আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের অভিষেক ভাষণের গুরুত্বপূর্ণ অংশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার কিছু সময় পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের পূর্ণাঙ্গ অভিষেক ভাষণ প্রকাশ করেছে হোয়াইট হাউস। ৭০ বছর বয়সি ট্রাম্প স্থানীয় সময় শুক্রবার দুপুরে ক্যাপিটল হিলে শপথ গ্রহণ করেন। এ সময় তার পাশে ছিলেন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়াসহ ট্রাম্প পরিবারের সদস্যরা। বারাক ওবামা ও মিশেল ওবামাও ছিলেন সেখানে। যুক্তরাষ্ট্রকে ট্রাম্প কোথায় নিয়ে যেতে চান, অভিষেক ভাষণে তার পূর্বাভাস রয়েছে। এই ভাষণকে নতুন প্রেসিডেন্টের পথচলার নির্দেশিকা হিসেবে দেখা হয়। পাঠকদের জন্য ট্রাম্পের অভিষেক ভাষণের প্রথম থেকে কিছুটা তুলে ধরা হলো : ‘প্রধান বিচারপতি রবার্টস, প্রেসিডেন্ট কার্টার, প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন, প্রেসিডেন্ট বুশ, প্রেসিডেন্ট ওবামা, দেশবাসী ও বিশ্ববাসী : আপনাদের ধন্যবাদ। আমরা, আমেরিকার নাগরিকেরা, আমাদের দেশকে পুনর্গঠিত করতে এবং জনগণের প্রতি প্রতিশ্রুতির পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে আমরা এখন এক মহান প্রচেষ্টায় সম্মিলিত হয়েছি। সামনের বছরগুলোর জন্য সবাই মিলে আমরা আমেরিকার ও বিশ্বের পথচলা নির্ধারণ করব। আমরা চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলা করব। সব কষ্টের বিরুদ্ধে লড়ব। কিন্তু আমরা কাজ শেষ করতে চাই। প্রতি চার বছর অন্তর সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য আমরা এই সিঁড়িগুলোতে জমায়েত হই এবং এই ক্ষমতা হস্তান্তরে সদয় সহযোগিতার জন্য প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। তারা মহত্ত্বের পরিচয় দিয়েছেন। যাই হোক, আজকের অনুষ্ঠানের বিশেষ অর্থ রয়েছে। কারণ আমরা আজ শুধু এক প্রশাসন থেকে অন্য প্রশাসন অথবা এক পার্টি থেকে অন্য পার্টির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করছি না, বরং আমরা ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ক্ষমতা হস্তান্তর করছি এবং তা আপনাদের কাছে ফিরিয়ে দিচ্ছি, আমেরিকার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিচ্ছি। দীর্ঘ সময় আমাদের রাজধানীর ছোট্ট একটি দল সরকারের কাছ থেকে পুরস্কৃত হয়েছে, যখন জনগণকে তার মূল্য দিতে হয়েছে। ওয়াশিংটন ফুলেফেঁপে উঠেছে, কিন্তু জনগণ সেই সম্পদের ভাগিদার হতে পারেনি। রাজনীতিকদের কপাল খুলেছে, কিন্তু কর্মসংস্থান হারিয়েছে এবং কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরা নিজেদের রক্ষা করেছে কিন্তু আমাদের দেশের জনগণকে নয়। তাদের জয়গুলো আপনাদের জয় হয়ে ওঠেনি, তাদের বিজয় আপনাদের বিজয় হয়ে ওঠেনি এবং যখন তারা আমাদের রাজধানীতে উদযাপনে মেতেছে, তখন দেশজুড়ে টেনেহিঁচড়ে দিনচলা পরিবারগুলোর কাছে উদযাপনের জন্য তেমন কিছুই নেই। সব ধরনের পরিবর্তন, যা এখান থেকে শুরু হবে এবং এখনই শুরু হবে, কারণ এই মুহূর্ত আপনাদের মুহূর্ত, এত আপনারা সবাই অন্তর্ভুক্ত হবেন। আজ এখানে সমবেত এবং সারা বিশ্ব থেকে যারা দেখছেন, সবাই এর সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত। এটি আপনাদের দিন। এ তো আপনাদের উদযাপন। এবং এই যুক্তরাষ্ট্র আপনাদের দেশ। কোন দল দেশ শাসন করছে, তা সত্যিই কোনো বিষয় নয়, জনগণের দ্বারা দেশ শাসিত হচ্ছে কি না, সেটিই বিষয়। ২০ জানুয়ারি ২০১৭ এই দিনকে আবার জনগণের এই দেশের শাসক হওয়ার দিন হিসেবে স্মরণ করা হবে। ভুলে যাওয়া নারী-পুরুষদের আর কখনোই ভুলে যাওয়া হবে না।’ ট্রাম্প তার অভিষেক ভাষণে আমেরিকার শিশুদের জন্য ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দিতে চেয়েছেন, দরিদ্র পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর কথা বলেছেন। বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষার নিশ্চয়তা দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। তা ছাড়া অপরাধ, বিভিন্ন চক্র ও মাদকের কারণে অনেক সম্ভাবনাময়ী শিক্ষার্থী মারা যাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। এ বিষয়ে অভিষেক ভাষণে তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘আমেরিকান হত্যাযজ্ঞ এখান থেকে এবং এখন থেকেই বন্ধ করতে হবে।’ নিজেদের দেশের সীমান্ত অরক্ষিত রেখে অন্য দেশের সীমান্ত সুরক্ষায় অর্থ বিনিয়োগ ও নিজেদের সেনাদের উন্নয়নের পরিবর্তে অন্য দেশের সেনাদের অর্থ দেওয়ার বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। তা ছাড়া অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি। ট্রাম্পের ভাষণের পুরোটা জুড়ে জাতীয়তাবাদ ও জাতীয় ঐক্য বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। তিনি ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। একেবারে শেষের দিকে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে আমেরিকাকে আবারও শক্তিশালী করে তুলব। আমরা আবার সম্পদশালী হয়ে উঠব। আমরা আবার আমেরিকাকে গর্বিত করব। আমরা আবার আমেরিকাকে নিরাপদ করব। এবং অবশ্যই আমরা আমেরিকাকে আবার মহান করে তুলব। ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনাদের মঙ্গল করুন, এবং যুক্তরাষ্ট্রেরও মঙ্গল করুন।’ রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ জানুয়ারি ২০১৭/রাসেল পারভেজ/এএন