আন্তর্জাতিক

‘ভয় পেও না’

‘ছোট-বড়, যুবা-বৃদ্ধ যারাই যেতে চাও সবাইকে নিয়ে যাওয়া হবে। ভয় পেও না...কেউ তোমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।’

কাঁধে সমরাস্ত্র ঝুলানো জলপাই রঙের পোশাক পরা মানুষদের এই কথাগুলো দোদুল্যমান চিত্তে হয়তো বিশ্বাস করেছিল বসনিয়া-হারজেগোভানিয়ার সেব্রেনিৎসার মানুষেরা। সারি সারি ট্রাকে মানুষগুলো উঠেছিল নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য। তবে তাদের এই ভুল ভাঙতে বেশি সময় লাগেনি। খোলা ময়দানে নিয়ে সারি বেঁধে দাঁড় করিয়ে এই নারী,শিশু,যুবক ও বৃদ্ধদের হত্যা করে সার্ববাহিনী। ১৯৯৫ সালের ১১ জুলাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সংঘটিত হয় ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য গণহত্যা।

১৯৯২ সালের এপ্রিলে যুগোস্লাভিয়া থেকে নিজেদের স্বাধীনতার ঘোষণা করে বসনিয়া-হারজেগোভানিয়া। এই অপরাধে বসনিয়ার মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায় সার্বরা। তিন বছর ধরে চলা এই হত্যাযজ্ঞের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সেব্রেনিত্সা গণহত্যা।

১৯৯৫ সালের ৬ জুলাই মাসে জাতিসংঘ ঘোষিত নিরাপদ এলাকা সেব্রেনিত্সা ডাচ শান্তিরক্ষী বাহিনীর সহযোগিতায় দখল করে নেয় সার্বরা।

বসনীয় সার্ব ইউনিটের কমান্ডার বাতকো ম্লাদিক ওই সময় আতঙ্কিত বসনীয়দের বলেছিলেন, ‘ভয় পাবেন না। কেউ আপনাদের ক্ষতি করবে না।’ তবে সেটা যে পুরোটাই ছলনা ছিল কয়েক ঘণ্টা পরই তা টের পাওয়া যায়।

হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়ে পরের দিন। মুসলমানদের শরণার্থী শিবির থেকে বাস-ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয় সার্ব-অধ্যুষিত এলাকাগুলোয়। নারী,পুরুষ ও বালকদের ভীড় থেকে আলাদা করে ফেলা হয়। সারি বেঁধে দাঁড় করিয়ে হত্যা করা হয় তাদের। হাজার হাজার মৃতদেহ গণকবরে বুলডোজার দিয়ে মাটিচাপা দেওয়া হয়। কাউকে কাউকে জীবন্ত কবর দেওয়া হয় বলেও পরবর্তীতে তদন্ত প্রতিবেদনে জানানো হয়। বাবা-মাকে সামনে দাঁড়িয়ে তাদের সন্তাদের হত্যা করার দৃশ্য দেখতে বাধ্য করা হয়। নারী ও কিশোরীদের তুলে নিয়ে গণধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয়। শুধুমাত্র সেব্রেনিত্সায় ১১ জুলাই হত্যা করা হয়েছিল আট হাজার বসনীয়কে।

 

ঢাকা/শাহেদ