আন্তর্জাতিক

রোহিঙ্গা মুসলিমরা স্থানীয় নয় : মিয়ানমারের সেনাপ্রধান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিয়ানমারের সেনাপ্রধান বলেছেন, রোহিঙ্গা মুসলিমরা স্থানীয় নয়। ব্রিটিশ উপনিবেশের সময় তাদের আনা হয়েছিল। দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনীর প্রধান ও সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি সিনিয়র জেনারেল মিন অং হলাইং মিয়ানমারে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের কাছে এ কথা বলেছেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্টক মার্সিয়েল বৃহস্পতিবার তার ফেসবুক পেজে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে মিয়ানমার সেনাপ্রধানের এই বক্তব্য পোস্ট করেছেন। এর আগে তাদের মধ্যে বৈঠক হয়। বৌদ্ধপ্রধান মিয়ানমারের সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী ব্যক্তি সেনাপ্রধান মিন অং হলাইং। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক নয়- তার এই অপোশহীন অবস্থান রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথে সবচেয়ে বড় বাধা। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক সহিংসতার মুখে এরই মধ্যে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। সেনাপ্রধান মিন অং রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ বলে সম্বোধন করে বলেছেন, এই সমস্যার জন্য ব্রিটিশ উপনিবেশবাদীরাই দায়ী। বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে মার্সিয়েলের ফেসবুক পোস্টে সেনাপ্রধানকে উদ্ধৃত করা হয়েছে এভাবে, ‘বাঙালিদের এ দেশে মিয়ানমার আনেনি, ব্রিটিশ উপনিবেশবাদীরা তাদের এনেছে।’ সেনাপ্রধান আরো বলেছেন, ‘তারা স্থানীয় নয়, নথিপত্র থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়, ঔপনিবেশিক আমলে তাদের বাঙালি বলে ডাকা হতো, রোহিঙ্গা নয়।’ বুধবার জাতিসংঘের মাবাধিকার কমিশন জানিয়েছে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চল থেকে বর্বরভাবে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে তাড়িয়ে দিয়েছে। তারা যেন ফিরে যেতে না পারে, সেজন্য তাদের ঘরবাড়ি, ফসলের ক্ষেত ও গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর আউটপোস্টে তথাকথিত রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার অজুহাতে ভয়ংকর অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। তবে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন ৬৫ জন রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে বুধবার জানায়, ২৫ আগস্টের আগেই তাদের ওপর হামলা ও নির্যাতন শুরু করে সেনাবাহিনী। আজ বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী ও ডি ফ্যাক্টো সরকারপ্রধান অং সান সু চির টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। গত বছর নির্বাচনের মাধ্যমে সু চি ক্ষমতায় এলেও মূল কর্তৃত্ব এখনো সেনাবাহিনীর হাতে রয়ে গেছে। এদিকে, মিন অং অভিযোগ করেছেন, ‘আরসার নেতৃত্বে স্থানীয় বাঙালিরা হামলায় অংশ নেয়। এ কারণে অনিরাপদ বোধ করায় তারা পালিয়ে যাচ্ছে।’ ২৫ আগস্টে নিরাপত্তা বাহিনীর আউটপোস্টে হামলার জন্য আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যদের দায়ী করে সেনাবাহিনী। আন্তর্জাতিক অধিকার সংস্থাগুলো রোহিঙ্গা সংকটের জন্য জেনালের মিন অংকে ব্যক্তিগতভাবে দায়ী করে থাকে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরানোর বিষয়ে তিনি আগ্রহী নন। তিনি বলেছেন, ‘বাঙালিদের নিজস্ব ভূমি বাংলা।’ তিনি আরো বলেন, ‘নিজেদের জন্য নিরাপদ স্থান মনে করে একই ভাষা, সংস্কৃতি ও জাতির অন্য কোনো দেশে তারা পালিয়ে গিয়ে থাকতে পারে।’ সেনাপ্রধান মিন অং অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বাড়িয়ে বলা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের অবস্থাকে গণমাধ্যমে ভুলভাবে দেখানো হচ্ছে। ব্রিটিশ উপনিবেশিক আমলে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে আনা হয় বলে যে দাবি করেছেন জেনারেল মিন অং, তা ঐতিহাসিকভাবে ঠিক নয়। নৃতাত্ত্বিক ও ইতিহাসবিদদের মতে, ব্রিটিশ উপনিবেশের বহু আগে থেকে রাখাইনে রোহিঙ্গারা বসবাস করছে। তথ্যসূত্র : আলজাজিরা অনলাইন  

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ অক্টোবর ২০১৭/রাসেল পারভেজ