আন্তর্জাতিক

উথ্রাজা উথারা উথামা উথ্রার গল্প

প্রায়ই যমজ সন্তানের জন্ম দেন মায়েরা। এক সঙ্গে চার-পাঁচ কিংবা ছয়-সাত সন্তানও এখন জন্ম নিচ্ছে। এই যেমন এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইরাকে এক মা একইসঙ্গে সাত সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।

আবার গত বছর লেবাননে এক মায়ের গর্ভ থেকে একই সঙ্গে ছয় সন্তানের জন্ম হয়েছে যার তিনটি মেয়ে ও তিনটি ছেলে শিশু।

যমজদের নিয়ে অনকে চমকপ্রদ ঘটনাও ঘটে। বিশেষ করে একই চেহারার হওয়ায় তাদের নিয়ে মজার মজার ঘটনার কথা জানা যায়।

তবে ভারতে এক মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছে চার মেয়ে ও এক ছেলে। কেরালা রাজ্যের এই পাঁচ ভাইবোন একই সঙ্গে পৃথিবীর মুখ দেখেন। চিকিৎসাশাস্ত্রে যাকে বলা হয় কুইন্টুপলেটস।

এটি অবশ্য পুরনো খবর। নতুন খবর হচ্ছে ওই জমজদের চার বোনের একসঙ্গে একই দিনে এবং একই আসরে বিয়ে হচ্ছে। এ যেন রূপকথার গল্প।

জমজ পাঁচ ভাই-বোনের জন্ম ১৯৯৫ সালের ১৮ নভেম্বর। এরা হচ্ছেন- উথ্রাজা, উথারা, উথামা, উথ্রা এবং তাদের ভাই উথ্রাজন। বাবা প্রেমা কুমার ও মা রেমা দেবী। তবে চার বোন জমজ হলেও তাদের চেহারা ভিন্ন।

সে সময় কেরালায় সাড়া পড়ে যায় তাদের জন্মের খবরে। তাদের প্রথম স্কুলে যাওয়া, প্রথম কলেজে ভর্তি হওয়া এবং প্রথম ভোট প্রদানের সব খবর আগ্রহের সঙ্গে প্রকাশ করে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।

এখন তারা আবার খবরের শিরোনাম হয়েছে বিয়ে করা নিয়ে। হিন্দুস্তান টাইমস ও ডেকান হেরাল্ড জানিয়েছে, চার বোন একসঙ্গে একইদিনে বিয়ের পিড়িতে বসতে যাচ্ছে আগামী বছরের ২৬ এপ্রিল।

এই পাঁচ ভাই-বোনের জন্মের পর থেকে তাদের বেশ কষ্টে জীবন কেটেছে। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে তাদের কষ্ট ও দুর্দশাগ্রস্ত জীবন নিয়ে প্রায়ই রিপোর্ট প্রকাশ হতো। বাবা প্রেমা কুমার ছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। অবশ্য একসঙ্গে পাঁচ সন্তানের জন্মের পর তিনি বেশ উৎফুল্ল হন। বাড়ির নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘পঞ্চ রত্ন’। পাঁচজনের জন্য তিনি একই রকম পোশাক, স্কুল ব্যাগ ও ছাতা কিনে দিতেন। এজন্য তাকে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে।

 

মায়ের সঙ্গে পাঁচ ভাইবোন

 

এই পরিবার আরো বেশি অর্থকষ্টে পড়ে প্রেমা কুমারের স্ত্রী হৃদরোগে আক্রান্ত হলে। তার চিকিৎসা করাতে গিয়ে দিন দিন সংকট বাড়তে থাকে। রেমা দেবীর পেস-মেকার পড়ানো হয়। কিন্তু ২০০৪ সালে এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। নিদারুণ অর্থ সংকটে আত্মহত্যা করেন প্রেমা কুমার।

তবে এ অবস্থায় পাঁচ ভাই-বোনের মা রেমা দেবী নিজেকে শক্ত করেন। সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। সরকার থেকে একটি চাকরি পেয়ে যান। স্থানীয় কয়েকটি গণমাধ্যমও তাকে সহায়তা করে।

রেমা দেবী তার কঠিন সংগ্রামের কথা উল্লেখ করে বলেন, স্বামীর আকষ্মিক মৃত্যুতে আমি অথৈ সাগরে পড়ে যাই। তবে আমি এ চিন্তা করি যে, আমার সন্তানদের জন্য আমাকে বাঁচতে হবে। শুরু হয় সংগ্রাম। আমি জানি যে, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। সংকট মানুষের ভেতর থেকে তার সেরা কিছু বের করে আনে।

রেমা আরো বলেন, পাঁচ ভাই-বোনই স্কুলে অনেক ভাল করেছে। নিজেদের পছন্দের বিষয়েই তারা স্নাতক শেষ করেছে। উপযুক্ত হয়ে গড়ে উঠেছে তারা। চার বোনের মধ্যে উথারা ফ্যাশন ডিজাইনার। উথ্রাজা আর উথামা হয়েছেন অ্যানেসথেশিয়া টেকনিশিয়ান। উথ্রা পেশায় সাংবাদিক এবং তার হবু স্বামীও তাই। আর তাদের ভাই উথ্রাজন আইটি প্রফেশনাল।

তাদের ২৪ বছর পূর্ণ হয়েছে। তিনি এখন চার মেয়েকে একসঙ্গে একই দিনে ও একই আসরে বিয়ে দিতে চান। ছেলে অবশ্য পরে বিয়ে করবে।

চার বোন জানিয়েছেন, তারা নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে মায়ের পাশে থাকবেন। তারা আরও জানায় যে তারা কখনও একে অপরকে ছেড়ে যাবে না। উথারা বলেন, ‘আমাদের মা খুব খুশি। তিনি সব সময় চেয়েছিলেন আমরা যেন আত্মনির্ভরশীল হই।’ 

গত সেপ্টেম্বরে চার বোনের বাগদান সম্পন্ন হয়েছে। তবে মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি করার কারণে চার বরের মধ্যে তিনজন বাগদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি।

বোনদের ইচ্ছে, তাদের বিয়ের সমস্ত আয়োজন যেন দেখতে একরকম হয়। একই নকশা এবং একই রঙের শাড়ি পরবেন তারা। বিয়ের অনুষ্ঠান হবে স্থানীয় রীতি ও ঐতিহ্য অনুসারে। শুধুমাত্র নিকটাত্মীয় এবং বন্ধুদের সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এছাড়া কয়েকজন সাংবাদিকও থাকবেন।

 

ঢাকা/এনএ