আন্তর্জাতিক

মিয়ানমারের কোয়ারেন্টাইন উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার পথে

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে বিপুল সংখ্যক মানুষকে কোয়ারেন্টাইনে রাখার সিদ্ধান্ত নেয় মিয়ানমার। কিন্তু বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকদের মতে, এই পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়া দিকে কারণ দিন দিন সংক্রমণ বেড়েই চলেছে।

দেশটিতে ৪৫ হাজারের বেশি মানুষকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন- কোভিড-১৯ রোগী অথবা রোগীর সংস্পর্শে গিয়েছেন এমন ব্যক্তি এবং প্রবাসকর্মীরা। তাদেরকে স্কুল, ধর্মীয় উপাসনালয়, সরকারি অফিসের ভবনসহ বিভিন্ন স্থানে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এমনকি যাদের হালকা উপসর্গ রয়েছে কিংবা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাদেরকেও কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে বিষয়টি তদারকি করা হচ্ছে।

গত মার্চে প্রথম করোনা রোগী পাওয়ার পর থেকেই করোনা ঠেকানোর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতার এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার অভাবে প্রায়ই জনগণ কোয়ারেন্টাইন না মেনে বাইরে বের হচ্ছে। ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষকে কোয়ারেন্টাইনে রাখার পদ্ধতি হীতে বিপরীত হতে পারে বলে মনে করছেন দেশটির জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কিয়াও সান ওয়াই।

তিনি বলেন, ‘এই পদ্ধতি মধ্য আগস্ট পর্যন্ত মিয়ানমারে আক্রান্তের হার কমিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু আগস্টের শেষ থেকে নাটকীয়ভাবে এই সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে ইয়াঙ্গুনে। এতে স্বাস্থ্য ও কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রগুলো খাদের কিনারায় এসে পড়েছে।’ 

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারে সংক্রমণের হার কম থাকলেও মধ্য আগস্টে পশ্চিম রাখাইনে এর প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকে। এরপর থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। 

বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নতুন করে আরো ৫৩৫ জন আক্রান্ত এবং তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। এর ফলে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৮২৭ জন এবং মৃত্যু ১৩৩ জন। 

ইয়াঙ্গুনের একটি অস্থায়ী হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক ডা. কাউং মিয়াত সো বলেন, ‘অন্যান্য দেশে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে চিকিৎসা এবং বাকিদের বাড়িতে আইসোলেশনে থাকতে বলা হচ্ছে। কিন্তু মিয়ানমারে আমরা শিশু ও বৃদ্ধদের ব্যাপারে চিন্তিত কারণ তারা আক্রান্ত হতে পারেন। তাই আমরা তাদের আইসোলেশনে রাখছি।’   

চলতি বছরের শুরুতে করা একটি জরিপ অনুযায়ী, ৫৪ মিলিয়ন মানুষের জন্য দেশটিতে মাত্র ৩৩০টি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট রয়েছে। ২০১৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্যমতে, দেশটিতে ১০ হাজার মানুষের জন্য চিকিৎসকের সংখ্যা মাত্র ৬ জন।

কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে বিদ্যুৎ-পানির সীমাবদ্ধতা, টেস্ট করা হয়নি এমন ব্যক্তিদের করোনা পজেটিভ রোগীদের সঙ্গে একই রুমে রাখাসহ বেশকিছু অনিয়মের কথা মিডিয়ায় উঠে আসছে। তবে কর্তৃপক্ষ বিভিন্নভাবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।

কিয়াও সান ওয়াই বলেন, ‘বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য তাড়াহুড়া করে নতুন নতুন কোয়ারেন্টাইন সেন্টার তৈরি করা হলেও সেগুলোতে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই। মানুষ এখন কোয়ারেন্টাইনের এই পদ্ধতিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।’ 

ইয়াঙ্গুনের এক নারী বাসিন্দা জানান, মৃদু উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তিনি বাথরুমে যাওয়ার অনুমতি পাননি। বরং, তাকে ও তার রুমমেটকে প্লাস্টিকের ব্যাগ সরবরাহ করা হতো। ওই নারী বলেন, ‘হাসপাতলে আমার তিন রাত ও দুই দিন নরকের মতো ছিল।’

কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানুষদের ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে। একটি স্বেচ্ছাসেবা কেন্দ্রের দায়িত্বে আছেন ডা. কো কো লিন। তিনি বলেন, ‘ত্রাণদাতারা ছাড়া পরিস্থিতি আরো খারাপ হতো।’