ইসরায়েলের অত্যাধুনিক নজরদারি প্রযুক্তি এড়াতে কোডেড বার্তা, ল্যান্ডলাইন ফোন, পেজার-এর মতো কিছু নিম্ন-প্রযুক্তি কৌশল ব্যবহার করছে ইরান সমর্থিত লেবাননের হিজবুল্লাহ। সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে।
হিজবুল্লাহর নেতা সাইয়েদ হাসান নাসরাল্লাহ একে ইসরায়েলকে ‘অন্ধ’ করার একটি কৌশল হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
গাজা উপত্যকায় অক্টোবরে ইসরায়েল হামলা শুরুর করে। এরপরে হামাসের মিত্র হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের ওপর হামলা চালায়। ইসরায়েলও হামাসের বিভিন্ন অবস্থানে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে। এই হামলা-পাল্টা হামলা লেবাননের দক্ষিণ সীমান্তে চললেও এটি আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। হিজবুল্লাহর হামলায় ইসরায়েলের ২১ সেনা ও ১০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় হিজবুল্লাহর ৩০০ যোদ্ধা নিহত হয়েছে।
ইসরায়েলের এসব হামলা ইলেকট্রনিক নজরদারি প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, হিজবুল্লাহ যে এলাকায় কাজ করে সেখানে তাদের নিরাপত্তা ক্যামেরা এবং রিমোট সেন্সিং সিস্টেম রয়েছে। তারা প্রতিপক্ষের উপর গোয়েন্দাগিরি করার জন্য সীমান্তে নিয়মিত নজরদারি ড্রোন পাঠায়। ইসরায়েলের ইলেকট্রনিক ডিভাইসে নজরদারি, সেল ফোন এবং কম্পিউটার হ্যাকিং বিশ্বের সবচেয়ে পরিশীলিত হিসাবে বিবেচিত হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হিজবুল্লাহর সূত্র জানিয়েছে, হিজবুল্লাহ তার ক্ষতি থেকে শিখেছে এবং তারা নতুন কৌশল যুক্ত করেছে। সেলফোন দিয়ে ব্যবহারকারীর অবস্থান ট্র্যাক করা যায়। হিজবুল্লাহ তাই সেলফোন যুদ্ধক্ষেত্র থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যোগাযোগের জন্য তারা ল্যান্ডফোন, পেজার এবং কুরিয়াসগ ব্যক্তিগতভাবে মৌখিক বার্তা ব্যবহার করছে।
হিজবুল্লাহ ২০০০ সালের গোড়ার দিকে ব্যক্তিগত, ফিক্সড লাইন টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে আসছে। এগুলি প্রায় প্রতিদিন আপডেট করা হয় এবং কুরিয়ারের মাধ্যমে ইউনিটগুলোতে বিতরণ করা হয়, সূত্রটি বলেছে।
হিজবুল্লাহর ঘনিষ্ঠ লেবানিজ বিশ্লেষক কাসেম কাসির বলেছেন, ‘আমরা একটি যুদ্ধের মুখোমুখি হচ্ছি যেখানে তথ্য ও প্রযুক্তি অপরিহার্য অংশ। কিন্তু যখন আপনি কিছু প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মুখোমুখি হন, তখন আপনাকে পুরানো পদ্ধতিতে ফিরে যেতে হবে - ফোন, ব্যক্তিগত যোগাযোগ...যে পদ্ধতিই আপনাকে প্রযুক্তিকে এড়িয়ে যেতে দেয়।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, উচ্চ প্রযুক্তির গুপ্তচরবৃত্তির বিরুদ্ধে কিছু স্বল্প প্রযুক্তির পাল্টা ব্যবস্থা বেশ কার্যকর হতে পারে। আল-কায়েদার প্রয়াত নেতা ওসামা বিন লাদেনের প্রায় এক দশক ধরে গ্রেপ্তার এড়ানোর একটি উপায় ছিল ইন্টারনেট এবং ফোন পরিষেবা থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা এবং এসবের পরিবর্তে কুরিয়ার ব্যবহার করে।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইন ওয়াশিংটনের এমিলি হার্ডিং বলেছেন, ‘ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) ব্যবহার করার সহজ কাজ বা আরও ভাল হচ্ছে সেল ফোন ব্যবহার না করা। এটি টার্গেট খুঁজে পাওয়া এবং লক্ষ্যস্থির করা অনেক কঠিন করে তুলতে পারে। অবশ্য এই পাল্টা পদক্ষেপগুলো হিজবুল্লাহর নেতৃত্বকে তাদের সেনাদের সাথে দ্রুত যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনেক কম কার্যকর করে তোলে।’