আন্তর্জাতিক

প্রধানমন্ত্রীত্বের জন্য ২৫ বছর 

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বৃহস্পতিবার শপথ নিয়েছেন আনোয়ার ইব্রাহিম। সরকার প্রধানের এই পদটিতে যাওয়ার জন্য আনোয়ারকে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ ২৫ বছর। যার হাত ধরে রাজনীতিতে তার উত্থান ঘটেছিল সেই ব্যক্তিটিই একসময় আনোয়ারের রাজনৈতিক জীবন ধ্বংসের জন্য কারাগারে ছুড়ে ফেলেছিল। এরপরও দমেননি তিনি। 

আনোয়ার ইব্রাহিমের জন্ম ১৯৪৭ সালের ১০ আগস্ট। ১৯৭০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে উত্তর মালয়েশিয়ায় দারিদ্র্যপূর্ণ পরিস্থিতি তুলে ধরে সরকার বিরোধী বিক্ষোভের মাধ্যমে ইসলামিক যুব নেতা হিসাবে পরিচিতি পান তিনি। পরবর্তীতে আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের হাত ধরে রাজনৈতিক উত্থান ঘটে। ১৯৮২ সালে মাহাথির ক্ষমতাসীন জোট ইউনাইটেড মালয় ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনে যোগদানের জন্য আনোয়ারকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।

১৯৯১ সালে অর্থমন্ত্রী এবং ১৯৯৩ সালে উপ-প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন আনোয়ার। ওই সময় বোঝা যাচ্ছিল আনোয়ারকেই রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী করতে যাচ্ছেন মাহাথির। তবে রাজনৈতিক কিছু বিষয়ে মাহাথিরের সঙ্গে আনোয়ারের মতবিরোধ হয়। এর জেরে মাহাথির তাকে একরকম ছুড়েই ফেলেন। ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বরে আনোয়ারকে অনুপযুক্ত ঘোষণা করে তাকে উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেন মাহাথির। এর কয়েক মাস পরেই ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সমকামিতার অভিযোগে আনোয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০০৪ সাল পর্যন্ত তাকে কারাগারে কাটাতে হয়। ২০০৮ সালের মার্চে জাতীয় নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয় পায় আনোয়ারের দল পিপলস জাস্টিস পার্টি। বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে পার্লামেন্টে ফেরেন আনোয়ার।

মজার ব্যাপার হচ্ছে এর তিন মাসের মাথায় পুনরায় আনোয়ারের বিরুদ্ধে অপ্রাকৃত কাম লালসা চরিতার্থের অভিযোগ আনা হয়। আনোয়ার অভিযোগ করেন, তাকে রাজনীতি থেকে আবারও নিষিদ্ধ করতে সরকারি দল এই ষড়যন্ত্র করছে। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের আমলে পুনরায় কারাগারে ঢুকানো হয় আনোয়ারকে।

যার হাত ধরে উত্থান ও পতন সেই মাহাথির ২০১৮ সালে পুনরায় আনোয়ারের হাত ধরেন। প্রধানমন্ত্রী নাজিবের ওপর ব্যক্তিগতভাবে ক্ষুব্ধ মাহাথির নিজের দল ছেড়ে আনোয়ারকে নিয়ে নতুন জোট করেন। ওই সময় মাহাথির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, জিততে পারলে তিনি আনোয়ারের জন্য রাজক্ষমার ব্যবস্থা করবেন এবং প্রধানমন্ত্রীত্ত্বের পদ ছেড়ে দেবেন।

জাতীয় নির্বাচনে জয়ের পর আনোয়ারের জন্য রাজক্ষমার ব্যবস্থা করেছিলেন মাহাথির। কিন্তু সরকার গঠনের দুই বছরের মাথায় ফের আনোয়ারের সঙ্গ বেইমানি করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীত্ত্ব ছাড়তে নারাজ মাহাথির শেষ পর্যন্ত সরকার ভেঙে দেন। আনোয়ারের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন এবারও অধরা থেকে যায়।

গত সপ্তাহে মালয়েশিয়ার জাতীয় নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলই সরকার গঠনের জন্য একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে রাজাকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। বৃহস্পতিবার আনোয়ারকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন তিনি।