ইসলাম ধর্মে রমজানে যতোট সংযমী আচরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারচেয়ে অনেক বেশি অসংযমী আচরণ করা হয় ইফতারি পর্বে। অধিকাংশ মুসলিম দেশেই রসনাবিলাসী খাবারের ধুম পড়ে যায় এই সময়টাতে। কতো খাবার যে ভাগাড়ে ফেলা হয় তার কোনো হিসেব নেই। অথচ গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বের সংঘাতপূর্ণ দুটি মুসলিম দেশ-সিরিয়া ও ইয়েমেনের লাখ লাখ মানুষকে অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে।
গত রমজানে সিরিয়ার অনাথ শিশুদের মধ্যে ইফতারি বিলি করেছিল হিউম্যানিটি উইদাউট বর্ডার্স নামের একটি সংস্থা। এই শিশুদের হাতে খাবারের প্যাকেটটি দেওয়ার আগে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘শেষ কবে মুরগির মাংস খেয়েছিলে?’
এক শিশুর উত্তর ছিল- গত ঈদে। আরেক জনের উত্তর ছিল বাবা মারা যাওয়ার পর। আরেক শিশুতো মনেই করতে পারেনি কবে খেয়েছে প্রিয় খাবারটি।
২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউ লেগে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। ৯ বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে নিহত হয়েছে তিন লাখ ৮০ হাজার মানুষ। বাস্তুচ্যুত হয়েছে এক কোটি ৩২ লাখ মানুষ। ৬৬ লাখ শরণার্থী তুরস্ক, লেবানন, জর্ডান, ইরাক ও মিশরে আশ্রয় নিয়েছে।
ইউনিসেফের হিসেবে, প্রতি ১০ ঘণ্টায় নিহত হচ্ছে একটি শিশু।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গৃহযুদ্ধের কারণে দেশটিতে এতিম হয়েছে এক লাখের বেশি শিশু।
গত জুনে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা জানিয়েছিল, ৯৩ লাখ সিরীয় খাদ্য সংকটে রয়েছে। খাদ্যদ্রব্যের দাম এতোটাই বেড়েছে যে আগে কখনো তা দেখা যায়নি। গত ৯ বছরের মধ্যে গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষকে চরম দারিদ্রের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। লকডাউনের সময় প্রতিবেশী লেবাননের অর্থনীতিতে ধস নামায় এক বছরের কম সময়ের মধ্যে মৌলিক খাদ্যপণ্যের দাম ২০০ শতাংশ বেড়েছে। সংকটের আগে এক ঝুড়ি মৌলিক খাদ্যের দাম যেখানে ছিল চার হাজার সিরীয় পাউন্ড, সংঘাতের পর সেটি ৭৬ হাজার পাউন্ডে গিয়ে ঠেকেছে।