আন্তর্জাতিক

হাতিকে নির্মমভাবে হত্যা: সোশ্যাল মিডিয়ায় ধিক্কারের ঝড়

খাবারের খোঁজে লোকালয়ে আসা একটি গর্ভবতী হাতিকে খেতে দেওয়া হয় পটকাবাজি ভর্তি আনারস। ওই আনারস খেয়ে বিস্ফোণে আহত হয়ে পড়ে হাতিটি। যন্ত্রণা কমাতে নদীতে নেমে দাঁড়ায় এবং নিশ্চুপভাবে দাড়িয়ে থেকেই তিলে তিলে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে। 

ভারতের কেরালা রাজ্যের মালাপপুরাম গ্রামে এমন নির্মমভাবে হাতি হত্যার ঘটনায় ধিক্কারের ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে তারকা এবং জনপ্রতিনিধরাও সরব হয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়ে তৈরি হয়েছে পোস্টার, হাজার হাজার স্ট্যাটাসে ভাসছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। সবারই একটাই প্রশ্ন- মানুষ এতটা অমানবিক হতে পারে? মানুষ এমন হতে পারে!

টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, ‘এটা নৃশংস হত্যা’ উল্লেখ করে বিজেপি সাংসদ মানেকা গান্ধী টুইটারে কেরালা রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন পুশ নির্যাতনের ঘটনাকে গুরুত্বের সঙ্গে না নেওয়ায়। এছাড়া মালাপপুরামকে সবচেয়ে হিংসাত্মক জেলার আখ্যা দিয়েমানেকা গান্ধী লিখেছেন, ‘মালাপপুরামে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। সবচেয়ে হিংস্র জেলা। রাস্তার পাশে বিষ রাখা হয় যাতে পাখি, কুকুর খেয়ে একসঙ্গে মারা যায়।’

ভারতের ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বিরাট কোহেলি মা হাতি ও তার গর্ভস্থ সন্তানের একটি আঁকা ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘কেরালায় এটা কী ঘটল! এই নৃশংসতা শেষ হোক।’

ধিক্কারে সরব হয়েছে বলিউডও। আলিয়া ভাট লিখেছেন, ‘অত্যন্ত নিন্দনীয়। ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। এই ঘটনা অসুস্থ মানসিকতার পরিচয় দেয়।’ শ্রদ্ধা কাপুর টুইটারে লিখেছেন, ‘কেমন করে করা সম্ভব এমনটা? মানুষের কি হৃদয় নেই? আমার মন ভেঙে গেল। অপরাধীদের কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত।’

ধিক্কারে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাসাচ্ছে সাধারণ মানুষও। পশুর বিরুদ্ধে এমন নিষ্ঠুর জঘন্য কাজের প্রতিবাদে অনেকেই স্কেচ এবং ছবি শেয়ার করেছে। একজন টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘সাক্ষরতার হার শিক্ষার প্রতিফলন ঘটায় না।’

নির্মমভাবে হাতিটিকে হত্যার ঘটনাটি মালাপপুরাম গ্রামে ঘটে গত ২৭ মে। গ্রামেরই কয়েকজন বাসিন্দার বিরুদ্ধে এই নির্মম কাণ্ড ঘটানোর অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার কেরালার স্থানীয় বন কর্মকর্তা মোহন কৃষ্ণান ফেসবুকে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে স্ট্যাটাস পোস্ট করলে তা সবার নজরে আসে এবং আবেগঘন লেখাটি ভাইরাল হয়। 

ওই স্ট্যাটাসে মোহন লিখেছেন, ‘ওর মুখের ভিতর আতশবাজি ভর্তি আনারসটা বিস্ফোরণ হওয়ার পরেও বোধহয় ও ঠিক বুঝতে পারেনি কী হয়েছে ওর সঙ্গে। তীব্র জ্বালা যন্ত্রণায় পুরো গ্রাম ঘুরে বেরিয়েছে। কিন্তু একটা বাড়িও ভাঙেনি। কোনো লোককে আক্রমণ করেনি। ও এমনই ছিল। সহজ-সরল। সবাইকে বিশ্বাস করত। তবে নিঃসন্দেহে ও বুঝেছিল অন্তিম সময় এগিয়ে এসেছে। আর তখন নিশ্চয় সবার আগে গর্ভের সন্তানের কথাই মাথায় এসেছিল ওর।’

মোহন আরো লিখেছেন, স্থানীয় একটি পুকুরে শুঁড় আর মুখ ডুবিয়ে বসেছিল। হয়তো ভেবেছিল এতে জ্বালা-যন্ত্রণা একটু কমবে। কিন্তু ও বোধহয় বুঝে গিয়েছিল যে আর বাঁচবে না। তাই আমাদের ওর জন্য কিছু করার সুযোগই দিল না। পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই মারা গেল।’ 

এদিকে অমানবিক এই ঘটনার রেশ শেষ হওয়ার আগেই ঠিক একইভাবে আরো একটি হাতির নির্মম মৃত্যুর খবর জানা গেছে। এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় ঘটনাটি গত এপ্রিলে ঘটেছে। হাতিটির চোয়াল ভাঙা ছিল। আর তা বিস্ফোরক কিছু খাওয়ার কারণে হতে পারে বলে ময়না তদন্তের রিপোর্ট থেকে ধারণা করেছেন বন কর্মকর্তারা। 

   

ঢাকা/ফিরোজ