আন্তর্জাতিক

মুগাবের পদত্যাগে বিশ্ব প্রতিক্রিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের পদত্যাগের ঘোষণায় সেদেশের মানুষ যেমন উল্লসিত তেমনি আফ্রিকা অঞ্চলসহ বিশ্বজুড়ে একই অবহের অনুরণন দেখা গেছে। মঙ্গলবার তার পদত্যাগের ঘোষণা শোনার পর হাজার হাজার মানুষ রাজধানী হারারেসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় নেমে নাচে-গানে মেতে ওঠে। তারা মুগাবের পদত্যাগ উদযাপন করে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানায়। মুগাবের বয়স এখন ৯৩ বছর। ১৯৮০ থেকে ২১ নভেম্বর, ২০১৭ সাল পর্যন্ত জিম্বাবুয়ে শাসন করেছেন এবং জিম্বাবুয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন তিনি। স্বাধীনতা যুদ্ধের নায়ক থেকে মহান প্রেসিডেন্ট হিসেবে জিম্বাবুয়ের মানুষের কাছে সমাদৃত হলেও শেষ পর্যন্ত খলনায়কের মতো বিদায় নিতে হলো তাকে। ক্ষমতা আকড়ে রাখার খেসারত হিসেবে ‘পেছন দরজা দিয়ে বিদায়’ নিতে হলো ৩৭ বছরের এই শাসককে। স্ত্রী গ্রেস মুগাবেকে উত্তরসূরি করার জন্য ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগওয়াকে মুগাবে বহিষ্কার করার পর জিম্বাবুয়েতে নাটকীয় পট পরিবর্তন ও এর জেরে সেনাবাহিনীর নীরব অভ্যুত্থানে দেশের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ এবং শেষ পর্যন্ত তার পদত্যাগের ঘোষণা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে রেখেছিল আফ্রিকা অঞ্চল ও বিশ্ব সম্প্রদায়। তার পদত্যাগের ঘোষণার পর কিছু সরকার ও কয়েকজন কর্মকর্তার ব্যক্ত প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হলো এখানে। গিনির প্রেসিডেন্ট ও আফ্রিকান ইউনিয়নের (এইউ) প্রধান আলফা কোন্ডে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এটি খুবই লজ্জার যে মুগাবেকে পেছনের দরজা দিয়ে বিদায় নিতে হলো।’ মুগাবের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তিনি ‘খুবই আনন্দিত’। তবে তিনি এও বলেছেন, জিম্বাবুয়েতে সেনা অভ্যুত্থানের বিষয়ে মুগাবেকে সতর্ক করেছিল এইউ। জিম্বাবুয়ের স্বাধীনতা আন্দোলনে মুগাবের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে আলফা কোন্ডে বলেছেন, তিনি একজন আফ্রিকান নায়ক। তার কথা কখনো ভোলার নয়। তিনি মহান যোদ্ধা। মুগাবের পদত্যাগের পর তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি প্রতিবেশী দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা তার পূর্বনির্ধারিত সফরসূচি অনুযায়ী বুধবার হারারেতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। জিম্বাবুয়ে পরিস্থিতি নিয়ে তিনি অ্যাঙ্গোলার প্রেসিডেন্ট জোয়াও লরেনকোর সঙ্গে কথা বলছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স তাদের প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, মুগাবের আমলের শেষ কয়েক বছরে যারা দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন, সেসব মানুষের জন্য তার পদত্যাগ এক ধরনের বিজয়। জাম্বিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা হাকাইন্দে হিচিলেমা  জিম্বাবুয়ের উচ্ছ্বসিত জনতাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, মুগাবের পদত্যাগের ঘটনা আফ্রিকার অন্যান্য দেশের নেতাদের জন্য একটি বিশেষ বার্তা। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস জিম্বাবুয়ের জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। গুতেরেসের মুখপাত্র ফারহান হক বলেছেন, ‘মহাসচিব ও তার পূর্বসূরিরা সবসময় পরিষ্কার করে দিয়েছেন, আমরা আশা করি সব নেতা যেন তাদের জনগণের কথা শোনেন।’ ১৯৮০ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে জিম্বাবুয়ে। আর সেই স্বাধীনতা আন্দোলনের নায়ক ছিলেন মুগাবে। মঙ্গলবার তার পদত্যাগের ঘোষণার পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেন, মুগাবের শাসনামলে দমন-পীড়নের যে বৈশিষ্ট্য দেখা দিয়েছিল, মুগাবের পদত্যাগের ঘোষণার খবর তা থেকে দেশটির জনগণকে মুক্তির নতুন পথ দেখাবে। মুগাবের পদত্যাগে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনের কোনো দুঃখ নেই। বরং তিনি বলেছেন, এটি জিম্বাবুয়ের জনগণের জন্য এক আশার মুহূর্ত। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জিম্বাবুয়ের জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছে। মুগাবের পদত্যাগকে দেশটির মানুষের জন্য এগিয়ে যাওয়ার ঐতিহাস নতুন সুযোগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ওই বিবৃতিতে। তবে আইনের শাসন ও গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে জিম্বাবুয়ের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা। মঙ্গলবার মুগাবের পদত্যাগের ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে জাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আইয়ান খামা মুগাবের প্রতি পদত্যাগের আহ্বান জানান। তথ্যসূত্র : আলজাজিরা অনলাইন

     

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ নভেম্বর ২০১৭/রাসেল পারভেজ/সাইফুল