আন্তর্জাতিক

চীনের সর্বাধুনিক যুদ্ধজাহাজ কেন ইউরোপীয় জলসীমায়?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউরোপীয় জলসীমা বাল্টিক সাগরে পৌঁছেছে চীনের সর্বাধুনিক যুদ্ধজাহাজ। কিন্তু কেন? রাশিয়ার নৌবাহিনীর সঙ্গে সামরিক মহড়ায় অংশ নিতেই বাল্টিক সাগরে পৌঁছৈছে চীনা যুদ্ধজাহাজ। এই প্রথম চীন ও রাশিয়া এ ধরনের মহড়ায় অংশ নিচ্ছে। একে শক্তির প্রদর্শনী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে সিএনএন অনলাইন জানিয়েছে, রাশিয়ান ও চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে সপ্তাহব্যাপী সামরিক মহড়ায় চীনের মিসাইল-গাইডেড ডেস্ট্রয়ার যুদ্ধজাহাজ অংশ নিচ্ছে। ইউরোপীয় জলভাগে এই দুই দেশ প্রথমবার এমন কোনো মহড়ায় অংশ নিচ্ছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অ্যান্টি-সাবমেরিন যুদ্ধ ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে মহড়া চালানো হবে। এই মহড়ার কেন্দ্র নির্বাচন করা হয়েছে ন্যাটোর মিত্র পোল্যান্ড ও লিথুনিয়ার মধ্যকার রাশিয়ার ছিটমহল কালিনিনগ্রান্দকে। চীন জানিয়েছে, তাদের যুদ্ধজাহাজ টাইপ ০৫২ডি ডেস্ট্রয়ার হেফেই-এর জন্য এটি হবে প্রথম যৌথ মহড়ায় অংশগ্রহণ। দুই বছর আগে যুদ্ধজাহাজটি চীনা নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে একটি মিসাইল ফ্রিগেট, একটি সরবরাহকারী জাহাজ ও রাশিয়ার প্রায় ১০টি যুদ্ধজাহাজ। পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক জলভাগে যুদ্ধজাহাজ পাঠাচ্ছে চীন- ১০ বছর আগে যা চিন্তাই করা যেত না। ন্যাটো মিত্রদের না জানিয়েছে তারা অগ্রসর হতো না। ইংলিশ চ্যানেল ও উত্তর সাগরে মহড়ায় যাওয়ার সময় ব্রিটিশ, ডাচ ও ড্যানিশ যুদ্ধজাহাজ চীনের যুদ্ধজাহাজগুলো পাহারা দিয়ে নিয়ে যেত। বিশ্লেষকদের দাবি, এবার মহড়ার জন্য চীনের বাল্টিক সাগর পছন্দ করার ঘটনাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চল নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো মিত্রদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই জলভাগে চীনের আগমন এই বার্তা দিচ্ছে যে, তারা জানান দিতে চায়, শক্তিতে তারাও অন্যদের মতো। শক্তির প্রদর্শনী বাল্টিক সাগরে মহড়ার ঘোষণায় চীন দাবি করেছে, এ মহড়ায় তারা কোনো ‘তৃতীয় পক্ষ’-কে লক্ষ্য করছে না। কিন্তু চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস বেইজিংভিত্তিক নৌবিশেষজ্ঞ লি জিকে উদ্ধৃত করে বলেছে, শীর্ষ পর্যায়ের যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতির মধ্যে এক ধরনের বার্তা আছে। লি জিয়ের উদ্ধৃতি টেনে বলা হয়েছে, ‘সর্বাধুনিক মিসাইল-গাইডেড ডেস্ট্রয়ার পাঠিয়ে রাশিয়ার প্রতি আন্তরিকতা প্রকাশ করেছে চীন এবং যারা আমাদের উসকানি দিতে চায়, তাদের জন্যও একটি কড়া বার্তা পাঠিয়েছে।’ ১০ হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে বাল্টিক সাগরে পৌঁছেছে চীনের যুদ্ধজাহাজ। চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, গত সপ্তাহে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার সময় সেখানে লাইভ-ফায়ার মহড়া চালায় যুদ্ধজাহাজটি। তবে সে সময় চীনের আরেক মিসাইল-গাইডেড ডেস্ট্রয়ার চাংচুনও ভূমধ্যসাগরে ছিল। চীনের এ দুই যুদ্ধজাহাজ ইতালির নৌবাহিনীর সঙ্গে মহড়ায় অংশ নেয়। আটলান্টিক কাউন্সিলের ব্রেন্ট স্কাউক্রফট সেন্টার অন ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটির উপ-পরিচালক মাগনুস নরডেনম্যান বলেছেন, বিশ্ব বাণিজ্যে চীনের ক্রমবর্ধমান ভূমিকার অর্থ দাঁড়ায়, উত্তর ইউরোপের বন্দরগুলোতে প্রবেশাধিকার সংরক্ষণ করতে চায় তারা। গত সপ্তাহে প্রথমবারের মতো বিদেশে যুদ্ধজাহাজসহ সেনা পাঠিয়েছে চীন। জিবুতিতে একটি সামরিক ঘাঁটি তৈরি করেছে তারা। সেখানে সেনা ও যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে চীন। ভারত মহাসাগরে থাকা যুদ্ধজাহাজগুলোকে এই সামরিক ঘাঁটি সহায়তা করতে পারবে।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ জুলাই ২০১৭/রাসেল পারভেজ