আন্তর্জাতিক

এক সপ্তাহে যেভাবে ৫১ বিলিয়ন ডলার হারালেন আদানি

ফোর্বসের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় তিন নম্বরে ছিলেন গৌতম আদানি। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবেও তিনি পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংস্থা গত সপ্তাহে আদানি প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্নীতি প্রকাশ করে দেয়। ওই প্রতিবেদনের জেরে এক সপ্তাহে আদানি ৫১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ খুইয়েছেন। বৃহস্পতিবার মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস এক সপ্তাহে আদানির পতনের একটি বিবরণ প্রকাশ করেছে।

২৪ জানুয়ারি:  হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ আদানি গ্রুপের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলির বিরুদ্ধে একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছে, আদানি গ্রুপ বহু বছর ধরে স্টক ম্যানিপুলেশন (শেয়ারে কারচুপি) এবং অ্যাকাউন্টিং জালিয়াতির সাথে জড়িত রয়েছে। এই গ্রুপটি ট্যাক্স হেভেনে কোম্পানি স্থাপনের সুবিধার অযাচিত সুবিধা নিয়েছে। এসব সুবিধার কারণে গত তিন বছরে আদানির সম্পদ বিপুল পরিমাণে বেড়েছে এবং তার প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের দাম আকাশচুম্বি হয়েছে।

২৫ জানুয়ারি: আদানি গ্রুপের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা জুগেসিন্দর সিং একটি ভিডিও বার্তায় অভিযোগগুলো খারিজ করে দেন। তবে এরই মধ্যে গৌতম আদানির সম্পদের পরিমাণ ১২৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন থেকে কমে ১২০ বিলিয়নে নেমে আসে। ভারতীয় শেয়ারবাজারে আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের দাম কমতে শুরু করে।

২৬ জানুয়ারি: আদানি গ্রুপের প্রধান আইন কর্মকর্তা যতীন জলন্ধওয়ালা একটি বিবৃতি জানান ‘মার্কিন ও ভারতীয় আইনে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ও ক্ষতিপূরণমূলক ব্যবস্থা’ গ্রহণের জন্য  ‘প্রাসঙ্গিক বিধানগুলো মূল্যায়ন করা হয়েছে।’ প্রজাতন্ত্র দিবসের জন্য ভারতীয় শেয়ার বাজারগুলো বন্ধ থাকায় এদিন শেয়ার মূল্যে কোনও পরিবর্তন দেখা যায়নি।

২৭ জানুয়ারি: আদানি গ্রুপের তালিকাভুক্ত স্টক বিক্রি বন্ধের ফলে গ্রুপটির প্রতিষ্ঠাতার সম্পদের মোট মূল্য ৯৮ দশমিক ১ বিলিয়নে নেমে আসে। এর ফলে গৌতম আদানি বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ ধনী ব্যক্তির তালিকা থেকে সরে যান।

২৯ জানুয়ারি: আদানি গ্রুপ হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ৪১৩ পৃষ্ঠার জবাব প্রকাশ করে। হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদনকে ‘ভারত, ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা, অখণ্ডতা ও গুণমান এবং ভারতের উন্নয়ণ এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার উপর ছককষা আক্রমণ’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। তার জবাবে, হিন্ডেনবার্গ আদানি গ্রুপকে ‘পরিকল্পিতভাবে জাতিকে লুট করার সময়’ ভারতীয় পতাকায় নিজেকে ঢেকে রাখার অভিযোগ করে।

৩০ জানুয়ারি:  আদানি গ্রুপের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলি শেয়ারের দামের পতন ঘটেই চলছে। আদানির সম্পদের মূল্য আরও ৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার কমে ৮৮ দশমিক ২ বিলিয়নে গিয়ে ঠেকেছে।

৩১ জানুয়ারি: আদানি গ্রুপ ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের ফলো-অন শেয়ার প্রস্তাব সম্পূর্ণ করে। এতে আদানির মোট সম্পদ সামান্য বেড়ে ৮৯ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে।

১ ফেব্রুয়ারি: আদানি গ্রুপের তালিকাভুক্ত সংস্থাগুলো এবং মূল প্রতিষ্ঠান আদানি এন্টারপ্রাইজেসের শেয়ার দর ২৮ দশমিক ২০ শতাংশ কমে যায়। এদিন আদানি আরেক ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানির কাছে এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির খেতাব হারান। ৭৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় ১৫ নম্বরে নেমে আসেন।

২ ফেব্রুয়ারি: হিন্ডেনবার্গের অভিযোগের পর প্রথম প্রকাশ্যে আসেন গৌতম আদানি। তিনি ফলো-অন পাবলিক অফার প্রত্যাহার করার কথা জানান। এর পরে আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ার দর ১০ শতাংশ কমে যায়। মাত্র এক দিনের ব্যবধানে ১০ বিলিয়ন ডলার হারান আদানি। ৫৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের  সম্পদ নিয়ে তিনি নেমে আসেন সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকার ১৬তম স্থানে।