স্যুটকেসে খণ্ডিত দেহ, এক নারীর মরদেহ। হত্যার পর কেটে টুকরো টুকরো করে স্যুটকেসে ভরা হয়েছে। সেই অবস্থায় স্যুটকেসটি নদীতে ভাসিয়ে দিতে নিয়ে যায় দুজন নারী। তবে তাদের হাতেনাতে ধরে ফেলে স্থানীয়রা। পরে বেরিয়ে আসে হাড়হিম করা ঘটনার আদ্যোপান্ত।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৭টার দিকে ট্যাক্সিতে করে গঙ্গার ঘাটে আসেন মাস্ক পরা দুই নারী। ভারী ব্যাগ টেনে ঘাটে আনতে দেখে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। তারা দাবি করেন, ব্যাগে পোষ্য কুকুরের মরদেহ রয়েছে। খবর দেয়া হয় পুলিশকে। পুলিশ এসে ট্রলি ব্যাগ খুলতেই ভিতরে মেলে পচাগলা রক্তাক্ত দেহ।
এ ঘটনায় পুলিশ ওই দুই নারীকে আটক করেছে। আটককৃতরা হলেন, ফাল্গুনি ঘোষ ও আরতি ঘোষ। সম্পর্কে তারা মা ও মেয়ে। ট্রলি ব্যাগে করে যার দেহ ফেলা হচ্ছিল তিনি সম্পর্কে ফাল্গুনির পিসি শাশুড়ি। নাম সুমিতা ঘোষ।
মা ও মেয়ের পরিকল্পনা ছিল, সকালের দিকে সবার চোখ এড়িয়ে ওই ব্যাগ গঙ্গায় ভাসিয়ে দেবেন। কিন্তু কুমোরটুলি ঘাট ভোর থেকেই জনবহুল থাকে। প্রাতঃভ্রমণকারীদের চোখে পড়ে যায় ওই মা এবং মেয়ে। তাদের হাবেভাবে সন্দেহ হয় ঘাটে থাকা অন্যান্যদের। ট্রলি খুলে ভেতরে কী আছে তা দেখানোর কথা বললে বেঁকে বসেন ফাল্গুনি এবং আরতি। আর এতেই সাধারণ মানুষের সন্দেহ বাড়ে।
উত্তর বন্দর থানার পুলিশ ওই দেহের টুকরাগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছে। ফাল্গুনি এবং আরতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরো তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ।
কুমোরটুলি ঘাটে উপস্থিত প্রাতঃভ্রমণকারীদের দাবি, এই দুই নারীর সঙ্গে এক ব্যক্তিও ছিলেন। তিনি পালিয়ে গেছেন। এই দাবির সত্যতাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ জানায়, ঝগড়ার মুহূর্তে ইট দিয়ে থেঁতলে পিসি শাশুড়িকে খুন করে ফাল্গুনি। এরপর মা আরতি ঘোষের সহায়তায় মৃত শাশুড়ির গোড়ালি কাটা হয় বঁটি দিয়ে। এরপর সেই টুকরো করা দেহ ট্রলিতে ভরে গঙ্গার ঘাটের উদ্দেশে রওনা দেয় মা ও মেয়ে।
ঘটনার তদন্তে নেমে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য ও পুলিশ। জানা গেছে, ফাল্গুনির সঙ্গে দীর্ঘদিন বনিবনা ছিল না তার স্বামীর। তার শ্বশুরবাড়ি পূর্ব বর্ধমানের নাদনঘাটে। গত কয়েক বছর ধরে মধ্যমগ্রাম পৌরসভার বীরেশ পল্লিতে বাড়ি ভাড়া নিয়ে আলাদা থাকছিলেন ফাল্গুনি। গত ১১ ফেব্রুয়ারি মেয়ের কাছে এসেছিল মা আরতি।
পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ফাল্গুনির বাড়িতে গিয়েছিলেন তার পিসি শাশুড়ি সুস্মিতা। কেন তিনি সেখানে গিয়েছিলেন, তা স্পষ্ট নয়। তবে তদন্তকারীদের অনুমান, ফাল্গুনিই হয়তো ফোন করে তাকে ডেকেছিল।
সোমবার বিকেল ৪টার দিকে শাশুড়ি সুস্মিতার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন ফাল্গুনি। সেসময় দেওয়ালে ধাক্কা লেগে অজ্ঞান হয়ে যান সুস্মিতা। পরে তার জ্ঞান ফেরার পরে ফের ফাল্গুনির সঙ্গে তার হাতাহাতি হয়। সেই সময়েই ইট দিয়ে শাশুড়ির ঘাড়ে এবং মুখে আঘাত করেন ফাল্গুনি। তাতে তার মৃত্যু হলে দেহটি ফেলে দেয়ার জন্য পরিকল্পনা করে মা-মেয়ে।
ফাল্গুনির প্রতিবেশীদের দাবি, অচেনা লোকজনের আনাগোনা ছিল ফাল্গুনির বাড়িতে। এই নিয়ে প্রতিবাদও করেছিলেন পাড়ার লোকজন। বাড়ি ভাড়ার চুক্তির মেয়াদ চলতি বছরের মার্চে শেষ হয়ে যাওয়ার পর সেখান থেকে চলে যাওয়ার কথা ছিল ফাল্গুনির।