আন্তর্জাতিক

বাথরুমের তোয়ালে যখন ভারতীয় আমলার গর্বের বিষয়

বিশেষভাবে চিহ্নিত তোয়ালে, উচ্চতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ চেয়ার যে অন্যগুলোর চেয়ে উঁচু, অনুমতির সুনামি এবং সময়ানুবর্তিতার উন্নতির জন্য নিরলস যুদ্ধ- ভারতের আমলাতন্ত্রের কিছু চিত্র এগুলো। দেশটির সরকারের এক সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা তার তিন বছরের অভিজ্ঞতায় এই চিত্রগুলো খুঁজে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের আমন্ত্রণে এই উপদেষ্টার গ্রহণ করা ব্যক্তিটি হচ্ছেন কৌশিক বসু। ২০০৯ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কর্নওয়েল ইউনিভার্সিটির শিক্ষকতা ছেড়ে মনমোহন সরকারে যোগ দিয়েছিলেন। পরে তিনি বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হন।

কৌশিক বসু তার নতুন স্মৃতিকথা পলিসি মেকার্স জার্নালে হালকা চিত্তাকর্ষক ভাষায় ভারতের বিশাল আমলাতন্ত্র কীভাবে পরিচালিত হয় সে সম্পর্কে  সেই উপাখ্যান তুলে ধরেছেন।

কৌশক বসু জানিয়েছেন, ভারতের আমলাদের কাছে খুবই ব্যবহৃত একটি শব্দ হচ্ছে ‘ইয়েস স্যার।’ এক জন কর্মকর্তা কতবার ‘স্যার’ উচ্চারণ করেন তা গুনতে এক সরকারি বৈঠকে হাতের কাছে ট্যাব রেখেছিলেন কৌসিক বসু। মন্ত্রী হাজির থাকা ওই বৈঠকে এক জন কর্মকর্তা প্রতি মিনিটে গড়ে ১৬ বার ‘স্যার’ উচ্চারণ করেছেন। প্রতিবার এই শব্দটি উচ্চারণ করতে ওই কর্মকর্তার আধা সেকেন্ড সময় লাগতো। 

অধ্যাপক বসু হিসাব করেছেন, মন্ত্রী কিংবা ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলার ১৩ শতাংশ সময় আমলারা শুধু স্যার বলেই কাটিয়ে দেন।

ভারতের কর্মকর্তাদের ক্ষুদ্র একটি বিষয়ের জন্যও অনুমতির প্রয়োজন হয় বলে দেখতে পেয়েছেন অধ্যাপক বসু।

তিনি লিখেছেন, ‘অনুমতির অনুরোধগুলো সরকারের মধ্যে পিরামিড কাঠামোর মধ্য দিয়ে যায় ; অবাক করার মতো কিছু তুচ্ছ বিষয়ের জন্যও শীর্ষ পর্যায় থেকে মন্ত্রী পর্যন্ত যেতে হয়।’

তাই কর্মীরা আক্ষরিক অর্থে সব কিছুর জন্য অনুমতি চায়। কফির ব্র্যান্ড পরিবর্তন থেকে শুরু করে অসুস্থ আত্মীয়ের সাথে দেখা করার জন্য এক দিনের ছুটি  এবং বিশ্রাম কক্ষ পরিষ্কারে অন্য কোনো পরিচারকের জন্যও অনুমতি চাইতে হয়।

অর্থ উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেওয়ার পর অধ্যাপক বসুর জন্য কর্মীরা প্রথম যে যুদ্ধটি করেছিলেন সেটি হচ্ছে, মন্ত্রণালায়ের প্রথম তলায় ‘বড়, ভালো একটি বাথরুম।’ কারণ এই তলার বাথরুমগুলো রক্ষিত ছিল সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা সচিবদের জন্য।

তিনি লিখেছেন, ‘এই বাথরুমে তিনটি তোয়ালের র‌্যাক ছিল। এগুলোতে সুন্দরভাবে ইস্ত্রি করা তিনটি তোয়ালে ছিল। একটি অর্থসচিব, আরেকটি রাজস্ব সচিব এবং তৃতীয়টি ব্যয় নির্বাহ সচিবের জন্য।’

অধ্যাপক বসু জানান, তার অধস্তনরা দাবি করেন, তিনি সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বাথরুম পাওয়ার হকদার।

তিনি লিখেছেন, ‘এটা তাদের আত্মাভিমানে লেগেছিল। আমি তাদের স্পষ্টভাবে বলেছিলাম, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও ঘাটতি ব্যবস্থাপনার আলোচনায় আমি ছিলাম না। তাদেরকে এটা বলে আমি অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রথম তলায় বিশেষ বাথরুম বরাদ্দের অনুরোধ জানানোর বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছিলাম।’

তবে অধ্যাপক বসুর কর্মীরা বাথরুম আদায়ের দাবি থেকে সরে আসেনি। শেষ পর্যন্ত তারা তাদের কর্তার জন্য ‘অভিজাত বাথরুমে’ প্রবেশের অনুমতি আদায় করেছিল।