আন্তর্জাতিক

‘চোখের সামনে আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু মারা গেল’

পরীক্ষা শেষ করে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে ক্লাসরুম থেকে বের হচ্ছিলেন ফারহান হাসান। আর ঠিক তখনই বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান তার স্কুলে বিধ্বস্ত হয়। এতে এখন পর্যন্ত ৩১ জন মারা গেছেন। 

‘জ্বলন্ত বিমানটি আমার চোখের সামনে ভবনে পড়লো’ বিবিসিকে বলেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফারহান হাসান।

সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই এফ-৭ জেট বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। এরপর বিমানটি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল ভবনে পড়ে। এ ঘটনায় বিমানটির পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামও মারা যান।

ফারহান বলেন, “আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু, যার সঙ্গে আমি একই হলে পরীক্ষা দিচ্ছিলাম—সে আমার চোখের সামনেই মারা গেল। আর অনেক অভিভাবক তখন ক্যাম্পাসের ভেতরে ছিলেন, কারণ স্কুলের বাচ্চারা ছুটির পর বের হচ্ছিল।” 

কলেজের এক শিক্ষক রেজাউল ইসলাম বিবিসিকে বলেন, তিনি চোখের সামনে বিমানটি ভবনে পড়তে দেখেছেন।

আরেক শিক্ষক মাসুদ তারিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “আমি বিস্ফোরণের শব্দ শুনি। পেছনে তাকিয়ে দেখি শুধু আগুন আর ধোঁয়া... এখানে অনেক অভিভাবক ও শিশু ছিল।”

দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরও ঘনবসতিপূর্ণ ওই আবাসিক এলাকায় মানুষ জড়ো হতে থাকেন। অনেকে আশপাশের ভবনের ছাদে উঠে ঘটনাস্থল দেখার চেষ্টা করেন।

লোকজন চারদিকে ছুটোছুটি করতে থাকেন, আর অ্যাম্বুলেন্স ও স্বেচ্ছাসেবকরা হতাহতদের স্কুল ভবন থেকে বের করে আনার চেষ্টা করেন। কমপক্ষে ৩০টি অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে আহতদের স্থানান্তরে কাজ করে।

জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের এক চিকিৎসক জানান, দুর্ঘটনায় দগ্ধ অন্তত ৫০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যার মধ্যে অধিকাংশই শিশু।

ভুক্তভোগীদের স্বজনরা হাসপাতালে ভিড় করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন শাহ আলম, তিনি অষ্টম শ্রেণির ছাত্র তানভীর আহমেদের চাচা। তানভীর দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।

শাহ আলম বলেন, “আমার আদরের ভাতিজা এখন মর্গে পড়ে আছে।” এ সময় তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তানভীরের বাবা কোনো কথা বলতে পারছিলেন না।

দগ্ধদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু, যাদের বয়স ৯ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে।

শুধু জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটেই নয়, ঢাকার আরো বেশ কয়েকটি হাসপাতাল দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা দিচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এ দুর্ঘটনার ভয়াবহতায় সাধারণ মানুষ রক্তদান করতে এগিয়ে এসেছেন। আহতদের দেখতে এসেছেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দলের রাজনীতিবিদরাও। 

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করা হয়। দেশের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। 

সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং সবধরনের সহায়তা নিশ্চিত করা হবে।”

সরকারের বিবৃতিতে জানানো হয়, এরইমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।