আন্তর্জাতিক

আবার প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী মাহাথির মোহাম্মদ!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার ৯২ বছর বয়সি মাহাথির মোহাম্মদকে দেশটির বিরোধী জোট আগামী সাধারণ নির্বাচনে তাদের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। আগস্ট মাসের মধ্যে মালয়েশিয়ায় সাধারণ নির্বাচন হবে। এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী ও এক সময়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন মাহাথির মোহাম্মদ। জনপ্রিয় বিরোধী নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম জেলে থাকায় নাজিবের বিরুদ্ধে মাহাথিরকে বেছে নিয়েছে বিরোধী জোট। নানা দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত নাজিবের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে মাহাথিরকে। একটানা ২২ বছর মালয়েশিয়া শাসন করেছেন মাহাথির। তার শাসনামলে প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে দেশটি। দীর্ঘসময় দেশ চালালেও তার বিরুদ্ধে অপ্রয়োজনীয় কর্তৃত্ববাদ খাটানোর অভিযোগ কম ছিল এবং শাসনামলের শেষ সময়ে সামান্য কিছু মানুষ তার বিরোধিতা করেছিল। মালয়েশিয়ায় এখনো পূজনীয় ব্যক্তিত্ব মাহাথির। আগামী নির্বাচনে তিনি যদি জয়ী হন, তাহলে তিনি হবেন বিশ্বের প্রবীণতম দেশনেতা। মাহাথির যদি জয়ী হন, তাহলে বিরোধীদলীয় নেতা ও এক সময়ে তার কট্টর বিরোধীতে পরিণত হওয়া আনোয়ার ইব্রাহিমের জন্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ খুলে যেতে পারে। এ ছাড়া রোববার বিরোধী জোটের সম্মেলনে জোট মহাসচিব সাইফুদ্দিন আবদুল্লাহ ঘোষণা দেন, ইব্রাহিমের স্ত্রী ওয়ান আজিজাহ ওয়ান ইসমাইলি উপপ্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী হচ্ছেন। সাইফুদ্দিন আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, নির্বাচনে যদি জোট জয়ী হয়, তাহলে আনোয়ার ইব্রাহিমের সাজা ক্ষমা করে দিতে জোটের সব দল মিলে দ্রুত আইনি প্রক্রিয়া শুরু করবে। তিনি মুক্ত হলে ফেডারেল সরকারে শিগগিরই ভূমিকা রাখা শুরু করবেন এবং দেশের অষ্টম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার নাম প্রস্তাব করা হবে। মাহাথির ও আনোয়ার ইব্রাহিমের পরস্পরবিরোধী রাজনীতির কারণে মালয়েশিয়ার রাজনীতি প্রায় দুই দশক ধরে একটি পরিচিত কাঠামোয় চলে আসছে। কিন্তু এবার তাদের মধ্যে ঐক্য ও জোট গঠন দেশটির রাজনীতিতে নতুন কাঠামোর জন্ম দিয়েছে।

 

ইব্রাহিমের স্ত্রী ওয়ান ইসমাইলি ও মাহাথির মোহাম্মদ

১৯৯০-এর দশকে মাহাথিরের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন ইব্রাহিম। তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে মাহাথিরকে ছেড়ে নতুন রাজনীতি শুরু করেন তিনি এবং মাহাথিরের কট্টর সমালোচকের ভূমিকায় দেখা যায় তাকে। ইব্রাহিম মালয়েশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী হন কিন্তু তিনি বহিষ্কৃতও হন। এরপর পায়ুকামের অভিযোগে তার জেল হয়। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করে সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন ইব্রাহিম। ২০১৩ সালে সাধারণ নির্বাচনে নাজিবের বিরুদ্ধে বিরোধী জোট গঠন করেন ইব্রাহিম। সেবার নির্বাচনে নাজিবের নেতৃত্বাধীন বারিসান ন্যাশনাল কোয়ালিশন জনপ্রিয় ভোট কম পেলেও আসন বেশি পাওয়ায় সরকার গঠন করেন তিনি। এরপর ২০১৪ সালে আবার পায়ুকাম মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন ইব্রাহিম এবং তার জেল হয়। এই দোষে তিনি রাজনীতিতে নিষিদ্ধ হন। তবে যদি রাজকীয় ক্ষমা পান, তাহলে আবার রাজনীতিতে আসতে পারবেন। নাজিবের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদই মাহাথির ও ইব্রাহিমকে একজোট হতে সাহায্য করেছে। মালয়েশিয়ার ‘ওয়ানএমডিবি’ রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে নাজিবের বিরুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ জানিয়েছে, এই তহবিল থেকে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার নয়ছয় করা হয়েছে। তবে মালয়েশিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল তদন্তের পর এ অভিযোগ থেকে নাজিবকে নির্দোষ ঘোষণা করেন। তথ্যসূত্র : রয়টার্স অনলাইন

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ জানুয়ারি ২০১৮/রাসেল পারভেজ/এসএন