আন্তর্জাতিক

উত্তর কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের বিকল্প কী আছে?

শাহিদুল ইসলাম : অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে কোরিয়া উপদ্বীপ। শক্তি প্রদর্শনে লিপ্ত পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কমিউনিস্ট উত্তর কোরিয়া। ফলে গোটা বিশ্ব শঙ্কিত হয়ে উঠেছে এক অসম পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কায়। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একাধিকবার উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ ও ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেয়া এবং এর ধারাবাহিকতায় কোরীয় উপদ্বীপ অঞ্চলে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর পর বিশ্ববাসীর এ ধারণা আরও বেশি পোক্ত হয়ে উঠেছে যে, শক্তির মদমত্ততায় আক্রান্ত কোরীয় উপদ্বীপে যেকোনো সময়ে বেজে উঠতে পারে যুদ্ধের দামামা। বিশ্বের শীর্ষ পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ায় পারমাণবিক হামলা চালাবে দীর্ঘদিন ধরে এরকম গুঞ্জন বাতাসে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছিল। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে অনেকগুলো আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। তা ছাড়া উত্তর কোরিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের যে চেষ্টা বারবার করা হয়েছে ,তাতে খুব একটা কাজ হয়নি। বরং জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে পারমাণবিক বোমা, হাইড্রোজেন বোমা এবং দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। ফলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীন আমেরিকার বর্তমান প্রশাসন ক্রমশই এটা বিশ্বাস করছে যে, সামরিক হস্তক্ষেপের কোনো বিকল্প নেই। তবে বিশ্বের অনেক দেশ কোনো রকম যুদ্ধ ছাড়াই শান্তিপূর্ণ উপায়ে এই সমস্যা সমাধানের বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। বিশেষ করে উত্তর কোরিয়ার দীর্ঘ দিনের মিত্র চীন এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশি তৎপর। চীনের আশঙ্কা, যুদ্ধ বেঁধে গেলে কোরিয়া উপদ্বীপের শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। এর ফল হিসেবে চীনের সীমান্তেও জটিলতা দেখা দেবে। তা ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার ঘনবসতিপূর্ণ রাজধানী শহর সিউল পিয়ংইয়ংয়ের ক্ষেপণাস্ত্রের আওতার মধ্যে আছে। ফলে আক্রান্ত হলে তারা মার্কিন মিত্র দক্ষিণ কোরিয়ায় যে সর্বপ্রথম হামলা করবে এটাই স্বাভাবিক। এমনকি উত্তর কোরিয়া আরেক মার্কিন মিত্র জাপানেও তাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর প্রকট সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া পৃথিবীর খ্যাতনামা সব বুদ্ধিজীবী মনে করেন, এই ধরনের যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতি ধ্বংস করে দেবে। কারণ, এতে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও চীনের মতো প্রথম সারির অর্থনৈতিক শক্তিগুলো জড়িয়ে পড়বে, যাদের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের উন্নত দেশগুলো। শান্তিপূর্ণ সমাধানের বিকল্প প্রস্তাবের বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার ইউয়ানশে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক জন ডিলিউরি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, কোন নিষেধাজ্ঞা বা চোখ রাঙানি নয়, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত দ্বি-পাক্ষিক বিভিন্ন সহায়তা প্রকল্পের মাধ্যেম এই সমস্যার সমাধান করা। বিশেষ করে ব্যাপক ঋণ সহায়তার মাধ্যমে উত্তর কোরিয়াকে তাদের অর্থনীতি উন্নয়নের সুযোগ করে দেওয়া। কিম জং-উনকে এই মর্মে নিশ্চয়তা দেওয়া যে, বিশ্ববাসী তার সঙ্গে আছে। বর্তমান বিশ্বে যেমন যুদ্ধের ঘনঘটা আছে তেমনি আছে শান্তির জন্য জোরালো প্রয়াস। আজকের পারমাণবিক বিশ্বে, কেউই চায় না একটা যুদ্ধ বেঁধে যাক। বিশেষত, হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক যুদ্ধের যে নির্মমতা ও ভয়াবহতা পৃথিবী প্রত্যক্ষ করেছে এর পুনরাবৃত্তি হোক- শান্তিকামী মানুষ তা প্রত্যাশা করে না। তাই সকলের আবেদন ‘যুদ্ধ নয় শান্তি’। এখন দেখার বিষয়, দাম্ভিকতার প্রতিভূ ডোনাল্ড ট্রাম্প কোন পথে হাঁটেন? রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ এপ্রিল ২০১৭/শাহিদুল ইসলাম/রাসেল পারভেজ