আন্তর্জাতিক

সু চির নৈতিক নেতৃত্বের ঘাটতি!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রোহিঙ্গা সংকটের ওপর পরামর্শ দেওয়ার জন্য মিয়ানমার সরকারের গঠিত আন্তর্জাতিক পরামর্শক পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিদগ্ধ কূটনীতিক বিল রিচার্ডসন। তিনি দাবি করেছেন, ‘এটি উপরে উপরে লোক দেখানো কাজ করছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রিচার্ডসন অভিযোগ করেছেন, মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেতা অং সান সু চির নৈতিক নেতৃত্বের ঘাটতি রয়েছে। রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রিচার্ডসন বলেছেন, ‘আমার পদত্যাগের প্রধান কারণ হলো, এই পরামর্শক পর্ষদ একটি লোক দেখানো পর্ষদ।’ একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, মিয়ানমার সরকারের চিয়ারলিডিং স্কোয়াডের অংশ হতে চান না তিনি। এমন সময় রিচার্ডসন পদত্যাগ করলেন যখন ১০  সদস্যের এই পরামর্শক পর্ষদ রাখাইন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে এই প্রথম রোহিঙ্গা অধ্যুষিত অঞ্চল পরিদর্শন করছে। গত বছর ২৫ আগস্ট শুরু হওয়া দমন-পীড়ন, নির্যাতনের মুখে ওই অঞ্চল থেকে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। রিচার্ডসন জানিয়েছেন, সোমবার পরামর্শক পর্ষদের এক বৈঠকে অং সান সু চির সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় তার। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সরকারের মামলার বিষয়টি বৈঠকে উত্থাপন করলে তাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। গোপন তথ্য প্রকাশ করে সরকারকে বিব্রত করায় ওই দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিয়ানমারে মামলা চলছে। রিচার্ডসন দাবি করেছেন, মামলার প্রসঙ্গটি তোলায় অগ্নিশর্মা হয়ে উঠেন সু চি। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে চলা মামলা পরামর্শক পর্ষদের কাজের অংশ নয়। পরে নৈশভোজেও তাদের মধ্যে এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। সু চির মুখপাত্র বৃহস্পতিবার রয়টার্সকে বলেন, রাখাইন ইস্যু নিয়ে বৈঠকে বসেছিল পরামর্শক পর্ষদ। তিনি দাবি করেন, (রিচার্ডসন) বৈঠকের আলোচ্যসূচির বাইরে গিয়ে কথা বলেন এবং ফ্রেমওয়ার্কের বাইরে চলে যান।’ তিনি বলেন, ‘ভুল বোঝাবুঝির কারণে তার পদত্যাগে আমরা দুঃখিত।’ রিচার্ডসন দাবি করেছেন, ‘টিমের সদস্যদের কাছ থেকে ভালো পরামর্শ পাচ্ছেন না অং সান সু চি।’ ১৯৮০-এর দশক থেকে সু চির সঙ্গে তার পরিচয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি তাকে খুবই পছন্দ ও শ্রদ্ধা করি। কিন্তু রাখাইন ইস্যু ও যেসব অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে তিনি নৈতিক নেতৃত্ব দেখাচ্ছেন না  এবং এ জন্য আমি মর্মাহত।’ সু চির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাউং তুন রয়টার্সকে জানিয়েছেন, বুধবার রাখাইন পরিদর্শনের সময় তিনি পরামর্শক পর্ষদের সদস্যদের সঙ্গে ছিলেন। তবে রিচার্ডসন এতে অংশ নেননি। থাউং তুন বলেছেন, রিচার্ডসনের পদত্যাগে তিনি অখুশি। তবে কেন তিনি পদত্যাগ করলেন, কোন কারণে তিনি অসন্তুষ্ট, তা তার জানা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিথার ন্যয়ের্ত বলেছেন, পরামর্শক পর্ষদ থেকে রিচার্ডসনের পদত্যাগ ও পদত্যাগের কারণ উদ্বেগের বিষয়। তবে তিনি এ-ও জানিয়েছেন, প্রাইভেট সিটিজেন (নিরপেক্ষ ব্যক্তি) হিসেবে পর্ষদের বৈঠকে অংশ নেবেন এবং মিয়ানমার পরির্দশনে থাকবেন রিচার্ডন। রাখাইনের রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে থাইল্যান্ডের প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী সুরাকিয়ার্ত সাথিরাথাইয়ের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের আন্তর্জাতিক পরামর্শক পর্ষদ গঠন করে মিয়ানমার। এই পর্ষদের পাঁচ সদস্য বিদেশি ও বাকি পাঁচ সদস্য মিয়ানমারের। সেখান থেকে পদত্যাগ করেছেন রিচার্ডসন। জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত, ক্লিনটন প্রশাসনের জ্বালানি মন্ত্রী ও নিউ মেক্সিকো রাজ্যের প্রাক্তন গভর্নর রিচার্ডসন পরামর্শক পর্ষদের চেয়ারম্যান সাথিরাথাইয়ের বিরুদ্ধেও কঠিন কথা বলেছেন। জাতিসংঘের প্রাক্তন মহাসচিব কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়েনের জন্য এই পরামর্শক পর্ষদ গঠন করে মিয়ানমার সরকার। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের অভিযোগ তদন্ত করে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার জন্য বিস্তারিত সুপারিশ করে আনান কমিশন। তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে সেনাবাহিনী। রিচার্ডসন অভিযোগ করেছেন, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, শান্তি ও স্থিতিশীলতার ইস্যুগুলো নিয়ে আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নন পর্ষদের চেয়ারম্যান। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ জানুয়ারি ২০১৮/রাসেল পারভেজ