আন্তর্জাতিক

করোনাভাইরাসের টিকা-ওষুধে কী পরিমাণ খরচ করছে বিশ্ব?

বিশ্বের ১৯৯টি দেশ ও অঞ্চলে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ইতোমধ্যে প্রায় ছয় লাখ ছুঁইছুঁই। অনুন্নত দেশের তুলনায় উন্নত দেশগুলোতে আক্রান্ত ও মৃতের বেশি হওয়ায় চিন্তায় তাদের কপালের ভাঁজটাই বেশি।

বিশ্বের ২০টিরও বেশি শীর্ষ ওষুধ প্রতিষ্ঠান এই ভাইরাসের টিকা উদ্ভাবনের ঘোষণা দিয়েছে। অনেক দেশ ও সংস্থা করোনার টিকা ও ওষুধ আবিষ্কারের জন্য বিপুল অর্থ বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছে। তবে অধিকাংশ দেশই কী পরিমাণ অর্থ কেবল টিকা উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ করেছে তার একক তথ্য জানায়নি। সার্বিকভাবে বলতে গেলে টিকা ওষুধ উন্নয়নের পেছনে বৈশ্বিক বরাদ্দ হাজার কোটি ডলারকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

গত সপ্তাহে মার্কিন কংগ্রেস ট্রাম্প প্রশাসনকে ৮৩০ কোটি ডলারের জরুরি তহবিলের অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে ছয় কোটি ১০ লাখ ডলার দেশটির খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনকে দেওয়া হবে করোনাভাইরাসের ওষুধ ও টিকার উন্নয়নে। এছাড়া ৩১০ কোটি ডলার দেওয়া হবে পাবলিক হেলথ অ্যান্ড স্যোশাল সার্ভিসেস ইমার্জেন্সি তহবিলে। করোনাভাইরাসের ওষুধ ও টিকার উন্নয়ন, যুক্তরাষ্ট্রে এর উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং টিকা, ওষুধ ক্রয় ও পরীক্ষার জন্য এই অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক ও চিকিৎসার জন্য বড় অনুদান দিচ্ছে। জানুয়ারিতে জোটের সবচেয়ে বড় গবেষণা ও উন্নয়ন তহবিল হরাইজন ২০২০ কাছ থেকে এক কোটি ইউরো দেওয়ার ঘোষণা দেয়। গত ৬ মার্চ এর অতিরিক্ত আরো তিন কোটি ৭৫ লাখ ইউরো টিকা, চিকিৎসা ও পরীক্ষার জন্য বরাদ্দ করা হয়। এর অতিরিক্ত হিসেবে ইইউ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের  প্রতিষ্ঠান ইনোভেটিভ মেডিসিনস ইনিশিয়েটিভ পরীক্ষা, প্রতিরোধ ও চিকিৎসার  জন্য সাড়ে চার কোটি ইউরো বরাদ্দ দিয়েছে। ইইউ করোনা গবেষণায় সব মিলিয়ে বিনিয়োগ করছে ১৪ কোটি মিলিয়ন ইউরো।

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারে এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অনুদান দেওয়া দেশ যুক্তরাজ্য। বৃহস্পতিবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন টিকার উন্নয়নে ২১ কোটি পাউন্ড অনুদানের ঘোষণা দেন। এর আগে জনসন সরকার করোনাভাইরাসের টিকা গবেষণায় সাত কোটি ১০ লাখ পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষনা দিয়েছিল। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় দেশটির এখন মোট বরাদ্দ ৫৪ কোটি ৪০ লাখ পাউন্ড।

করোনা প্রতিরোধ ও মহামারি মোকাবেলায় চীন বরাদ্দ দিয়েছে এক হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার। তবে ভাইরাস গবেষণা ও টিকা বা ওষুধ উন্নয়নে ঠিক কী পরিমাণ অর্থ দেশটি বরাদ্দ করেছে তা জানা যায় নি। ৯ মার্চ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভাইরাস মোকাবেলার সমন্বিত প্রচেষ্টা হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় দুই কোটি ডলার অনুদানের ঘোষণা দিয়েছে বেইজিং।

২৩ মার্চ করোনাভাইরাসের টিকা উন্নয়ন ও উৎপাদনের জন্য ১৯ কোটি ২০ লাখ ডলার বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। করোনার দীর্ঘ মেয়াদি সমাধানের জন্য এই অর্থ বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

করোনা মোকাবেলায় জাপান বিনিয়োগ করছে ১৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এর মধ্যে পাঁচ কোটি ২০ লাখ ডলার বরাদ্দ রয়েছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধক ওষুধ অনুসন্ধানে।

দক্ষিণ কোরিয়ার ন্যাশনাল ইনিস্টিটিউ অব হেলথ অ্যান্ড সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রেল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট আট লাখ ৪০ হাজার ডলার বরাদ্দ দিয়েছে করোনাভাইরাসের টিকা ও চিকিৎসা পদ্ধতি উন্নয়নে। এর অতিরিক্ত ১০ লাখ ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ভাইরাস নিয়ে গবেষণা ও ডায়াগনিস্টিক কিটের উন্নয়নে।

১০ মার্চ ওয়েলকাম ও গেটস ফাউন্ডেশন ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি মাস্টারকার্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে করোনাভাইরাসের ওষুধ আবিষ্কারের জন্য ১২ কোটি ৫০ লাখ ডলার দেওয়ার ঘোষণা করেছেন।

ডেনমার্কের নোভো নরডিস্ক ফাউন্ডেশন ২৭ লাখ ইউরো সহায়তা দিচ্ছে করোনাভাইরাসসহ ভবিস্যত মহামারির প্রস্তুতি ও মোকাবেলার জন্য। এর একটি অংশ বরাদ্দ হবে করোনাভাইরাস শনাক্ত ও প্রতিরোধের জন্য।

৬ মার্চ সরকারের বিশেষ আহ্বানে সাড়া দিয়ে সুইজারল্যান্ডের সুইস ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণা ও চিকিৎসার জন্য ৪৭ লাখ ইউরো বরাদ্দ দিয়েছে। এই প্রথমবারের মতো সায়েন্স ফাউন্ডেশন কোনো প্রকল্পের জন্য জরুরি বৈঠকে বসেছিল।

অস্ট্রেলিয়া করোনাভাইরাসের টিকা গবেষণায় ১২ লাখ মার্কিন ডলার বরাদ্দের ঘোষনা দিয়েছে।

নিউ জিল্যান্ডের দ্য হেলথ রিসার্চ কাউন্সিল ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রায় ১৮ লাখ মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে। করোনার দীর্ঘমেয়াদি প্রতিকার ও অন্যান্য সংক্রামক রোগের হুমকি মোকাবেলায় এই অর্থ ব্যয় হবে।

করোনার সংক্রমণের বিস্তৃতি ও এই ভাইরাস নিয়ে গবেষণার জন্য ব্রাজিলের বিজ্ঞান, প্রযুক্ত ও উদ্ভাবন বিষয়ক মন্ত্রী মার্কো পন্টেস ন্যাশনাল কাউন্সিল অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে ২০ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন।  করোনা মোকাবেলায় জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ড, ভারত, ইতালি, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশের বিজ্ঞান বিষয়ক মন্ত্রীদের সঙ্গে টেলিকনফারেন্সে তিনি এ ঘোষণা দেন। ঢাকা/শাহেদ