রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনায় বুধবার (৬ আগস্ট) ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে না পৌঁছানোয় ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ পাল্টা আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় পণ্যের ওপর মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে।
ভারত ছাড়াও রাশিয়ান তেলের অন্যতম বড় ক্রেতা চীন। কিন্তু ট্রাম্প চীন বা রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসায়ীক সম্পর্ক বজায় রাখা অন্যান্য দেশগুলোর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ ঘোষণা করেননি।
রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার জন্য কেবল ভারতের ওপর কেন শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, এ বিষয়ে বুধবার হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের কাছে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “মাত্র ৮ ঘণ্টা হয়েছে। দেখা যাক কী হয়। আপনি আরো অনেক কিছু দেখতে পাবেন...আপনি আরো অনেক সেকেন্ডারি নিষেধাজ্ঞা (রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক রাখা অন্যান্য দেশগুলোর ওপর শুল্ক আরোপ) দেখতে পাবেন।”
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের সঙ্গে কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভারত ওয়াশিংটনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হলেও, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর থেকে ভারতের সঙ্গে ওয়াশিংটনের বাণিজ্যিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।
অন্যদিকে, ভারতের চিরশত্রু পাকিস্তানের ওপর মাত্র ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। শুধু তাই নয়, ওয়াশিংটন সম্প্রতি ইসলামাবাদের সঙ্গে একটি তেল চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে। ওই চুক্তির প্রশংসা করে ট্রাম্প বলেছেন, হয়তো একসময় পাকিস্তান ভারতে তেল রপ্তানি করবে!
ভারত চিরশত্রু পাকিস্তান থেকে তেল কিনতে পারে এমন বিদ্রূপ নয়াদিল্লি ভালোভাবে নেয়নি। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনায় ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের উপর শুল্ক দ্বিগুণ করায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দ্বিমুখী নীতির অভিযোগ করেছে নয়াদিল্লি। ভারতের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র নিজেই রাশিয়ান ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লোরাইড, প্যালাডিয়াম ও সার কিনে থাকে।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্প আরোপের সিদ্ধান্তকে ‘অন্যায়, অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য’ বলে আখ্যা দিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা জানিয়েছে, ভারতের জ্বালানি আমদানি একান্তভাবে বাজার বাস্তবতা ও ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি নিরাপত্তা বিবেচনায় করা হয়। সেই বাস্তবতা অগ্রাহ্য করে একতরফা শুল্ক আরোপ করায় ভারতের গভীর হতাশা প্রকাশ করে মন্ত্রণালয় বলেছে, “জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে ভারত।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো ওয়াশিংটন এবং নয়াদিল্লির মধ্যে দুই দশকের কূটনৈতিক সম্পর্কের অগ্রগতিকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ উভয় পক্ষকে তাদের অবস্থান কঠোর করতে বাধ্য করার কারণে সহযোগিতার অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোকে লাইনচ্যুত করতে পারে।