আন্তর্জাতিক

বেকার হোস্টেলে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য সরানোর দাবি মুসলমান ছাত্রদের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য সরানোর দাবি তুলেছে কলকাতার বেকার হোস্টেলের মুসলমান ছাত্রদের একাংশ। বঙ্গবন্ধু ছাত্রজীবনে কলকাতার যে ছাত্রাবাসে থাকতেন, সেই বেকার হোস্টেলের বর্তমান বাসিন্দাদের একাংশ এই দাবি তুলেছে। মঙ্গলবার বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। বেকার হোস্টেলটি মুসলমান ছাত্রদের আবাস। মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য সরানোর দাবি নিয়ে কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসে ছাত্রদের একাংশ যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে সেখানে পৌঁছানোর আগেই পুলিশ তাদের গতিরোধ করে। তাদের দাবি সনদও জমা নিতে চায়নি উপ-দূতাবাস কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় থানার অফিসার-ইন-চার্জ সেটি গ্রহণ করেছেন বলে দাবি করেছেন পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ কামরুজ্জামান। সরকারী ছাত্রাবাস বেকার হোস্টেলের যে ঘরে শেখ মুজিবুর রহমান থাকতেন, বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে সেখানে একটি সংগ্রহশালা তৈরি হয়েছে । ওই সংগ্রহশালাতেই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করেন বাংলাদেশের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি।

 

বর্তমানে বেকার হোস্টেলে বসবাসকারী ছাত্রদের মধ্যে যারা ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলার দাবি করছেন, তারা বলছেন গোটা হোস্টেল চত্বরে ইসলামিক পরিমণ্ডল রয়েছে। সেখানে একটি মসজিদও আছে। তার মধ্যে কোনও ব্যক্তির ভাস্কর্য রাখাকে 'ইসলামবিরোধী' হিসেবে বর্ণনা করছে ছাত্ররা। তবে সেখানে যে সংগ্রহশালা রয়েছে, সে ব্যাপারে তাদের আপত্তি নেই। সাহেব আলি শেখ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এই হোস্টেলে যারা থাকি, সবাই মুসলমান। এটা একটা ধর্মীয় স্থানও - মসজিদ আছে। ইসলাম ধর্মে মূর্তি পূজা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তাই আমাদের হোস্টেলের পরিবেশে কোনও ব্যক্তির মূর্তি রাখা আমরা মেনে নিতে পারছি না।’ বেকার হোস্টেলে থেকে এমএ পড়ছেন নাজমুল আরেফিন। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি। আমাদের হোস্টেলেরই প্রাক্তন আবাসিক। কোনও অসম্মান হোক তার, সেটা আমরা চাই না। কিন্তু একই সঙ্গে এটা একটা ধর্মীয় প্রাঙ্গণ। সেখানে কোনও ব্যক্তির মূর্তি থাকা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। সংগ্রহশালা করা হোক, লাইব্রেরি করা হোক, কিন্তু মূর্তিটা সরানোর দাবি করছি আমরা।’ হোস্টেলের আরেক আবাসিক ছাত্র মুহম্মদ গোলাম মাসুদ মোল্লা বলেন, ‘ওই মূর্তিটা সংগ্রহশালার ঘরে লাগানো কাঁচের দরজার বাইরে থেকেই দেখা যায়। সেখানে অনেক ফুলও দেওয়া হয়েছে সম্প্রতি। একটা ইসলামিক পরিবেশে মূর্তি থাকাটা হারাম। তাই সেটিকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হোক।’ ঋতিক হাসান বেকার হোস্টেলেই থাকেন। যে কলেজে শেখ মুজিবুর রহমান পড়তেন, সেই মাওলানা আজাদ কলেজেই উদ্ভিদ বিজ্ঞানে অনার্স পড়ছেন। হোস্টেল থেকে কলেজে যাওয়ার পথে তিনি বলছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে আমরা সবাই অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি। কিন্তু ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী মূর্তি রাখা অনুচিত। তাই সেটিকে সরিয়ে দেওয়া হোক।’

 

পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই ছাত্রাবাস পরিচালনা করলেও তিনতলার যে ঘরে বঙ্গবন্ধু থাকতেন, সেখানে তৈরি হওয়া সংগ্রহশালাটি তাদের সহযোগিতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস দেখাশোনা করে। ঘরের মূল চাবিটিও থাকে উপ-দূতাবাসেই। অন্য চাবিটি থাকে হোস্টেলের সুপারিন্টেনডেন্ট ও মাওলানা আজাদ কলেজের অধ্যাপক দবীর আহমেদের কাছে।তার কাছে অবশ্য আবাসিক ছাত্ররা বঙ্গবন্ধুর মূর্তি সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে কোনো আবেদন জানান নি। ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে ওই সংগ্রহশালায় রাখা ভাস্কর্যে পুস্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় উপ-দূতাবাসসহ নানা সংগঠনের পক্ষ থেকে। বেকার হোস্টেলের প্রাক্তন আবাসিক ও বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলছিলেন, সেদিন থেকেই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য সরানোর ব্যাপারে সরব হয় বর্তমান আবাসিকরা। তিনি বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের কোনও সিলেবাসে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর সম্পর্কে পড়ানো হয় না। তাই সাধারন ছাত্রদের পক্ষে এটা জানা সম্ভব নয় বঙ্গবন্ধুর জীবন, বাংলা ভাষা, বাঙালি জাতির জন্য তার লড়াই সংগ্রাম কী ছিল। সেজন্যই সংগ্রহশালা হচ্ছে না, মূর্তি বসানো হচ্ছে। তা নিয়ে এতদিন ওই হোস্টেলের আবাসিকদের আগ্রহ ছিল না। কিন্তু ১৭ মার্চের অনুষ্ঠানের পরে ছাত্রদের মধ্যে একটা তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। ওই মূর্তি মুসলিম ছাত্রাবাসে রাখা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কলকাতার যে কোনো জায়গায় সম্মানের সঙ্গে ওই মূর্তি স্থাপন করা হোক।’ বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের সূত্র বলছে, তাদের কাছেও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে বেকার হোস্টেলের ছাত্রদের এই প্রতিক্রিয়ার খবর পৌঁছেছে। বিষয়টি তারা পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং ভারত সরকারের কাছে জানিয়েছেন। কিন্তু তারা এটা বুঝতে পারছেন না যে, সংগ্রহশালায় ভাস্কর্য বসানোর এতোদিন পরে হঠাৎ করে কেন ছাত্রদের মধ্যে এই প্রতিক্রিয়া তৈরি হলো। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ মার্চ ২০১৭/শাহেদ