আন্তর্জাতিক

‘যাকে দেখবে তাকেই হত্যা করবে’

নিজের আবেগের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে একঘেয়ে সুরে দুই সেনা তাদের অপরাধের স্বীকারোক্তি দিয়ে যাচ্ছিলেন , যার মধ্যে রয়েছে- হত্যা, গণকবর, গ্রামবাসীদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া ও ধর্ষণ।

২০১৭ সালের আগস্টে কমান্ডিং অফিসার মাইও মিন তুনকে স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন, ‘যাকে দেখবে, যাদের আওয়াজ পাবে তাদেরকেই হত্যা করবে।’

কমান্ডিং অফিসারের নির্দেশ পালন করেছিলেন তিনি। ৩০ জন রোহিঙ্গা মুসলিমের রক্তে স্নান হওয়ার পর তাদেরকে একটি মোবাইল টাওয়ার ও সেনাঘাঁটির কাছে গণকবর দেওয়ায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি।

রাখাইনের মংড়ুর তাউং বাজারে সেনা অভিযানের বিষয়ে মাইও মিন তুন বলেন, ‘আমরা নির্বিচারে সবাইকে গুলি করেছিলাম। মুসলমান পুরুষদের কপালে গুলি করেছিলাম এবং তাদের দেহ লাথি দিয়ে গর্তে ফেলেছিলাম।’

প্রায় একই সময় আরেকটি ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার সেনাসদস্য জন নাইং তুন ও তার কমরেডদের বলেছিলেন, ‘যাকে দেখবে তাকেই হত্যা করবে, চাই শিশু হোক বা প্রাপ্তবয়স্ক।’

নাইং তুনের স্বীকাররোক্তি, ‘আমরা প্রায় ২০টি গ্রাম নিশ্চিহ্ন করেছি।’ 

নিম্ন পদমর্যাদার হওয়ায় রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণে তাকে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি বলে জানান তুন। তাকে ওই সময় দরজার বাইরে রাখা হয়েছিল প্রহরার জন্য। 

মাইও মিন তুন ও জন নাইং তুন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাতমাদাওয়ের সদস্য। রাখাইনের স্বায়ত্বশাসনের দাবিতে মিয়ানমারের সেনাবিরুদ্ধে লড়াইরত বৌদ্ধদের সশস্ত্র গ্রুপ আরাকান আর্মির হাতে গত বছর আটক হন তারা। আরাকান আর্মির কাছেই তারা রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাদের সংঘটিত অপরাধের বিবরণ প্রকাশ করেন। তাদের স্বীকারোক্তির এই ভিডিও’র বরাত দিয়ে মঙ্গলবার নিউ ইয়র্ক টাইমস, কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশন এবং অলাভজনক সংস্থা ফোর্টিফাই রাইটস প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই দুই সেনা সদস্যকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। 

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এই দুই ব্যক্তি কিভাবে আরাকান আর্মির হাতে আটক হলো, কেন তারা মুখ খুললো কিংবা তাদেরকে কিভাবে হেগে নিয়ে যাওয়া হলো সেই বিষয়গুলো স্পষ্ট নয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) মুখপাত্র ফাদি আল আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন, এই প্রতিবেদনগুলো সঠিক নয়। এই লোকগুলো আইসিসির হেফাজতে নেই।’

অবশ্য আইসিসিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী কানাডীয় আইনজীবী পায়াম আখাভান জানিয়েছেন, এই দুই ব্যক্তি সীমান্তে এসে সরকারের কাছে সুরক্ষার অনুরোধ জানিয়েছিল। তারা ২০১৭ সালে বেসামরিক রোহিঙ্গাদের গণহত্যা ও ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমি যা বলতে পারি তা হচ্ছে ওই দুই ব্যক্তি আর বাংলাদেশে নেই।’

আরাকান আর্মির মুখপাত্র খাইন থু খা জানান, ওই দুই সেনা সদস্যকে পলাতক অবস্থায় আটক করা হয়। তাদেরকে যুদ্ধবন্দি হিসেবে আটক রাখা হয়নি। তবে তারা এখন কোথায় সেই বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি।