আন্তর্জাতিক

ভারতীয় সেনাদের কী নিজেদের সীমান্তে নিয়ে হত্যা করেছে চীনারা?

লাদাখে ভারত-চীন সংঘর্ষে ২০ সেনা নিহতের পর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য শুক্রবার সর্বদলীয় বৈঠক করেছিলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই বৈঠকে মোদি জানিয়েছেন, চীনা সেনারা ভারতের সীমান্তে প্রবেশ করেনি। এখন প্রশ্ন উঠেছে, ভারতীয় সেনাদের কি নিজেদের সীমান্তে নিয়ে হত্যা করেছে চীনারা? কেন হত্যা করলো তাদের?

লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় সোমবার ভারত ও চীনের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়। সংঘর্ষে গুলি বিনিময় হয়নি। পাথর ও রড নিয়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বলে প্রথমে জানিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। শুক্রবার ভারতীয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাঁটাতার সংযুক্ত রডের ছবি প্রকাশ করে বলা হয়, এগুলো দিয়েই পিটিয়ে হত্যা করা হয় ভারতীয় সেনাদের। এক সেনা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বিবিসিও এই তথ্য জানায়। তবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টিভিতে দাবি করা হয়, রডের এই ছবি ভুয়া। সীমান্ত থেকে এ ধরনের কোনো কিছু উদ্ধার করা হয়নি। স্রেফ মানসিক যুদ্ধের অংশ হিসেবে এই ছবি ছড়ানো হচ্ছে।

শুক্রবার সর্বদলীয় বৈঠকে মোদি যতটুকু না চীনের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ নিস্পত্তি নিয়ে কথা বলেছেন তারচেয়ে ঢের বলেছেন ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা নিয়ে। কেন ও কী কারণে কয়েক দশক পর এই প্রাণঘাতি সংঘাতে জড়িয়ে পড়লো দুই প্রতিবেশী দেশের সেনারা সে ব্যাপারে কোনো ব্যাখ্য তিনি দেননি।

তিনি শুধু বলেছেন, ‘তারা (চীন) আমাদের সীমান্তে অনুপ্রবেশ করেনি, কোনো তল্লাশি চৌকিও দখল করেনি। আমাদের ২০ জওয়ান শহীদ হয়েছে। কিন্তু যারা ভারতমাতার দিকে চোখ তুলে দেখেছেন, তাদের শিক্ষা দিয়ে গেছেন।’

মোদির এই বৈঠকের পর ভারতের বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, চীনা সেনা ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ না করে থাকলে সংঘাত বাঁধল কেন এবং কী নিয়ে।

এ ধরনের প্রশ্ন ছুড়েছেন কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধীও। টুইটারে তিনি লিখেছেন,‘প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় ভূখণ্ডের বিনিময়ে চীনা আগ্রাসনের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। ওই জায়গাটি যদি চীনেরই ছিল তবে: ১. আমাদের সেনাদের কেন হত্যা করা হয়েছিল? ২. তাদের ঠিক কোথায় হত্যা করা হয়েছিল?’

চীন অবশ্য এই দুই প্রশ্নের আধাআধি উত্তর দিয়েছে। শনিবার দিল্লির চীনা দূতাবাসের ওয়েবসাইটে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজান জানিয়েছেন, ভারত-চীন সীমান্তের পশ্চিম অংশের গালওয়ান উপত্যকায় দীর্ঘদিন ধরেই টহল দেয় চীনা সেনা। গত এপ্রিল মাস থেকে ভারতীয় সেনা গালওয়ান উপত্যকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় এক তরফাভাবে সড়ক, সেতু ও অন্য পরিকাঠামো তৈরি করছিল। চীন বারবার প্রতিবাদ জানালেও ফল হয়নি। ভারতীয় সেনারা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে উস্কানি দিতে শুরু করে। ৬ মে রাতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে চীনা এলাকায় প্রবেশ করে ভারতীয় সেনারা। ভোরের মধ্যে তারা ব্যারিকেড ও বেড়া তৈরি করে ঘাঁটি গেড়ে বসে। এর ফলে টহল দিতে পারছিল না চীনা সেনারা।  বেইজিংয়ের কড়া প্রতিবাদের ফলে নয়া দিল্লি ওই এলাকা থেকে নিজেদের সেনা প্রত্যাহার করে নেয় এবং বেড়া ও ব্যারিকেড নষ্ট করে দেওয়া হয়। কিন্তু ১৫ জুন বিকেলে ফের ‘উস্কানি দিতে’ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পার হয়ে চীনা এলাকায় প্রবেশ করে ভারতীয় সেনারা। চীনা সেনাদের একটি দল দর কষাকষি করতে গেলে তাদের উপরে ভারতীয় সেনা হামলা চালায়। তার ফলেই তীব্র লড়াই হয়।

চীনের সঙ্গে চলতি বছর কয়েকবারই ভারতীয় সেনাদের সংঘর্ষ হয়েছে। তবে সেটা হাতাহাতি পর্যন্তই ছিল। কয়েক মাস আগেও এ ধরনের ঘটনায় ভারতকে বেশ হম্বিতম্বি করতে দেখা গেছে। তবে এবার সংঘর্ষের পর ভারত ‘মের ফেলব,কেটে ফেলব’ জাতীয় কোনো মন্তব্য করেনি। বোঝাই যাচ্ছে, পা মাড়ানোর দোষটা কার। শুক্রবার মোদির মন্তব্যের পর সে বিষয়টি আরও বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠল।

 

ঢাকা/শাহেদ