আন্তর্জাতিক

ইতালির প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও রেনজি পদত্যাগ করেছেন। সংবিধান সংশোধন নিয়ে গণভোটে বিপুল ভোটে হেরে যাওয়ায় পদত্যাগ করলেন তিনি। গণভোটের পক্ষে ছিলেন রেনজি। গণভোটে জনগণের রায়ের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তিনি ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিলেন। গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার পর একইভাবে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান ডেভিড ক্যামেরন। স্থানীয় সময় রোববার মধ্যরাতে এক সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে রেনজি বলেন, গণভোটের বিপক্ষে অবস্থানকারীদের এখন পরিষ্কার প্রস্তাবনা আনা উচিত। ইতালির জাতীয় সম্প্রচারমাধ্যম আরএআই কেন্দ্রফেরত ভোটার জরিপের ফলাফলে জানিয়েছে, সংবিধান সংশোধনে আনা গণভোটের পক্ষে পড়েছে ৪২-৪৬ শতাংশ ভোট, আর বিপক্ষে পড়েছে ৫৪-৫৮ শতাংশ ভোট। আনুষ্ঠানিক ভোট গণনার প্রাথমিক তথ্যানুয়ায়ী, গণভোটে ‘হ্যাঁ’ পক্ষ ব্যাপক ব্যবধানে হেরেছে। ‘হ্যাঁ’ পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন রেনজি। প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী, ‘হ্যাঁ ভোট’ পড়েছে ৩৯-৪৩ শতাংশ এবং ‘না ভোট’ পড়েছে ৫৭-৬১ শতাংশ। সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে রেনজি বলেন, ‘আমাদের সবার ভাগ্য প্রসন্ন হোক।’ তিনি জানান, সোমবার বিকেলে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি তার পদত্যাগের বিষয়ে জানাবেন এবং পরে পদত্যাগপত্র প্রেসিডেন্টের কাছে জমা দেবেন। ধারণা করা হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট তাকে চলতি মাসে বাজেট বিল পাস হওয়া পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে অনুরোধ করবেন। আড়াই বছরের মাথায় তিনি পদত্যাগ করলেন। রেনজি বলেছেন, যে সংশোধন প্রস্তাব তিনি করেছিলেন, তাতে ইতালির আমলাতান্ত্রিকতা প্রশমিত হতো এবং দেশ আরো প্রতিযোগিতাপূর্ণ হতো। সংবিধান সংশোধন করে দেশকে প্রতিযোগিতামূলক করার উদ্যোগ নিলেও রেনজির বিরোধিতা করেন আমলারা। তার বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ্যে চলে আসে। না ভোটের  পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রচার চালায় জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলগুলো। এ গণভোটকে ইউরোপের প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া বলে অভিহিত করা হচ্ছে। জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল ফাইভ স্টার মুভমেন্ট জানায়, ‘যেহেতু প্রধানমন্ত্রী রেনজি পদত্যাগ করেছেন, সেহেতু তারা দেশ চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।’ রেনজির পদত্যাগের ঘোষণার পর দলটির নেতা লুইগি ডি মাইও বলেন, ‘আগামীকাল (আজ) থেকে আমরা ফাইভ স্টার মুভমেন্ট সরকারের যাত্রা শুরু করব।’ ফাইভ স্টার মুভমেন্টের নেতৃত্বে আছেন জনপ্রিয় কমেডিয়ান বেপে গ্রিলো। ‘না ভোট’ জয়ের কৃতিত্বও তাকে দিচ্ছেন অনেকে।   অভিবাসনবিরোধী অবস্থানে থাকা বিরোধী দল নর্দান লিগের নেতা মাত্তেও সালভিনি গণভোটের ফলাফলকে ‘জনগণের বিজয়’ বলে অভিহিত করেছেন। এদিকে, গণভোটের ফলাফল প্রকাশে আসার সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপের ডানপন্থি কোনো কোনো নেতা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ফ্রান্সের ফ্রন্ট ন্যাশনাল পার্টির নেতা ম্যারিঁ লি পেঁ এক টুইটে নর্দান লিগকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। কেন্দ্রফেরত ভোটার জরিপের ফলাফল প্রকাশের পর থেকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজারে এর প্রভাব পড়ে। ইউরোর বিপরীতে ডলারের দাম বাড়তে থাকে। ইউরো জোনের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি ইতালি। গণভোটের পর পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গণভোটে ভোট দিয়েছেন মোট ভোটারের প্রায় ৬০ শতাংশ। ইতালির নির্বাচনী ইতিহাসে এ পরিমাণ ভোট সাধারণত পড়ে না। ইতালির দক্ষিণাঞ্চলের চেয়ে উত্তরাঞ্চলে ভোটাররা ভোট দিয়েছেন বেশি। ইতালির গণভোটের ফলাফলকে কয়েকটি বিষয়ের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। না ভোট জয়ের ফলে ইতালিতে প্রতিষ্ঠানবিরোধী ও জাতীয়তাবাদী হাওয়া স্পষ্ট হয়েছে। ফাইভ স্টার মুভমেন্ট চায়, ইতালি ইউরো জোনে থাকবে কি না, তা নিয়ে গণভোট হোক। জুন মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়া, ফ্রান্সের অভিবাসনবিরোধী রাজনৈতিক দল ফ্রন্ট ন্যাশনালের উত্থান এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জাতীয়তাবাদী দল-গোষ্ঠীর জাগরণের মধ্যে ইতালির মানুষও জানিয়ে দিল তারা নিজেদের মতো জীবনব্যবস্থা চায়। ইতালিতে পাঁচ কোটি ভোটার রয়েছে। তবে ভোট পড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। ইউরোপের কর্মব্যস্ত উন্নত দেশগুলোতে ভোট পড়ার হার কমই থাকে।

     

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ ডিসেম্বর ২০১৬/রাসেল পারভেজ