকার হয়। দেশে দেশে নারী নির্যাতনের সংক্ষিপ্ত টিত্র তুলে ধরা হলো :  

                                     নির্যাতিত নারী নিজেকে সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে চায়

 

ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস

দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে ৭৩ হাজার নারী ধর্ষণের শিকার হয়। এ হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন ধর্ষণের শিকার হয় ২৩০ জন। কিন্তু এটাও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন নয়। এর বাইরেও আরো অনেক দুর্ঘটনা ঘটে, যা লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে যায়।

 

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তার থেকে আরো শতকরা ২৯ ভাগ বেশি নারী নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। যেহেতু নির্যাতিত সব নারী পুলিশ বা আইন-আদালতের শরণাপন্ন হয় না, তাই নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র ফুটে ওঠে না।  

                                                          বন্ধ কর নারী নির্যাতন

 

অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়াতে বছরে এ লাখেরও বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হয়। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, ২০১২ সালে ৫১ হাজার ২০০ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে, যাদের বয়স ১৮ বছরের বেশি নয়। অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ মারফত জানা যায়, অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি ৬ জন নারীর মধ্যে ১ জন ধর্ষণের শিকার হয়।

                                                  ডেনমার্কে নির্যাতনের শিকার এক নারী

 

ডেনমার্ক এবং ফিনল্যান্ড

ইউরোপের প্রতি তিনজন নারীর মধ্যে ১ জন শারীরিক অথবা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।  শতকরা ৫ ভাগ নারী ধর্ষণের শিকার হয়।

 

২০১৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মৌলিক অধিকার সংগঠন মারফত জানা যায়, ফিনল্যান্ডের শতকরা ৪৭ ভাগ নারী এবং ডেনমার্কে শতকরা ৫২ ভাগ নারী ধর্ষণের শিকার হয়। ইউরোপের উন্নত এ দুটি দেশ ও জাতি, এ দুদেশে নারী নির্যাতন এতটা প্রবল, তা ভাবলে অবাক হতে হয়।

 

সূত্র : হাফিংটন জার্নাল

 

 

রাইজিংবিডি/ ঢাকা/ ৭ জুলাই ২০১৫/ মোস্তফা আরিফ/সন্তোষ/এএন