আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নারী-পুরুষের মধ্যে বিয়ে, তালাক, সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর অক্ষমতার পরিণতি কী হতে পারে- এসব বিষয়ে বিবেচনাপ্রসূত চুক্তিনামা শুধু আধুনিক সময়েই নয়, কিছুটা তারতম্য থাকলেও তা ছিল প্রায় ৪ হাজার বছর আগেও। প্রত্নতাত্ত্বিকরা সম্প্রতি তুরস্ক থেকে একটি কাবিননামা (বিয়ের চুক্তিপত্র) উদ্ধার করেছেন, যাতে বিয়ে বিচ্ছেদ ও প্রজনন ক্ষমতার বিষয়ে সুস্পষ্ট শর্তের উল্লেখ রয়েছে। বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, জানা ইতিহাসে এটি হলো সবচেয়ে প্রাচীন কাবিননামা। আসিরীয় যুগের পিণ্ডাকৃতির একটি মাটির খণ্ডে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার শর্তগুলো খোদাই করে লেখা রয়েছে। উল্লেখ্য, আসিরীয়রা মাটির পাত্রে খোদাই করে লেখার কৌশল উদ্ভাবন করেছিল এবং তাদের বর্ণমালা ছিল। তুরস্কের হারান বিশ্ববিদ্যালয়ে রক্ষিত বিয়ের চুক্তির এই মাটির পিণ্ড ও সংশ্লিষ্ট আরো কিছু জিনিসপত্র নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ শেষে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আসিরীয় যুগের এই কাবিননামা-ই প্রাচীনতম কাবিননামা। ৪ হাজার বছর আগের এই কাবিননামায় লাকিপাম নামে পুরুষ ও হাতালা নামে নারীর মধ্যে বিয়ের শর্তগুলো বলা হয়েছে। একটি শর্ত এমন- হাতালা যদি সন্তান জন্মদানে অক্ষম হন, তবে তার স্বামীর জন্য একজন কৃতদাসী এনে দেবেন তিনি। এই কৃতদাসী তার স্বামীর শয্যাসঙ্গী হবেন। এই কাবিননামার বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে গাইনিকলোজিক্যাল এনডোক্রাইনোলোজি জার্নালে। এতে বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, প্রজনন অক্ষমতার সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন উপায় রয়েছে, তার মধ্যে একটি সারোগেসি (গর্ভ ভাড়া)। ৪ হাজার বছর আগে আসিরীয় যুগের মাটির পিণ্ডে লেখা কাবিননামাতেও বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে। এই কাবিননামা থেকে পরিষ্কার হচ্ছে, প্রজনন অক্ষমতার সমস্যা শুধু আধুনিক সময়ের নয়, বহুকাল আগে থেকেই মানুষের এই সমস্যা ছিল এবং তা সমাধানের জন্য বিভিন্ন উপায়ও অবলম্বন করতো তারা। লাকিপাম ও হাতালার মধ্যে যদি দাম্পত্য সমস্যা হয়, তাহলে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদের কী শর্ত হবে, তাও কাবিননামায় উল্লেখ রয়েছে। যদি লাকিপাম তার স্ত্রীকে তালাক দিতে চান, তাহলে তাকে (হাতালা) ৫ মিনা রুপা দিতে হবে। আর যদি হাতালা তার স্বামীকে তালাক দিতে চান, তাহলে তাকেও (লাকিপাম) ৫ মিনা রুপা দিতে হবে। উল্লেখ্য, ওই সময় ওজন ও মুদ্রার একক ছিল মিনা। বর্তমান হিসাব অনুযায়ী, এক মিনা সমান ৫৭১ গ্রাম। হাতালা ও লাকিপাম উভয়ের জন্য তালাকের ক্ষেত্রে ৫ মিনা অর্থাৎ ২ কেজি ৮৫৫ গ্রাম রুপা ধার্য করা হয়। কাবিননামা লেখা মাটির পিণ্ডটি পাওয়া যায় বর্তমান তুরস্কের কালতেপে-কানেশ থেকে। এটি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এবং জাতিসংঘের ইউনেসকো ঘোষিত একটি বিশ্ব ঐতিহ্য। তথ্যসূত্র : এনডিটিভি অনলাইন
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ নভেম্বর ২০১৭/রাসেল পারভেজ