গত সপ্তাহে বিশ্ব করোনা মহামারির দুটি চিত্র দেখেছে। প্রথমটিতে দেখা গেছে, একচেটিয়াভাবে টিকা কিনে নেওয়া ধনী দেশগুলো করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে এনেছে এবং লকডাউন বাতিল করায় সচল হচ্ছে এসব দেশের অথর্নীতির চাকা। বিপরীত চিত্রটি দেখা গেছে, এশিয়ার দরিদ্র দেশগুলোতে। এসব দেশে সংক্রমণের গত ঊর্ধ্বমুখী, টিকার জন্য চলছে হাহাকার এবং পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেডরস আধানম জানিয়েছেন, গত ছয় মাসে যতজন করোনায় সংক্রমিত হয়েছিল মাত্র দুই সপ্তাহে সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় এখন সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী।
শুক্রবার জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ বলেছে, ‘মহামারি শেষ হতে এখনও অনেক সময় বাকী। কোভিড -১৯ এর সংক্রমণ দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে, বিশেষত নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপে। পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে, যার ফলে আরও প্রাণহানি ঘটতে পারে। দক্ষিণ এশিয়া ছাড়াও আমরা বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে উদ্বেগজনক পরিস্থিতিও দেখছি।’
শুক্রবার আবারও করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর রেকর্ড ভাঙলো ভারত। দেশটিতে ২৪ ঘণ্টায় চার লাখ ১৪ হাজার ১৮৮ জন আক্রান্ত এবং তিন হাজার ৯১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘এটা মানবসৃষ্ট বিপর্যয়। প্রত্যেকটি দেশে আরও দ্রুত টিকা কার্যক্রম প্রসারে ব্যর্থতার মাধ্যমে আমরা কে বাঁচবে এবং কে মারা যাবে সেটা বেছে নিচ্ছি।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে করোনা সংক্রমণের যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, টিকার অপর্যাপ্ততার কারণে একই ধরনের পরিণতি আসছে আফ্রিকা অঞ্চলে।
সংস্থার আফ্রিকা দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আফ্রিকায় সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া থেকে টিকা সরবরাহে বিলম্ব এবং করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের উত্থানে অর্থ এই হচ্ছে, আফ্রিকাতে সংক্রমণের নতুন তরঙ্গের ঝুঁকি অনেক বেশি।’
সংস্থাটি বলেছে, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে উদ্ভূত নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘তৃতীয় ঢেউ’ সৃষ্টি করতে পারে।