আন্তর্জাতিক

আগে দুই পা নিয়েছিল, এবার তার প্রাণ নিল ইসরায়েল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নয় বছর আগে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় দুই পা হারিছিলেন ফিলিস্তিনের ইব্রাহিম আবু থুরাইয়াহ। এবার তার প্রাণ নিল এক ইসরায়েলি স্নাইপার।  শনিবার গোপন অবস্থান থেকে থুরাইয়াহর মাথায় গুলি করে এক ইসরায়েলি। এতেই তার মৃত্যু হয়। থুরাইয়াহ নিহত হওয়ার ঘটনায় মাতম চলছে ফিলিস্তিনে। হত্যার শিকার হওয়ার দুই দিন আগে ইসরায়েলি বাহিনীর উদ্দেশে একটি ভিডিও বার্তা পাঠান থুরাইয়াহ। তিনি বলেছিলেন, ‘অধিগ্রহণকারী ইহুদি সেনাবাহিনীর উদ্দেশে আমি একটি বার্তা পাঠাচ্ছি।’ ওই বার্তায় তিনি বলেছিলেন, ‘এই ভূমি আমাদের। আমরা তা ছাড়ব না। আমেরিকা যে ঘোষণা দিয়েছে, তা প্রত্যাহার করতেই হবে।’ ২০০৮ সালে ইসরায়েলের বিমান হামলায় দুই পা ও একটি কিডনি হারিয়েছিলেন থুরাইয়াহ। ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী গাজা উপত্যকায় ইহুদি সেনাদের দখলদারত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন হুইল-চেয়ারের ওপর নির্ভরশীল এই ফিলিস্তিনি। জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ৬ ডিসেম্বর থেকে থুরাইয়াহ ও তার সঙ্গীরা মিলে বিক্ষোভ করছিলেন। বিদ্যুৎ সরবরাহের একটি খুটিতে চড়ে ফিলিস্তিনের পতাকা বাঁধতে দেখা যায় তাকে। শনিবার গাজা সীমান্তে বিক্ষোভের সময় ইসরায়েলি সেনাদের হামলায় ইয়াসির সুক্কার নামে আরেক ফিলিস্তিনি নিহত হন। এ ছাড়া অধিগৃহীত পশ্চিম তীরে বিক্ষোভের সময় আরো দুজন নিহত হন। জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে ট্রাম্প স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করতে গিয়ে ৬ ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত আটজন ফিলিস্তিনি নিহত হলেন। শনিবার থুরাইয়াহ ও নিহত অন্য তিন ফিলিস্তিনির দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। থুরাইয়াহর দাফনে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি অংশ নিয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে। তিনি হুইল-চেয়ারটি প্রায়ই বাড়িতে রেখে একটি পতাকা হাতে বিক্ষোভে অংশ নিতেন। তাকে যখন গুলি করা হয়, তখনো তার হাতে পতাকা ছিল। গাজার স্বাস্থ্য বিভাগের মুখপাত্র আশরাফ আল-কিদরা শনিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনী গুপ্ত হামলাকারীদের (স্নাইপার) ব্যবহার করছে, যাদের হাতে অস্ত্র ও কাঁদানে গ্যাস তুলে দেওয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, গ্যাস বোমা ব্যবহার করছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর প্রভাবে কয়েক ডজন মানুষের খিঁচুনি, বমি, কাশি ও হঠাৎ হৃদযন্ত্রের সমস্যা দেখা দিয়েছে। কিদরা অভিযোগ করেছেন, বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সহিংসতা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। চিকিৎসক, অ্যাম্বুলেন্স ও সংবাদকর্মীদের বেপরোয়াভাবে টার্গেট করছে তারা।

 

২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে গাজার মধ্যাঞ্চলে আল-বুরেইজ শরণার্থীশিবিরে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে বসেছিলেন থুরাইয়াহ। তখন ইসরায়েলের বিমান সেখানে হামলা চালায়। তিনি গুরুতর আহত হন। তার দুই পা কেটে বাদ দিতে হয়, তার একটি কিডনিও নষ্ট হয়ে যায়। সেদিন ওই বিমান হামলায় সাত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছিল। অসুস্থ বাবা-মা, ছয় বোন ও তিন ভাই নিয়ে থুরাইয়াহদের বড় সংসার ছিল। আহত হওয়ার আগে পেশায় মৎস্যজীবী ছিলেন তিনি। কিন্তু দুই পা ও এক কিডনি হারিয়ে দিশেহারা থুরাইয়াহ বসে থাকেননি, পরিবারের দায় এড়িয়ে যাননি, কিছু না কিছু কাজ করে তাদের সহযোগিতা করেছেন। গাড়ি ধুয়ে, কখনো বাজারে সবজি বিক্রি করে রোজগার করতেন তিনি। তথ্যসূত্র : আলজাজিরা অনলাইন রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ ডিসেম্বর ২০১৭/রাসেল পারভেজ