মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা নিশ্চিতে নতুন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন। নতুন এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ‘গোল্ডেন ডোম’।
অত্যাধুনিক এই প্রতিরক্ষা প্রকল্পের প্রাথমিক খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ বিলিয়ন ডলার, আর মোট সম্ভাব্য ব্যয় হতে পারে প্রায় ১৭৫ বিলিয়ন ডলার।
বুধবার (২১ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার (২০ মে) হোয়াইট হাউজে দেওয়া বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, “নির্বাচনী প্রচারে আমি আমেরিকান জনগণকে একটি সর্বাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। আজ আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমরা ‘গোল্ডেন ডোম’ নামের এই সিস্টেমের নকশা নির্ধারণ করে ফেলেছি।”
ট্রাম্পের ভাষ্য অনুযায়ী, একবার পুরোপুরি নির্মাণ শেষ হলে ‘গোল্ডেন ডোম’ বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে, এমনকি মহাকাশ থেকেও ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে পারবে।
তিনি বলেন, “এটি আমাদের দেশের সাফল্য ও এমনকি অস্তিত্বের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
কত দিনের মধ্যে নতুন এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণ হবে তাও জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প বলেন, “আমার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই গোল্ডেন ডোম কার্যকর হওয়া উচিত।”
ট্রাম্প আরো জানান, মার্কিন মহাকাশ বাহিনীর জেনারেল মাইকেল গুয়েটলিন প্রকল্পটির তত্ত্বাবধান করবেন। জেনারেল গুয়েটলিন বর্তমানে স্পেস ফোর্সে মহাকাশ অভিযানের ভাইস চিফ।
চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার সাত দিন পরেই ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রতিরক্ষা বিভাগকে এমন একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পরিকল্পনা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যা পরবর্তী প্রজন্মের ব্যালেস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রসহ বিমান হুমকি মোকাবিলায় সক্ষম হবে।
মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে ট্রাম্প বলেন, “নতুন গোল্ডেন ডোম প্রতিরক্ষা সিস্টেম মহাকাশ-ভিত্তিক সেন্সর ও ইন্টারসেপ্টর সহ স্থল, সমুদ্র এবং মহাকাশ জুড়ে ‘পরবর্তী প্রজন্মের’ প্রযুক্তি স্থাপন করবে।”
ট্রাম্প আরো বলেন, “এই সিস্টেম বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে নিক্ষেপ করা বা মহাকাশ থেকে নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকেও প্রতিহত করতে সক্ষম।”
ট্রাম্প জানান, কানাডাও এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অংশ হতে আগ্রহ দেখিয়েছে, কারণ ‘তাদেরও নিরাপত্তা দরকার।’
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন আকাশ প্রতিরক্ষা সিস্টেমটি আংশিকভাবে ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’ থেকে অনুপ্রাণিত, যা দেশটি ২০১১ সাল থেকে রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ করতে ব্যবহার করে আসছে।
তবে, গোল্ডেন ডোমটি অনেক গুণ বড় হবে এবং বিস্তৃত পরিসরের হুমকি মোকাবিলা করার জন্য নির্মাণ করা হবে, যার মধ্যে রয়েছে শব্দের গতির চেয়ে দ্রুত গতিতে চলতে সক্ষম হাইপারসনিক অস্ত্র এবং ভগ্নাংশীয় অরবিটাল বোমাবর্ষণ ব্যবস্থা - যাকে ফোবও বলা হয় - যা মহাকাশ থেকে ওয়ারহেড সরবরাহ করতে পারে।
ট্রাম্প বলেন, “এগুলো সবই আকাশ থেকে ছোড়া হবে। সাফল্যের হার ১০০% এর খুব কাছাকাছি।”
ট্রাম্প জানান, এই প্রকল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে ২৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে, যার মোট ব্যয় সময়ের সাথে সাথে ১৭৫ বিলিয়ন ডলার হবে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেশনাল বাজেট অফিস (সিবিও) ধারণা করছে, ২০ বছরের এই প্রকল্পে কেবল মহাকাশভিত্তিক অংশগুলোতেই সরকার শেষ পর্যন্ত ৫৪২ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ব্যয় করতে পারে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে বলে আসছে, বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সিস্টেমগুলো রাশিয়া এবং চীনের নতুন প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবিলায় পর্যাপ্ত নয়।
ট্রাম্প মঙ্গলবার ওভাল অফিসে বলেন, “আসলে বর্তমানে আমাদের কোনো প্রতিরক্ষা সিস্টেম নেই। আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র ও নির্দিষ্ট ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষার কিছু ক্ষেত্র রয়েছে, কিন্তু কোনো সিস্টেম নেই... এরকম কিছু কখনো করা হয়নি।”
মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার সাম্প্রতিক একটি রিপোর্ট উল্লেখ করা হয়, চীন এবং রাশিয়া সক্রিয়ভাবে মার্কিন প্রতিরক্ষায় ‘ফাঁক কাজে লাগানোর জন্য’ ক্ষেপণাস্ত্র আধুনিক করছে।