আন্তর্জাতিক

শাওলিন মন্দিরের প্রধান সন্ন্যাসীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু

চীনের বিশ্ববিখ্যাত শাওলিন মন্দিরের প্রধান সন্ন্যাসী শি ইয়োংজিনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, একাধিক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক এবং অবৈধ সন্তানের অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে। দেশটির একাধিক তদন্ত সংস্থা যৌথভাবে এই তদন্ত পরিচালনা করছে। 

সোমবার (২৮) জুলাই শাওলিন মন্দির কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।  

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের হেনান প্রদেশের একটি পর্বতমালায় অবস্থিত শাওলিন মন্দিরটি দেড় হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী একটি মন্দির। প্রতি বছর দেশ-বিদেশ থেকে হাজার হাজার শিষ্য এখানে আসেন শাওলিন কুংফু ও বৌদ্ধ ধর্মচর্চার জন্য।

১৯৯৯ সাল থেকে শাওলিন মন্দিরের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ইয়োংজিন মন্দিরটিকে একটি বৈশ্বিক ব্র্যান্ডে পরিণত করেছেন। যার ফলে তিনি ‘সিইও সন্ন্যাসী’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন। তার আমলে মন্দির চীনের বাইরেও স্কুল খুলেছে এবং শাওলিন কুংফু প্রদর্শনের জন্য ঘুরে বেড়ানো সন্ন্যাসীদের একটি দল গঠন করেছে।

চীনের বৌদ্ধ সমিতি সোমবার জানিয়েছে, তদন্তের সময় তার অর্ডিনেশন সার্টিফিকেট বাতিল করা হয়েছে। অর্ডিনেশন সার্টিফিকেট হলো সন্ন্যাসী সম্প্রদায়ে কারো গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ।

বৌদ্ধ সমিতি তাদের বিবৃতিতে বলেছে, “ইয়োংজিনের কর্মকাণ্ড খুবই খারাপ, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সুনাম ও ভিক্ষুদের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।”

সোমবার সকালে চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে ইয়োংজিনের বিরুদ্ধে তদন্ত সংক্রান্ত খবরটি ছিল সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। উইবোতে নিয়মিত বৌদ্ধ শিক্ষার বার্তা পোস্ট করতেন ইয়োংজিন। তার অ্যাকাউন্টের অনুসারীর সংখ্যা ৮ লাখ ৮০ হাজারেও বেশি।   

ইয়োংজিন এর আগে ২০১৫ সালেও নারীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন এবং মন্দিরের তহবিল আত্মসাতের অভিযোগে তদন্তের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিনি একটি ভক্সওয়াগেন এসইউভি ও সোনার সুতো দিয়ে তৈরি একটি পোশাকসহ কোম্পানি এবং স্থানীয় সরকারের কাছ দামি বিভিন্ন উপহারও গ্রহণ করেছিলেন বলে অভিযোগ ছিল।

সেই সময়ে তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও বেশ কয়েকটি অবৈধ সন্তানের পিতা হওয়ার অভিযোগে তদন্ত করা হয়েছিল, কিন্তু পরে তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।

২০১৫ সালে প্রায় ৩০ কোটি ডলার ব্যয়ে একটি মন্দির কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনার জন্য শাওলিন মন্দির কর্তৃপক্ষও সমালোচনার মুখে পড়েছিল, প্রকল্পটিতে একটি হোটেল, একটি কুংফু স্কুল ও একটি গলফ কোর্স ছিল।

‘শাওলিন’ নামটি বিগত কয়েক দশকে বিশ্বজুড়ে সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অর্জন করেছে। ১৯৮২ সালে জেট লি অভিনীত একটি চলচ্চিত্রের নাম ছিল ‘শাওলিন’। মার্কিন হিপ-হপ ব্যান্ড উ-ট্যাং-ক্ল্যাং-এর গানে এবং জনপ্রিয় ভিডিও গেম ‘মর্টাল কমব্যাট’-এর স্পিনঅফে শাওলিন মন্দিরের প্রভাব স্পষ্টভাবে দেখা যায়।