আন্তর্জাতিক

সেলফি না কিলফি : বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল

শাহিদুল ইসলাম : অনেকদিন পর কোনো পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলো বা সবাই মিলে কোথাও বেড়াতে গেলেন কিংবা কোনো উৎসবে- বর্তমান সময়ে এরকম যেকোনো কিছুর সঙ্গেই ওতপ্রোতভাবে মিশে গেছে সেলফি শব্দটি। বলতে গেল সেলফি-জ্বরে আক্রান্ত প্রযুক্তিবিশ্বের মানুষ। যার মাশুল দিতে হচ্ছে মৃত্যুতে। সেফলি হয়ে উঠেছে কিলফি। অর্থাৎ মৃত্যুফাঁদ। এই ফাঁদে পড়ে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। নিজ হাতে মোবাইল নিয়ে নিজের ছবি তোলার এই বিষয়টি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে, এটি ছাড়া কোনো আনন্দময় মুহূর্ত যেন পূর্ণতা পায় না। সেলফি প্রযুক্তি বদলে দিয়েছে মানুষের ফটোগ্রাফির অভ্যাস। নিজেই নিজের চেহারা দেখে এবং সময়ে সুযোগে পছন্দের মানুষদের নিয়ে সেলফি তোলা এখন রীতিমতো ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। আজকাল আনন্দ-উৎসব ছাড়িয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সেলফি তোলা রোমঞ্চিত মুহুর্ত উদযাপনের উপলক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর জন্য দুর্ঘটনায় পড়ে মৃত্যুও হচ্ছে অহরহ। সেলফি তুলতে মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সম্প্রতি একটি যৌথ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আমেরিকার কার্নেগি মেলান বিশ্ববিদ্যালয় এবং দিল্লির ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড টেকনোলজি। দৃষ্টি ফেলা যাক সেই প্রতিবেদনে। 'মি. মাইসেল্ফ অ্যান্ড মাই কিলফি : কারেক্টারাইজিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সেলফি ডেথ' শিরোনামে পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা যায়, সেলফি তুলতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্বে সবার শীর্ষে রয়েছে ভারত। ২০১৪ সালের মার্চ থেকে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা যায়, সারা পৃথিবীতে সেলফি তুলতে গিয়ে ১২৭টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, যার ৭৬টি ঘটেছে ভারতে এবং মৃত্যুর শিকার অধিকাংশই তরুণ। ভারতসহ সারা পৃথিবীতে সেলফি তুলতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে যাওয়া সম্পর্কে ক্লিনিক্যাল সাইক্লোজিস্ট সালমা প্রভু বলেন, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম এবং স্নাপচ্যাটের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় হতে চাওয়া কিংবা বেশি বেশি লাইক বা কমেন্ট পাওয়ার নেশা-ই তরুণদের ঠেলে দিচ্ছে এই করুণ পরিণতির দিকে। এ ছাড়া তিনি প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সমানভাবে দায়ী করেন। কারণ বর্তমানে তারা এমনভাবে তাদের মোবাইল প্রযুক্তিপণ্য এবং এর আনুষাঙ্গিক জিনিসগুলো (সেলফি স্টিক বা মোবাইলের সামনের ক্যামেরা) তৈরি করছে, যা তরুণদের আরো বেশি সেলফিপ্রবণ করে তুলছে। ভারতে যখন সেফলি-কিলফির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি তখন  এ থেকে পরিত্রাণে দেশটিতে কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাও বিবেচ্য। সেফলি-মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় ভারতীয় পুলিশ প্রশাসন ইতিমধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পুলিশের ডেপুটি কমিশনার প্রেমজিত ধাহা বলেন, ‘আমরা সারা দেশে সেলফি তোলার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করা শুরু করেছি। এ ছাড়া চলতি বছরের জুন মাসের ২৮ তারিখ থেকে টুইটারে সেইফ মনসুন টিপস নামের একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘এই কর্মসূচি মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াবে। তারা বিপজ্জনক জায়গায় গিয়ে সেলফি তোলা থেকে বিরত থাকবে।’ শুধু ভারতেই নয়, উন্নত দেশগুলোতেও সেফলি তোলার ক্ষেত্রে জনগণকে সতর্ক করা হচ্ছে। তবে যে বিষয়টি বলতেই হয়, সেলফি তোলা নিষিদ্ধ কোনো বিষয় নয়। কিন্তু তা যেন আমাদের প্রাণ কেড়ে না নেয়, সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। সেলফি তুলতে গিয়ে বাংলাদেশেও কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে- সে কথা আমরা জানি। এখন যা করণীয়, তা হলো- সেলফি তুলুন কিন্তু সাবধানে। সচেতন থাকুন- জীবন বাঁচবে।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ জুলাই ২০১৭/রাসেল পারভেজ