আন্তর্জাতিক

‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’

খান মো. শাহনেওয়াজ : আনুষ্ঠানিকভাবে ২০ জানুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ নতুন প্রেসিডেন্ট পাচ্ছেন। এই প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন দেশের সফল আবাসন ব্যবসায়ী, টেলিভিশন উপস্থাপক, ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০ জানুয়ারি স্থানীয় সময় দুপুরে তিনি শপথ নেবেন এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে চার বছরের জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। রাজনীতিতে নবাগত ৭০ বছর বয়সি ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের একটি রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়নে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করেন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি রাজনীতিতে অভিজ্ঞ ও জনপ্রিয় মুখ হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটন। ৮ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে অনুষ্ঠিত ভোটে ট্রাম্প জয়লাভ করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। মাত্র দুবছর আগে প্রকাশ্য রাজনীতিতে এসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তি ও জয়ী হওয়ার নজির পৃথিবীতে নেই। সেই বিবেচনায় রাজনীতির ইতিহাসে ব্যতিক্রমী একটি প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নিচ্ছেন ২০ জানুয়ারি। ট্রাম্পের শপথ নেওয়ার মধ্য দিয়ে বর্তমান প্রেসিডেণ্ট বারাক হোসেন ওমাবার সরকারের অধ্যায় শেষ হয়ে যাবে এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন সরকার গঠন করবেন। রাষ্ট্রীয় ঐতিহ্য অনুযায়ী শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় আইনসভা ভবনে অর্থাৎ কংগ্রেস ভবনে। ইউএস ক্যাপিটল বা ক্যাপিটল বিল্ডিং নামের এই ভবন ওয়াশিংটন ডিসির সিয়াটল কাউন্টিতে আবাসিক এলাকা ক্যাপিটল হিলে অবস্থিত। ভবনটি ক্যাপিটল হিল নামেও পরিচিত। ক্যাপিটল ভবনের পশ্চিম লনে আয়োজন করা হয়েছে শপথ অনুষ্ঠানের। নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রানিং মেট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত মাইক পেন্সও এদিন শপথ নেবেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথের মূল প্রতিপাদ্য ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন।’ ২০১৩ সালের ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা শপথ নেওয়ার সময় মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘ফেইথ ইন আমেরিকা’স ফিউচার।’ এটি হবে যুক্তরাষ্ট্রের ৫৮তম প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠান আর ডোনাল্ড ট্রাম্প ৪৫তম ব্যক্তি, যিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। এর আগে এফডি রুজভেল্ট, বারাক হোসেন ওবামা, জর্জ ওয়াকার বুশ (জর্জ বুশ জুনিয়র), উইলিয়াম জেফারসন ক্লিনটন (বিল ক্লিনটন), রোনাল্ড উইলসন রিগ্যান ও কয়েকজন নেতা একের অধিক মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকায় ব্যক্তি হিসেবে ট্রাম্প হচ্ছেন ৪৫তম প্রেসিডেন্ট। আর ট্রাম্পের সরকার হবে দেশের ৫৮তম সরকার। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ২০ জানুয়ারি শুক্রবার স্থানীয় সময় ভোর ৬টায় নিরাপত্তা ফটকগুলো খুলে দেওয়া হবে। সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হবে কনসার্ট। ক্যাপিটল ভবনে মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে সকাল ১১টায়। আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে দুপুরে। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার পত্নী মেলানিয়া ট্রাম্প সকাল ১০টায় যাবেন প্রেসিডেন্ট ভবন হোয়াইট হাউসে। সেখানে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা তাদের অভ্যর্থনা জানাবেন। হোয়াইট হাউসে এই ‘এক্সিকিউটিভ টাইমে’ আপ্যায়ন শেষে ওবামা ও ট্রাম্প একই হেলিকপ্টারে করে যাবেন ক্যাপিটল হিলে শপথ অনুষ্ঠানে। আনুষ্ঠানিক শপথ পর্ব হবে দুপুরে। শপথ অনুষ্ঠানে গণ্যমান্য আট হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটন দম্পতি, জর্জ বুশ জুনিয়র ও লরা বুশ দম্পতিসহ প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট দম্পতিদের এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা। শপথ নেওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প উপস্থিত সুধী সমাবেশে ভাষণে দেবেন। এই ভাষণ মূলত অভিষেক ভাষণ, যা জাতির উদ্দেশে ভাষণ। ১৭৮৯ সালে জর্জ ওয়াশিংটন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার সময় থেকে এখন পর্যন্ত নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক ভাষণ হয়ে আছে শপথ অনুষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ যাবৎ নতুন প্রেসিডেন্টরা যত অভিষেক ভাষণ দিয়েছেন তার পরিধি হয়েছে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৪৪৫ শব্দের আর সর্বনিম্ন ১৩৫ শব্দের। ট্রাম্পের অভিষেক ভাষণের পর নতুন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের সম্মানে ও কংগ্রেস সদস্যদের অংশগ্রহণে থাকবে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে সূচনা হবে ডোনাল্ড ট্রাম্প অধ্যায়ের। লেখক: সাংবাদিক।

     

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ জানুয়ারি ২০১৭/শাহনেওয়াজ/এনএ/এএন