আন্তর্জাতিক

মোদিকে নিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে কী আছে

গুজরাট দাঙ্গায় ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা বিবিসির এক তথ্যচিত্র নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করছে দিল্লি প্রশাসন। মোদি সরকার এই তথ্যচিত্রকে ‘অপপ্রচার’ অ্যাখ্যা দিয়ে সেটিকে খারিজ করে দিয়েছে।

অন্তত দুই হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া ২০০২ সালের ওই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন মোদি। দাঙ্গায় মোদির ভূমিকা নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন ছিল। কিন্তু ২০১২ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নিয়োগ করা একটি তদন্ত কমিটির রিপোর্টে গুজরাট দাঙ্গায় নরেন্দ্র মোদির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ খারিজ করে দেওয়া হয়। 

গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে গত ১৭ জানুয়ারি ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’ শিরোনামের প্রতিবেদনটির প্রথম পর্ব প্রচার করে বিবিসি। এতে বলা হয়েছে, দাঙ্গার পরপরই ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর তদন্তে নেমেছিল। বিবিসির তথ্যচিত্রে সেই প্রতিবেদনগুলোর সারাংশ প্রকাশ করা হয়েছে।

২০০২ সালে গুজরাটের দাঙ্গাকে ব্যবহার করে নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে কীভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তথ্যচিত্রে সেই বিষয়টিকে হাজির করা হয়েছে। বিবিসির দাবি, এই দাঙ্গা মোদিকে প্রধানমন্ত্রী হতে সাহায্য করেছে।

এতে বলা হয়েছে, ‘সহিংসতার পরিকল্পনা করা হয়েছিল সম্ভবত কয়েক মাস আগে থেকে এবং এটি ছিল রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। লক্ষ্য ছিল হিন্দু এলাকা থেকে মুসলমানদের নির্মূল করা। রাজ্য সরকারের সুরক্ষায় ভিএইচপির (হিন্দু চরমপন্থী সংগঠন) এর নেতৃত্বে। মোদি মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে মিলন অসম্ভব।’

প্রতিবেদনে তারপর বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে, ‘তাদের (হিন্দু দাঙ্গাকারীদের) পদ্ধতিগত সহিংস প্রচারে জাতিগত নির্মূলের সব বৈশিষ্ট্য রয়েছে।  তদুপরি: ভিএইচপি (বিশ্ব হিন্দু পরিষদ) রাজ্য সরকারের তৈরি করা দায়মুক্তির পরিবেশ ছাড়া এতটা ক্ষতি করতে পারত না।’

তথ্যচিত্রে গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে যুক্তরাজ্যের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাক স্ট্র-এর একটি গোপন প্রতিবেদন হাজির করা হয়েছে। স্ট্র জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের দীর্ঘদিনের গভীর সম্পর্কের কারণে তিনি উদ্বিগ্ন ছিলেন। সেই কারণে তিনি প্রতিবেদনটি তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে স্ট্র জানিয়েছেন। স্ট্র বলেন, ‘আমরা একটি দল গঠন করেছিলাম, যে দলটি গুজরাটে যাবে এবং দাঙ্গার তদন্ত স্বাধীনভাবে করবে। তারা একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল।’

এই প্রতিবেদনের সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছেছে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ‘নরেন্দ্র মোদি সরাসরি দায়ী।’

গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে যখন যুক্তরাজ্যের তদন্ত চলছিল প্রায় ওই সময়েই ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি তদন্ত শুরু করেছিল। 

বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ‘তদন্তে পাওয়া গেছে যে মন্ত্রীরা (গুজরাট সরকারের) সহিংসতায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিল এবং সিনিয়র পুলিশ অফিসারদের দাঙ্গায় হস্তক্ষেপ না করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। নির্ভরযোগ্য সূত্র আমাদের জানিয়েছে যে, মোদি ২৭ ফেব্রুয়ারি (২০০২ সালের) সিনিয়র পুলিশ অফিসারদের সাথে দেখা করেছিলেন এবং তাদের দাঙ্গায় হস্তক্ষেপ না করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।’

গুজরাট দাঙ্গর সময় জ্যাক স্ট্র ছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনিই তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন। বিবিসির প্রতিবেদনে তিনি ভাষ্যকারের ভূমিকায় ছিলেন।

তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘এটি খুবই মর্মান্তিক ছিল। এগুলো খুবই গুরুতর অভিযোগ ছিল যে, মুখ্যমন্ত্রী মোদি পুলিশকে ফিরিয়ে আনতে এবং হিন্দু উগ্রপন্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে বেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। পুলিশকে তাদের কাজ করতে বাধা দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার এটি ভয়াবহ উদাহরণ ছিল, যাদের দায়িত্ব ছিল হিন্দু ওমুসলমান উভয় সম্প্রদায়কে রক্ষা করা।’