আন্তর্জাতিক

জেরুজালেম ইস্যুতে ইইউর সমর্থন চেয়ে প্রত্যাখ্যাত নেতানিয়াহু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতির প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সমর্থন চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। দীর্ঘ ২০ বছর পর ইসরায়েলের কোনো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ব্রাসেলস সফর করছেন নেতানিয়াহু। সোমবার সেখানে ইইউর এক আলোচনায় বক্তব্য রাখার সময় জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানীর স্বীকৃতি দিয়ে তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে ইউরোপীয় দেশগুলোর দূতাবাস স্থানান্তরের আহ্বান জানান তিনি।  কিন্তু ইইউর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোগেরিনি নেতানিয়াহুকে পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, জেরুজালেম ইস্যুতে ইইউর অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হবে না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় ফিলিস্তিনি-ইসরায়েলিদের মধ্যকার চরম স্পর্শকতার এই ইস্যু নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে একঘরে হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের এ পদক্ষেপের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে ইইউ। ব্রাসেলসে পৌঁছে নেতানিয়াহু আবারো ট্রাম্পের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ৩ হাজার বছর ধরে জেরুজালেম ইহুদিদের রাজধানী এবং ট্রাম্প বিষয়টির সময়োপযোগী স্বীকৃতি দিলেন। তিনি আরো বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, ইইউর সব বা অধিকাংশ দেশ তাদের দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করবে, জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেবে এবং নিরাপত্তা, অগ্রগতি ও শান্তির ক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত থাকবে।’  জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি ইসরায়েলের বর্তমান রাজধানী তেল আবিব থেকে তাদের দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করার কাজ শুরু করতে মার্কিন পররাষ্ট্র কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প। নেতানিয়াহুর আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে মোগেরিনি বলেন, জেরুজালেম ইস্যুতে আন্তর্জাতিক চুক্তিকে সমর্থন দিয়ে যাবে ইইউ। তিনি আরো বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনিদের সংঘাত সমাধানের একমাত্র বাস্তবিক উপায় ‘দুই রাষ্ট্র’ নীতির ওপর নির্ভর করছে, যেখানে জেরুজালেম হবে উভয়ের রাজধানী।’ তবে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ইহুদিদের ওপর আক্রমণের নিন্দা জানান তিনি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে ‘দুই রাষ্ট্র’ নীতি বাস্তবায়নের জন্য কাজ চলছে। এই নীতির মূল কথা হলো- ইসরায়েলের পাশাপাশি ফিলিস্তিনও হবে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। ব্রাসেলসের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে প্যারিসে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে কথা বলেন নেতানিয়াহু। এ সময় ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে বসতি স্থাপন কার্যক্রম বন্ধ করতে এবং ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আবারো সম্পৃক্ত হতে তার প্রতি আহ্বান জানান ম্যাক্রোঁ। ট্রাম্পের পদক্ষেপ কেন বিতর্কিত? ইসরায়েল দাবি করে, জেরুজালেম তাদের রাজধানী। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা দাবি করে, তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম। ১৯৬৭ সালে যুদ্ধের পর পূর্ব জেরুজালেম দখল করে ইসরায়েল এবং একে ইসরায়েলের সার্বভৌম এলাকা বলে দাবি করে আসছে দেশটি। ইসরায়েল দাবি করলেও যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণার আগ পর্যন্ত কোনো দেশ জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানীর স্বীকৃতি দেয়নি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মনে করে, জেরুজালেম হবে উভয় দেশের রাজধানী। যে কারণে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে, এমন সব দেশের দূতাবাসা তেল আবিবে রয়েছে।

ট্রাম্পের ঘোষণার পর বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে এবং বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। রোববারও ফিলিস্তিনসহ বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। ট্রাম্পকে তার সিদ্ধান্ত বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মহল। তথ্যসূত্র : বিবিসি অনলাইন রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ ডিসেম্বর ২০১৭/রাসেল পারভেজ